মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দেশে ফিরে রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু করছেন তারেক রহমান

মো. মেহেদী হাসান হাসিব
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

দেশে ফিরে রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু করছেন তারেক রহমান
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান।

দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বাইরে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবার প্রথমবারের মতো সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে দল ও নির্বাচন পরিচালনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও কখনো প্রার্থী হননি তিনি। এবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন তিনি।

এক-এগারো পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান কারামুক্ত হয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। বিদেশে থাকায় তখন ভোটার তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হননি। এরপর আওয়ামী লীগের শাসনকালে তিনি দেশে আসেননি, ভোটারও হননি।


বিজ্ঞাপন


চব্বিশ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে। ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করলেও তারেক রহমান এখনো ভোটার হননি। ফলে তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে তারেক রহমানের ভোটার হওয়ার বা প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নানা জল্পনা চলছিল। সব শঙ্কা উড়িয়ে ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নিবন্ধন করবেন এবং এরপর নির্বাচন কমিশনে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন করবেন। ইসি আবেদন অনুমোদন করলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ও ভোটার হিসেবে পূর্ণ অধিকার ফিরে পাবেন, এরপর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পথে আর কোনো বাধা থাকবে না।

ভোটার তালিকা আইনে বলা আছে, ইসি যেকোনো সময় ভোটার হওয়ার যোগ্য যেকোনো ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। তারেক রহমান কোথায় ভোটার হতে চাইছেন, তা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি।


বিজ্ঞাপন


tarek-2
বিজয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন তারেক রহমান। ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন তিনি।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, সংবিধান ও ভোটার তালিকা আইনে ভোটার হওয়ার এবং প্রার্থী হওয়ার যে যোগ্যতা-অযোগ্যতার কথা বলা আছে, সেগুলো লঙ্ঘন না হলে তারেক রহমানের ভোটার বা প্রার্থী হওয়ায় কোনো বাধা নেই। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে তাকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটার হতে হবে। একইসঙ্গে দাখিল করতে হবে মনোনয়নপত্র।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন তারেক রহমান। অক্টোবরের শুরুতে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান ভোটে অংশ নেওয়ার কথা বলেছিলেন।

ভোটার তালিকা আইনে যা আছে

ভোটার তালিকা বিধিমালার ১১ বিধির উপবিধি (১০) অনুযায়ী, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসবাস করলে তিনি প্রবাসে বা দেশে ভোটার হওয়ার জন্য ফরম-২ পূরণ করে দেশে বা সংশ্লিষ্ট দেশে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার কাছে কিংবা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। ভোটার তালিকা আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী, কমিশন যেকোনো সময় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকারী ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করতে পারবে।

১৩ ধারা অনুযায়ী, কেউ বাংলাদেশের নাগরিক না থাকলে, আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হলে, বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে সাজাপ্রাপ্ত হলে কিংবা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট-১৯৭৩ অধীনে দোষী হলে তিনি ভোটার হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। আইনের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, ভোটার হতে হলে ১৮ বছর হতে হবে।

তারেক রহমানের ভোটার হওয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে আসবেন। এরপর ২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার তাই আগামী ২৭ ডিসেম্বর তিনি ভোটার হওয়াসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজ শেষ করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভোটার হওয়া নিয়ে কোনো সংকট নেই। এটা নিয়ে বিশেষ আলোচনা করার কিছু নেই। উনি বাংলাদেশের নাগরিক। ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে, নাম উঠানোর জন্য সময় পার হয়ে যায়নি। কমিশন চাইলে যখন চায় তখনই পারে। দুশ্চিন্তা আমাদের নেই।’

যে আসনে প্রার্থী হচ্ছেন তারেক রহমান

গত ৩ নভেম্বর বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ২৩৭ আসনের প্রার্থীদের নাম পড়ে শোনান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে ‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া-৬ (সদর) আসনের প্রার্থী হিসেবে তারেক রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে দিয়ে সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার মনোনয়ন ফরম তুলেছে।

১৯৯১ সাল থেকে বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাহজাহানপুর) এবং ১৯৯৬ (জুন) সাল থেকে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নির্বাচন করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ দুটি আসনে তিনি কখনো হারেননি।

tarek_rahman
তারেক রহমানের সংবর্ধনা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে মঞ্চ। 

১৯৯৬ সালে (জুন) সপ্তম সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া এই আসন থেকে নির্বাচিত হলেও পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দেন। তখন উপ-নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির জহুরুল ইসলাম।

২০০১ ও ২০০৮ সালেও খালেদা জিয়া এই আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের উপ-নির্বাচনে এই আসন থেকে জয় পান ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ায় প্রার্থী হতে পারেননি। তখন এই আসনে বিএনপির হয়ে লড়াই করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বিজয়ী হলেও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। পরে উপ-নির্বাচনে বিএনপি নেতা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ধানের শীষে ভোট করে বিজয়ী হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এবার বগুড়া-৬ আসনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়াই করবেন তারেক রহমান।

তারেকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে যা বলছে রাজনৈতিক নেতারা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে। রাজনীতিতে পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তিত বাংলাদেশ পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটসহ সবকিছুকে সামনে রেখেই নেতা যিনি যে দলেই আছেন তাকে তার করণীয়, কলাকৌশল, তার স্ট্রাটেজি, টেকনিক এবং প্র্যাকটিস তাকে নির্ধারণ করতে হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, ‘আমরা দেখছি যে আমাদের চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা কিছুটা সহিংসতা পর্যবসিত হয়েছে। তাদের মধ্যে কিছুটা ভাগ-বিভাজন দেখছি, হিংসা দেখছি, আমি আশা করতে চাই দেশে ফেরার পর তারেক রহমান বিএনপিকে যেমন যোগ্যতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেবেন, তেমনি আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সেরকম নেতৃত্বের পালন করবেন। একইসঙ্গে আমাদের বিভাজনের যে রাজনীতি সেই ক্ষেত্রে তিনি এক ধরনের পক্ষের একটা বাতাবরণ তৈরি করতে পারবেন।’ 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানান, ‘চব্বিশের ৫ আগস্টের পর তারিখের পরে বিএনপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেই অভিযোগগুলো থেকে তিনি বিএনপিকে বের করে আনতে পারবেন, এটা আমরা তার কাছে প্রত্যাশা করি।’

এমএইচএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর