ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ২০১৩ সালের রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা একচেটিয়া জয় পেয়েছিলেন। তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের ভেতরে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী এবং নিজ নিজ সিটি করপোরেশনের সবশেষ মেয়র যারা ছিলেন তারা সবাই প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাদেরকে বিপুল ভোটে হারানো বিএনপির সেই মেয়রদের দুজন মারা গেছেন। বাকিদের কেউ দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে আছেন।
২০১৩ সালের ওই নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আওয়ামী লীগের খায়রুজ্জামান লিটনকে, খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি তালুকদার আব্দুল খালেককে, বরিশালে আহসান হাবিব কামাল আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণকে, সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে এবং গাজীপুরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান আওয়ামী লীগের আজমত উল্লাহ খানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এরমধ্যে গাজীপুরে প্রথমবারের মতো নির্বাচন হয়েছিল, যাতে জয় পেয়েছিলেন বিএনপি নেতা মান্নান।
বিএনপির সাবেক মেয়ররা কেমন আছেন?
২০১৩ সালের সেই নির্বাচনের পরে সিলেট ছাড়া অন্য কোথায়ও সুবিধা করতে পারেননি বিএনপির প্রার্থীরা। যদিও পরবর্তীতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনেই আর অংশ নেয়নি বিএনপি। সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৮ সালেও মেয়র হয়েছেন।
তবে আসছে মে ও জুনে হতে যাওয়া সিটি নির্বাচনে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নেওয়ার কথা বললেও দলের নেতাদের কেউ কেউ ভোটে যেতে আগ্রহী। নিজেদের মতো করে হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন কেউ কেউ। প্রয়োজনে স্বতন্ত্র লড়তেও প্রস্তুত আছেন কেউ কেউ।
বিজ্ঞাপন
যদিও শেষ পর্যন্ত সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। কারণ এখন পর্যন্ত তিনি প্রার্থিতার বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট করেননি।
এদিকে উল্লেখিত পাঁচ সিটিতে বিএনপি প্রার্থীদের জয়ের আগে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে দলের হয়ে এম মনজুর আলম বিজয়ী হয়েছিলেন। নির্বাচনে প্রায় ৯৫ হাজারেরও বেশি ভোটে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মেয়র এবিএম মহিউদ্দীনকে হারান মনজুর। পরের বছর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ দেওয়া হয় এম মনজুর আলমকে।
চট্টগ্রামের টানা ১৭ বছরের মেয়র, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন মনজুর।
পরে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ফের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে লড়েন। কিন্তু নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ এনে ঢাকায় বসে বিএনপি নেতারা ওই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে মনজুর আলম ক্ষুব্ধ হয়ে রাজনীতি থেকেই অবসরের ঘোষণা দেন। পরে অবশ্য গত সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন নেয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপি তাকে দল থেকে বাদ দেয়।
অন্যদিকে গাজীপুরে অধ্যাপক মান্নান ২০১৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মামলায় রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ২০১৭ সালে জামিনে মুক্ত হন তিনি। মেয়র থাকাবস্থায় তিনবার বরখাস্ত হওয়া মান্নান নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মারা যান।
রাজশাহী বিএনপি মানেই মিজানুর রহমান মিনু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও শফিকুল হক মিলন। কিন্তু অনেকদিন ধরে তাদের বলয়ের বাইরের লোকদের জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটিতে জায়গা দেওয়ায় অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তবে কিছুদিন ধরে তাদের আবার মাঠে-ময়দানে দেখা মিলছে।
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ছিলেন নগর বিএনপি ও যুবদলের সভাপতি। সাবেক সিটি মেয়র। বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। যদিও তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
অন্যদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মিনু, বুলবুলদের বাদ দিয়ে রাজনীতিতে অনেকটা অপরিচিতদের নেতৃত্বে আনা নিয়ে তাদের বলয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ ছিল। যা এখনো বিদ্যমান বলে জানা গেছে।
আর বরিশালের সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল মারা গেছেন গতবছরের ৩১ জুলাই। বরিশালেই তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
আহসান হাবিব বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি অধুনা লুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান ও প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন হলে তিনি প্রথম ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণকে হারিয়ে মেয়র হন আহসান হাবিব। তার মৃত্যুর পর ছেলে এখন রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে বিএনপির খুলনার সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও মনিকে বাদ দিয়ে মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্র। গত বছর ১ মার্চ মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলে সেখানেও মঞ্জু ও মনিকে রাখা হয়নি। আসছে ভোট নিয়ে মনির প্রার্থী হওয়ার খুব একটা আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে।
বিইউ/জেএম

