শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা

নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সরকার বিরোধী ডান-বাম ঘরানার দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে ১১ জানুয়ারি বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ওইদিন সারাদেশে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এই কর্মসূচি উপলক্ষে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তবে এই গণঅবস্থান কর্মসূচির আগে গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন দলটির নেতার।


বিজ্ঞাপন


কর্মসূচি সফলের জন্য ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে বিভাগীয় টিম গঠন করেছে বিএনপি এবং ব্যাপক লোকসমাগমের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গণঅবস্থান থেকেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

BNPএদিকে বিএনপির ১০ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা নিয়ে জনমত গঠন করতে জেলায় জেলায় সফর করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ধারাবাহিক এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো আলাদাভাবে কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। কিন্তু হামলার মাধ্যমে চলমান আন্দোলন থামিয়ে রাখা যাবে না। কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করার পরও বিএনপি ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এবারও গণঅবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল হবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি যতটুকু গ্রহণ করা প্রয়োজন ততটাই নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আমাদের গণঅবস্থান কর্মসূচি অতীতের কর্মসূচির মতো সফল হবে। এছাড়া পুলিশ গণগ্রেফতার, ভুয়া মামলায় গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই মামলা-মোকদ্দমা বা গ্রেফতার করে থামানো বা দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ ৭-৮ ডিসেম্বর আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করার পরও বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ কর্মসূচিগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এবারও গণঅবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল হবে বলে আশাবাদী।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: ‘কঠিন চ্যালেঞ্জে’র মুখে পড়বে বিএনপি

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির জন্য ব্যাপক প্রস্তুত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও আমরা আন্দোলন কর্মসূচি থেকে পিছপা হইনি। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ঢাকা মেইলকে বলেন, ঢাকায় গণঅবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্কে কেউ বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না। ৩০ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত শুধু ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির অন্তত ৫০ জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু দক্ষিণ নয়, ঢাকা উত্তর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার বন্ধ নেই, গ্রেফতার চলছেই।

>> আরও পড়ুন: মামলার ‘গ্যাঁড়াকলে’ জাপা!

তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির ৩৭৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যুবদলের রয়েছে ২৫০ জনের মতো, স্বেচ্ছাসেবক দলের রয়েছে, উত্তর বিএনপি রয়েছে তিনশর মত, উত্তর যুবদলের রয়েছে আড়াইশ’র মত। সব মিলে পাঁচ হাজারের মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলন সফলের লক্ষ্যে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দল ও সংগঠন জোট গঠন করে আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ ও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

১১ জানুয়ারি বিএনপির সাথে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে মাঠে থাকবে যারা-

৬ সাংগঠনিক বিভাগে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা গণঅবস্থানে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকা বিভাগের গণঅবস্থানে নেতৃত্ব দেবেন এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ। ঢাকা মেইলকে এই তথ্য জানিয়েছেন এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১টা থেকে চার ঘণ্টা গণঅবস্থান করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ঢাকা মেইলকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

১১টি দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ পুরানা পল্টন প্রীতম টাওয়ারের সম্মুখে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলে ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

>> আরও পড়ুন: আন্দোলনের ‘রসদ’ দেখছে বিএনপি

১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি হবে বলে জানিয়েছেন জোটের নেতা ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

এই কর্মসূচিতে শরিক থাকবে গণফোরামের একাংশ। মতিঝিল নটরডেম কলেজের উল্টো দিকের রাস্তায় গণফোরাম গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী।

এছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিতে ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’। রোববার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে আসে এই জোট।

যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ আরও কয়েকটি সংগঠন।

১০ বিভাগে থাকবেন বিএনপির যেসব নেতা

গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা বিভাগের দলনেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চট্টগ্রাম বিভাগের দলনেতা মো. শাহজাহান, ময়মনসিংহ বিভাগের দলনেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিভাগের দলনেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খুলনা বিভাগের দলনেতা শামসুজ্জামান দুদু, রাজশাহী বিভাগের দলনেতা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, ফরিদপুর বিভাগের দলনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সিলেট বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশাল বিভাগের দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং রংপুর বিভাগের দলনেতা দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুন-অর-রশিদ।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কর্মসূচি পালনে সমন্বয় করবেন সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। সদস্য হিসেবে থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধিবাসী জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা, সাবেক এমপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব, জেলা/মহানগর বিএনপির সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব/প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক।

এমই/জেএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর