শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

স্বাক্ষর জাল: মান্নাসহ সাতজনের নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক 
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বাক্ষর জাল: মান্নাসহ সাতজনের নামে মামলা

স্বাক্ষর জাল করে ঋণ পুনঃতফশিলের চেষ্টার অভিযোগে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জাল করা স্বাক্ষরটি বগুড়ায় একটি হিমাগারের পলাতক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। 

মামলার বাদী বগুড়ার শেরপুরের খানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মিল্লাত হোসেন। তিনি সম্প্রতি বগুড়ার অবকাশকালীন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এ মামলা করেন।


বিজ্ঞাপন


জজ শাহজাহান কবির মামলাটি আমলে নিয়ে নথিপত্র ও প্রাথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়কে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

 


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার দুপুরে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল ওহাব ও দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহফুজ ইকবাল মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান ড. এম জুবায়দুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান, প্রধান কার্যালয়ের ইনচার্জ মাহমুদ হোসেন খান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সৈয়দ উল্লাহ, বগুড়ার জোনাল শাখার ইনচার্জ সিকদার শাহাবুদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (বিআরপিডি) ও সদস্য সচিব, নীতি সহায়তা প্রদান বাছাই কমিটি বায়েজিদ সরকার এবং বগুড়ার শিবগঞ্জের কিচক বাজারে আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্না (সভাপতি নাগরিক ঐক্য)।

মামলায় কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম নাজমুল কাদির শাহজাহান চৌধুরী ও পরিচালক তার স্ত্রী ইসমত আরা লাইজুসহ পাঁচজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা জালিয়াতি ও প্রতারণাকারী এবং আইন পরিপন্থি কাজের সঙ্গে জড়িত। তার সঙ্গে ২ নম্বর সাক্ষী এবিএম নাজমুল কাদির চৌধুরী ও ৩নং সাক্ষী ইসমত আরা লাইজুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামা সম্পাদক হয়। চুক্তিনামা অনুযায়ী এরা দুজন ও ৭নং আসামি মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রতিষ্ঠান আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করে তা বিক্রির জন্য চুক্তি হয়। চুক্তির দিন সাক্ষী ১০ কোটি টাকা বুঝিয়ে দেন এবং অবশিষ্ট ১৫ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের সময় পরিশোধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়েও সম্মতি প্রকাশ করেন।

পরে দেখা যায়, সাক্ষী এবিএম নাজমুল১ কাদির শাহজাহান চৌধুরী ও তার স্ত্রী ইসমত আরা লাইজু গত বছরের ১৯ আগস্ট আমেরিকা চলে যান। পলাতক অবস্থায় তাদের অনুপস্থিতিতে আসামি মাহমুদুর রহমান মান্না ওই দম্পতির স্বাক্ষর জাল করে ১ ডিসেম্বর বোর্ড সভার ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করেন। যেখানে ৩৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফশিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

আসামিরা এই জাল রেজুলেশনকে বৈধ রূপ দিয়ে তা বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকে দাখিল করে ঋণ পুনঃতফশিলের আবেদন করেন। পরে তারা পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে মিথ্যা কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফশিলের অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করেন।

গত ১১ ডিসেম্বর দাখিল করা ওই মামলায় আরও বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বগুড়ার বড়গোলা শাখা থেকে খেলাপি ৩৮ কোটি চার লাখ ৭৬ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য আসামিদের ‘কল ব্যাক নোটিশ’ দেওয়া হয়।

ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। এরপরও আসামিরা জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে পুনঃতফশিলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল ওহাব বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিবগঞ্জের কিচক বাজারে আফাকু কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম নাজমুল কাদির শাহজাহান চৌধুরী, তার স্ত্রী ইসমত আরা লাইজুকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন। এরপরও তাদের উপস্থিত দেখিয়ে ভুয়া স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৩৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফশিলের চেষ্টা করায় এ মামলা হয়েছে।

দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহফুজ ইকবাল জানান, আদালতের আদেশের কপি বুধবার হাতে এসে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার আদেশের অনুলিপিসহ নথিপত্র দুদক ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ক.ম/ 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর