নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চূড়ান্ত নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) দুটি নতুন রাজনৈতিক দল। দলগুলো নিবন্ধন নিয়ে কারো দাবি- আপত্তি থাকলে তা জানতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া পুনরায় মাঠ পযার্য়ের তদন্তের জন্য যাচ্ছে নয়টি দলের আবেদন। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২২টি দলের মধ্যে সাতটি দলের নিবন্ধন আবেদন নামঞ্জুর করেছে। এনসিপিসহ দুটি দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেবে দাবি-আপত্তি থাকলে তা জানানোর জন্য। তিনটি দলের অধিকতর যাচাই চলছে। এটি শেষ হলে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত হবে। আর নয়টি দলের আবারও মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করা হবে। আরও একটি দলে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা দ্বারা অধিকতর যাচাই করা হবে।
যে দলগুলো নিবন্ধন পাওয়ার তালিকায় রয়েছে সেগুলো হলো— জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আদালতের আদেশে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি নিবন্ধন পাওয়ায় মোট ৬টি নতুন দল যুক্ত হতে যাচ্ছে ইসির তালিকায়।
এর আগে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব আলী নেওয়াজ গত ১৪ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি দল ছাড়া ২০টি দলের শুনানি করে। অন্যবারের মতো এবারও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এতে ১৪৩টি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছিল। প্রথম দফায় কোনো দলই শর্ত পূরণ না করায় সবাইকে সময় দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে বলেছিল ইসি। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৮৪টি দল সাড়া দিলেও অন্যরা সাড়া দেয়নি।
৮৪টি দলের মধ্যে আবার ৬২টি দল ঘাটতি পূরণ করতে তথ্য জমা দিয়েও শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তাই বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ২২টি দলের মাঠপর্যায়ে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শুনানি করে ইসি।
যে ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করা হয়—
ফরোয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পাটি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।
বিজ্ঞাপন
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরে থাকে ইসি। এ প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে আবেদন করতে হয়।
নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, মোট রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য যখন আবেদন চাওয়া হয়েছিল তখন ১৪৩টি দল আবেদন করেছিল। এরপর ২২টি দলের মাঠপর্যায়ে তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে দুটি দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করেছে—একটি বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আরেকটি বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আদালতের রায় প্রাপ্তির পর পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত।
সিনিয়র সচিব বলেন, বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগের বিষয়ে আমরা এখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেব, যাতে তাদের বিষয়ে কোনো উজরা বা আপত্তি থাকলে জানানো যায়। তবে এনসিপির প্রতীক নিয়ে একটি বিষয় অনিষ্পন্ন আছে। তারা যে প্রতীক চেয়েছেন, সেটি আমাদের প্রতীকসংক্রান্ত বিধিমালার তফসিলে নেই। এ কারণে তাদের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হবে প্রতীক নিশ্চিত করার জন্য। তারা আমাদের নতুন প্রতীক জানালে সেটি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় লীগের ব্যাপারে কোনো জটিলতা নেই।
ইসির এই কর্মকর্তা বলেন, নিবন্ধনের বিষয়ে আরও কয়েকটি দলকে অধিকতর পর্যালোচনা করতে হবে। এর মধ্যে সচিবালয় পর্যায়ে এবং আংশিকভাবে মাঠপর্যায়ে যাচাই হবে। সচিবালয়ে যেসব দলের অধিকতর যাচাই হবে, সেগুলো হলো—বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ)।
পুনরায় মাঠপর্যায়ের তদন্তে যে নয়টি দলকে পাঠানো হবে, সেগুলো হলো—আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা এবং জনতা পার্টি বাংলাদেশ।
যে ৭টি দলের নিবন্ধন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে, সেগুলো হলো—ফরোয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিবি এম), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।
কিছু দলকে পর্যবেক্ষণে রাখা, আবার কিছু দলকে অধিকতর পর্যালোচনায় পাঠানো এবং এনসিপিকে চিঠি দেওয়ার বিষয়গুলো একসঙ্গে করা হলো না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, কিছু তথ্যের সন্নিবেশ করতে অসুবিধা হয়েছে। একটি দলের ক্ষেত্রে তথ্য সঠিক হলেও আরেকটি দলের জন্য সেটি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, না বলে দেওয়া বা বাদ দেওয়ার চেয়ে আরেকটু যাচাই করাই উত্তম।
আখতার আহমেদ বলেন, বিজ্ঞপ্তি একসঙ্গে নাও হতে পারে। হতে পারে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে। চার দিনের ছুটির মধ্যে কাজ চলবে। যদি এর মধ্যে এক বা দুই দলের বিষয় চূড়ান্ত হয়, তবে তাদের বিজ্ঞপ্তি আগে দেওয়া হবে।
প্রথমে যে তিনটি দলের কথা বলা হলো এবং পরে যে নয়টি দলের কথা বলা হলো—এই পার্থক্য কী, জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, পার্থক্য আছে। যেমন আমাদের হাতে থাকা কিছু তথ্য এবং অতিরিক্ত কিছু অনানুষ্ঠানিক তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, সচিবালয় পর্যায়ে ফাইল যাচাই করলেই কিছু অসংগতির বিষয় স্পষ্ট হবে, যা হয়তো মাঠপর্যায়ে পাঠাতে হবে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে পাঠাতে হবে। এভাবেই শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।
এমএইচএইচ/ক.ম

