সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঢাকা-২ আসন: জনপ্রিয়তার লড়াইয়ে কামরুল-শাহীন

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২২, ০৮:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাকা-২ আসন: জনপ্রিয়তার লড়াইয়ে কামরুল-শাহীন

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এবং কেরানীগঞ্জ ও সাভারের একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ সংসদীয় আসন। জাতীয় সংসদের ১৭৫নং আসনটি এখন ক্ষমতাসীন দলের দখলে। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তবে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন চান কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমেদ। দুই নেতাই এখন এলাকায় নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।  

ঢাকা-২ আসনটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭নং ওয়ার্ড, হাজারীবাগ থানার সুন্দরগঞ্জ, সাভার উপজেলার আমিনবাজার ইউনিয়ন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন (হজরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, বাস্তা, কালিন্দী এবং আগানগর ইউনিয়ন) নিয়ে গঠিত।


বিজ্ঞাপন


১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। এর আগেও এই আসন ভাগাভাগি হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল আছেন তিনি।

বর্তমান সংসদের মেয়াদ আছে এক বছরের কিছু বেশি সময়। ইতোমধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা শুরু হয়েছে। ঢাকা-২ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন হচ্ছেন সেটা নিয়ে চলছে আলোচনা ও নানা সমীকরণ।  

কামরুল ইসলাম অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। সম্প্রতি তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয়দের অভিমত, সংসদীয় আসনের কামরাঙ্গীরচর অংশে বেশ জনপ্রিয় অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। সেখানে তার শক্ত হাত হিসেবে কাজ করেন ৫৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন। ৫৫ ও ৫৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাও তার অনুসারী। তবে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকার পরেও তেমন জনপ্রিয়তা গড়ে ওঠেনি কেরানীগঞ্জ এলাকায়৷

আরও পড়ুন: আখের গোছাতে চাওয়া’ নেতাদের ব্যাপারে কঠোর আ.লীগ

কেরানীগঞ্জ অংশে কামরুল ইসলামের চেয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে স্থানীয়দের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেশ ভালো। সেই সঙ্গে জনপ্রিয়তাও গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নও সংগ্রহ করেছিলেন শাহীন। তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের জ্যেষ্ঠ নেতা কামরুল ইসলামকে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একাংশের দাবি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন শাহীন। বর্তমান সংসদ সদস্যের চেয়েও শাহীন আহমেদ বেশি জনপ্রিয় বলে দাবি তাদের।

আবার কামরাঙ্গীর চরের ৫৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ হোসেন মনে করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বর্তমান সংসদ সদস্যের পর্যায়েরই না।

মোহাম্মদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, 'আমাদের তিনবারের এমপি (কামরুল ইসলাম) তিনি। কামরাঙ্গীর চরে শতভাগ শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান হচ্ছে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের। একজন নেতার যত গুণ আছে, তা তার মধ্যে আছে এবং আমরা তা ভোগ করছি।'

কেরানীগঞ্জ ও সাভার অংশে কামরুল ইসলামের জনপ্রিয়তা কেমন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি তো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী দেখি না। অনেকে ভাবে। এই পর্যন্ত তিনবার নির্বাচন করছে, কিন্তু কেউ তার সামনে টিকেনি।'

উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীন আহমেদ কামরুল ইসলামের পর্যায়েরই না বলে দাবি করেন কাউন্সিলর হোসেন। বলেন, 'উনি ( শাহীন আহমেদ) তো আমাদের লেভেলের। উনি ঢাকা-২ এর কিছু না। ঢাকা-৩ এর একটি থানার সভাপতি। আমাদের থানায়ও তো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আছে। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাহেবের লেভেলের উনি না।'

কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, 'জনসমর্থনের কথা বলতে গেলে, কামরাঙ্গীরচরে কামরুল ইসলাম সাহেবের বেশি। কেরানীগঞ্জ আর সাভারের যে অংশ ঢাকা-২ আসনের সঙ্গে, সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের বেশি। শাহীন অনেক আগে থেকেই এখানে রাজনীতি করেন। দুঃসময়ে মানুষের পাশে ছিলেন, এখনও আছেন। তাই তার জনসমর্থন বেশি। আর কামরুল ভাই তো কেরানীগঞ্জে কখনও রাজনীতি করেননি।'

আরও পড়ুন: কাউন্সিলের আগে আ.লীগের শূন্য চার পদ পূরণ হবে কি?

এছাড়া কেরানীগঞ্জ ও সাভার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার, কামরাঙ্গীর চর-কেরানীগঞ্জ ও সাভারের ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের মতেও, কামরাঙ্গীর চরের বাইরে ঢাকা-২ আসনের পুরোটাজুড়েই শাহীন আহমেদের সমর্থন রয়েছে। তবে চরে যারা শাহীন সমর্থিত তারা অনেকটা কোণঠাসা।

এদিকে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, বাস্তায় জনপ্রিয়তা রয়েছে বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের। গত নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারলেও তার জায়গায় প্রার্থী ছিলেন ছেলে ইরফান ইবনে আমান অমি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩২ হাজার ৪৯০ ভোট পেয়েছিলেন আমানপুত্র।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমান উল্লাহ আমানই প্রার্থী হতে পারেন। যদি কোনো কারণে তিনি প্রার্থী না হতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আবারও নির্বাচনের মাঠে দেখা যেতে পারে আমানপুত্র ইরফানকে।

কারই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর