শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

হঠাৎ নেতাদের বাড়িতে হামলা: কী ভাবছে বিএনপি?

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২২, ১১:২৬ এএম

শেয়ার করুন:

হঠাৎ নেতাদের বাড়িতে হামলা: কী ভাবছে বিএনপি?

দীর্ঘদিন ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচি নিয়ে পথচলা বিএনপি এবার ঘোষণা দিয়ে একসঙ্গে সারাদেশে মাঠে নেমেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অভয় পেয়ে শক্তভাবে মাঠে থাকার চেষ্টা করলেও বেগ পেতে হচ্ছে দলটির নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার পাশাপাশি সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এক সপ্তাহের মধ্যে ১৫ জায়গায় হামলার মুখে পড়েছে বিএনপি। এরমধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে নেতাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা।

ফলে নির্বাচনের বছর দেড়েক সময় বাকি থাকাবস্থায় এমন বৈরী পরিবেশে মাঠে কতটা টিকে থাকতে পারবে বিএনপি তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির ভাষ্য, আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে সরকার তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতির আগে মাঠ না ছাড়ার কথাও বলছেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকার খুব অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে আমাদের ধারণা। যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কাজ করে তাহলে প্রতিবাদ এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আর যদি গণতান্ত্রিক অবস্থা কাজ না করে তাহলে এভাবেই হবে। এটাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের এক ধরণের ক্ষমতার হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে। তারা মনে করেছে গণআন্দোলনের তৈরি হতে পারে। সেজন্য এগুলো করছে। তবে এবার লাভ হবে না।’

hamla

প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট থেকে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় গুলিতে বিএনপির দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিএনপি। এতে অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। 

এরইমধ্যে কর্মসূচি ঘিরে হামলা, মামলার ফিরিস্তি তুলে ধরেছে বিএনপি। দলটির দাবি, চলমান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণেই দেশের মানুষ ভালো নেই’

কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে হামলা হয়েছে অর্ধশতাধিক জায়গায়। বিএনপির দাবি এই সময়ে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ৩০০ শতাধিক নেতাকর্মী। আর গ্রেফতার করা হয়েছে ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে।

এছাড়াও কর্মসূচিকে ঘিরে ২০টির বেশি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে দলটি।
আর একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এক রাতে যশোরে চার নেতার বাড়িতে হামলা
সবশেষ শুক্রবার রাতে যশোরে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলার সিনিয়র নেতাদের বাড়িতে রাতের আঁধারে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

প্রয়াত বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ছাড়াও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খাঁনের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে।

hamla

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীদের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। রাত দেড়টার পর থেকে শুরু হওয়া এই সন্ত্রাসী হামলা শেষ হয় ২টা ২০ মিনিটে। তারা একটি সিলভার কালারের মাইক্রোবাস, চার থেকে পাঁচটি প্রাইভেটকার এবং ১০টির অধিক মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। তারা প্রথমে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাসভবনে হামলা করে। গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টাও করে। পরে একে একে অন্য নেতাদের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে।

হামলার বিষয়ে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিএনপি যখন রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে, তখনই সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা জনতার আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এই ধরনের হামলা চালায়। কিন্তু এভাবে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসী হামলা করে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি করা যাবে না। যতদিন জনগণের অধিকার আদায় না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।’

এ বিষয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুজ্জামান ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় কোনো অভিযোগ তারা পাননি। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে থানা পুলিশ।

যেসব জায়গায় হামলার অভিযোগ
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে গত ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নোয়াখালীর সেনবাগ, ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, ময়মনসিংহের ফুলপুর ও ত্রিশাল, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি, খুলনার দৌলতপুর, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ও সখিপুর, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও কেন্দুয়া, চট্টগ্রামের সন্দীপ ও বাঁশখালী, ঝালকাঠি, যশোর, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, লক্ষীপুর, নরসিংদীর রায়পুরা, রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা ও যশোরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

hamla

এসব জায়গায় দলটির একাধিক শীর্ষ নেতারা বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, ফেনীর ফুলগাজীসহ ২০টির অধিক জায়গায় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ১৪৪ ধারার মুখে পড়তে হয়েছে বলেও দাবি করেছে বিএনপি।

যাদের বাড়ি-গাড়িতে হামলা
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে কর্মসূচি পালন করতে আসা যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িতে হামলা হয়েছে। যশোর ছাড়াও একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

এসব হামলার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করা হলেও তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জানা গেছে, চলতি মাসেই টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম এর গাড়িতে হামলা হয়েছে। লক্ষীপুরে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাড়িতে হামলায় তার ছেলে ও ভাই আহত হয়েছেন।

hamla

শুক্রবার চকরিয়া বিএনপির আহ্বায়ক শাহজাহান চৌধুরীর বাড়ি লক্ষ্য করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি গুলি ছুঁড়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এর আগে, গত ৪ জুন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় তার ব্যক্তিগত গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

আরও পড়ুন: জামায়াত আমিরের বিএনপি ‘ছাড়ার’ ঘোষণায় তোলপাড়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি স্বৈরাচারী সরকার, তারা সকল বিষয়ে নির্যাতনমূলক আচরণ করে আসছে। সম্প্রতি তাদের নেতাকর্মীদের আচরণ তারই বহিঃপ্রকাশ। তারা যে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায় এই হামলা মামলা সেটি প্রমাণ করে। বিরোধী দলের মতামত বা আন্দোলনকে কোনোভাবেই সহ্য করতে চায় না। এভাবে তো গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘যতই টার্গেট করে হামলা হোক বিএনপির নেতাকর্মীরা ভীত নয়। আমরা লড়াই করতে জানি। তাই এসব করে লাভ নেই।’

বিইউ/এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর