রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নির্বাচনি সমঝোতার পথে জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলো

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:২৮ এএম

শেয়ার করুন:

islami
নির্বাচনি সমঝোতার আলোচনায় আটটি ইসলামি দল। ছবি কোলাজ: ঢাকা মেইল

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো আগামী নির্বাচনের আগে কোনো জোট গঠন করবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে বেশ কয়েকটি দল যে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে তা স্পষ্ট। এই সমঝোতায় জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদও যুক্ত হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

এরইমধ্যে একই প্ল্যাটফর্মে আসতে আলোচনা চালাচ্ছে ক্রিয়াশীল বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংখ্যানুপাতিক ভোটের দাবি আদায়ে মাঠে সরব থাকার বিষয়েও একমত তারা।


বিজ্ঞাপন


আদর্শগত মিল না থাকালেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের মতো বিষয়গুলো তাদের ঐক্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে দাবি করছেন দলগুলোর নেতারা।

তবে একই মঞ্চে আসার আলোচনা চালালেও এটিকে অবশ্য কোনো জোট বলতে চাইছেন না তারা। আপাতত দাবি আদায়ে সংঘবদ্ধভাবে মাঠে থাকার পরিকল্পনা তাদের। যদিও নেতারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিলের পর 'নির্বাচনি সমঝোতা' হতেও পারে।

আরও পড়ুন

জোটের ডাক, পিআরের দাবি—ইসলামি দলগুলোর লক্ষ্য কী?

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘বিএনপি ছাড়া প্রধান সব দলই সংখ্যানুপাতিক ভোটের বিষয়ে একমত। আমরা চেষ্টা করছি, যারা (সংখ্যানুপাতিক ভোটের) পক্ষের তাদের অনেকের সাথেই আমরা আবার কথা বলছি।’

Islami2
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে উজ্জীবিত ইসলামি দলগুলো। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে, পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিতের অভিন্ন দাবিতে সরব অন্য দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো। এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টির নামও এসেছে এই আলোচনায়।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘জোটের ব্যাপারে এখনো কারো সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়নি। তবে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল তাদের সবার সাথেই আমাদের সু-সম্পর্ক আছে।’

আর ইসলামি দলগুলোর সাথে 'জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির' অভিন্ন দাবিতে একমত হলেও এটি কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা বা জোট নয় বলে জানিয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।

এক হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো

দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যেই আবর্তিত বাংলাদেশের রাজনীতি। এর বাইরে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে হাতেগোনা কয়েকটি দল। গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই রাজনৈতিকভাবে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে নানা কৌশল নিচ্ছে দলগুলো, আর সেখানেই আসছে নির্বাচনি জোট বা সমঝোতার প্রসঙ্গটি।

আরও পড়ুন

কেন ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানতে চায় বিএনপি-জামায়াত?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন কিংবা মাঠের আন্দোলনে দলীয় মেরুকরণ নতুন নয়। অতীতেও বিএনপি-জামায়াত কিংবা আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টিসহ অন্য অনেক দলই জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন ও নির্বাচন করেছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবার একই মঞ্চে আসতে আলোচনা চালাচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। দলগুলোর মধ্যে মতের ভিন্নতা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকলেও নির্বাচন লক্ষ্য করে 'এক বাক্সে ভোট আনার' স্লোগানও তোলা হয়েছে।

Islami3
ইসলামি দলগুলোর নেতারা একটেবিলে বসেছেন বেশ কয়েক বার। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি ধর্মভিত্তিক দলের একমঞ্চে আসার চেষ্টা চলছে, তবে তাদের মধ্যে কোনো জোট হবে কি না তা দৃশ্যমান হবে তফসিল ঘোষণার পর। যদিও দলগুলোর নেতারা বলছেন, জোট নয়, বরং নিজেদের মধ্যে 'নির্বাচনি সমঝোতা' তৈরিতে আলোচনা হচ্ছে। এখনই নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না তারা, শুরুতে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি আদায়ে একসাথে সরব থাকতে চায় দলগুলো।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলছেন, ‘জোট হবে না। এটি নির্বাচনি সমঝোতা, আসন বিন্যাস। যার যেখানে যোগ্য প্রার্থী আছে আলাপ-আলোচনা করে সেখানে ওই দলের প্রার্থী থাকবে, অন্য দলের লোকেরা তাকে সমর্থন করবে।’

ইসলামি দলগুলো ছাড়াও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে 'নির্বাচনি সমঝোতা' হওয়ার আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।

আশরাফ আলী আকন বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলমান একদলীয় পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশপ্রেমিক দলগুলোকে এক জায়গাই আনতেই নির্বাচনি সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে।

‘রাজনৈতিক সমঝোতা, মার্শাল ল কিংবা একদলীয় শাসন বলেন–– সবই কিন্তু ট্রাডিশনাল নির্বাচনের পরপরই হয়েছে। শেখ মুজিবের ৭৩ এর নির্বাচনের পরই কিন্তু বাকশাল হয়েছে, জিয়াউর রহমানের মার্শাল ল হয়েছে। খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনার সময়ও ক্ষমতায় নির্বাচিত সরকারই ছিল, তবে তথাকথিত নির্বাচনের কারণে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে,’ বলেন আশরাফ আলী আকন।

পিআর পদ্ধতির মধ্য দিয়েই দেশের নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার হতে পারে বলে মনে করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো, যার মাধ্যমে দেশের সব মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে বলেই মনে করে তারা।

আর এ কারণেই পিআর পদ্ধতি, সংস্কার এবং ফ্যাসিবাদের বিচারের দাবি আদায়ে সংঘবদ্ধভাবে মাঠে থাকার কথা বলছে দলগুলো।

তবে নির্বাচনি জোটের ব্যপারে এখনো আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, ‘নির্বাচনি আলোচনা আমরা এখনই করছি না। সে বিষয়েও আমরা কথাবার্তা বলবো। বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে, এখনো ফরমাল হয়নি।’

আরও পড়ুন

‘ইসলামি দলগুলো ভোটকেন্দ্রে একটি বাক্স পাঠাতে চায়’

তিনি জানান, আপাতত পিআর এর দাবি আদায়ে একসাথে কাজ করতে সংগঠিত হচ্ছে ইসলামি দলগুলো। ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে যে ৩১টি দল বসছিলাম এর ভেতরে প্রায় ২৫টি দলই পিআর এর পক্ষে ছিল। এই ইস্যুতে- উই আর অলমোস্ট কমন, একসেপ্ট বিএনপি,’ বলেন তাহের।

এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদের নামও আলোচনায়

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের পর জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে; অনেক ক্ষেত্রেই তা চোখে পড়ার মতো। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সংস্কার ও বিচারের প্রশ্নেও ঐক্যবদ্ধভাবে সরব থাকতে চায় তারা।

Islami4
অতীতের বৈরিতা ভুলে কাছাকাছি জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীত

অভিন্ন দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির মতো দলের সঙ্গেও ইসলামি দলগুলোর আলোচনা চলছে বলে আলোচনা রয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘নির্বাচনি সমঝোতার জন্য বেশকিছু দেশপ্রেমিক দলও ইসলামি দলের সঙ্গে আছে। যেমন- গণঅধিকার, এবি পার্টি, এনসিপি এদের সাথেও আমাদের নির্বাচনি সমঝোতার আলাপ-আলোচনা চলছে।’

যদিও নির্বাচনি জোট বা সমঝোতার ব্যাপারে কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলেই দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। তিনি বলছেন, দেশ গড়তে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য এবং নিজেদের ঘর গোছাতেই এখন সব থেকে গুরুত্ব দিচ্ছে গণঅধিকার পরিষদ। যদিও আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলেও জানান তিনি।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগেই কোনো দলের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট গঠনের কোনো আলাপ গণঅধিকার পরিষদ না করার সম্ভাবনাই বেশি এবং এ ধরনের আলোচনা আমরা করিনি এখনো পর্যন্ত।’

অবশ্য গণঅধিকার পরিষদ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব দলের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখতে চায় বলেও জানান রাশেদ খান।

আরও পড়ুন

ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী জোট কতদূর

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে রাশেদ খান বলেন, আলাদা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি, এজেন্ডা, দাবি থাকতে পারে। তবে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আগামী নির্বাচনে সবার অংশ নেওয়া উচিত। ‘সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সবার নির্বাচনে অংশ নেওয়াই হবে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে অংশ না নিলে পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে,’ বলেও মনে করেন রাশেদ খান।

রাজনৈতিক সমঝোতা বা নির্বাচনি জোট প্রসঙ্গে ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচন হতে হবে ইসলামপন্থী দলগুলোর এই দাবির সাথে এনসিপি একমত।’

তবে, ‘আইনি ভিত্তির পর তারা সরাসরি পরবর্তী নির্বাচন চেয়েছে। আর আমরা চেয়েছি গণপরিষদ নির্বাচন। এক্ষেত্রে আবার আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে,’ বলেন তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর