সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আমরা শাসক নয়, সেবক হবো: জামায়াত আমির

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

আমরা শাসক নয়, সেবক হবো: জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামী জনগণের আস্থা ও ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শাসক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবেই কাজ করবেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, সকলেই সমতার ভিত্তিতে অধিকার ভোগ করবেন। দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য। উন্নয়নের জন্য আমরা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করছি, যেখানে চীনের এক্সপোর্ট প্রসেসিংসহ নানা খাতে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চাইনিজ পিপলস ইনস্টিটিউট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স (সিপিআইএফএ)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মান্যবর রাষ্ট্রদূত মি. ঝৌ পিংজিয়ানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াত আমির। বৈঠক শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা তুলে ধরেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং চীনা দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। 

প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনীতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে আলোচনা করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, আমিরে জামায়াত অসুস্থ হওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে এই প্রথম বিদেশি কোনো প্রতিনিধি দলের সামনে উপস্থিত হতে পেরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন এবং অতিথিদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, আমিরে জামায়াত চীনকে বলেছেন—বাংলাদেশ ও চীন উন্নয়ন সহযোগী। আমরা শুধু কূটনৈতিক বন্ধুত্ব নয়, প্রতিবেশীসুলভ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককেই অধিক গুরুত্ব দিই। অর্থনীতি, রাজনীতি, নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই।

ব্রিফিংয়ে জামায়াত নেতারা অভিযোগ করেন, অতীত সরকার আমলে তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।

অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাদের নেতাদের কারাগারে হত্যা করা হয়েছে, নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অফিসগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই কষ্টের স্মৃতিগুলো আমিরে জামায়াত চীন প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেছেন।

চীনা প্রতিনিধিদের প্রশ্নে জামায়াত আমির তাদের গণতন্ত্রপন্থী অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সবসময় একটি নির্বাচনমুখী দল। প্রতিটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আমরা অংশ নিয়েছি এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছি। ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের রাজনৈতিক নীতি।

আগামী নির্বাচনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, দলটির পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।

আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটও উঠে আসে। জামায়াত আমির উল্লেখ করেন, অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা লুটপাটের শিকার হয়েছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন, বিশেষ করে চীনের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্ব রাজনীতি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার প্রশ্নেও আলোচনা হয়। আমিরে জামায়াত বলেন, ফিলিস্তিন, গাজা, সিরিয়া, ইরাক, মায়ানমার, ইউক্রেন—সবখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে চীনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। মানবতার পক্ষে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে।”

চীনা প্রতিনিধি দল জামায়াত নেতাদের জানান, চীনের আধুনিকীকরণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা ১৯৪৯–২০৪৯ সময়কালের মধ্যে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতি পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় চীন নতুন উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রতিনিধিরা জামায়াত নেতাদের বলেন, সম্প্রতি আপনারা চীন সফরে গিয়েছিলেন, সেখানেই নিশ্চয়ই আমাদের অগ্রগতির চিত্র দেখেছেন।

বৈঠকে চীনা প্রতিনিধি দল বলেন, তারা শুধু সরকার-টু-সরকার (জি-টু-জি) নয়, বরং পার্টি-টু-পার্টি সম্পর্কের দিকটিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, মতবিনিময় এবং কৌশলগত সংলাপের সম্ভাবনা নিয়ে উনারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বৈঠকের সার্বিক মূল্যায়নে অধ্যাপক পরওয়ার জানান, চীনা প্রতিনিধি দল জামায়াতে ইসলামীর আতিথেয়তায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। আমীরে জামায়াতও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চায়নাসহ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা শাসক হবো না, আমরা সেবক হবো।

টিএই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর