রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সজাগ থাকুন:  হাফিজ 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

Hafiz
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। ছবি- সংগৃহীত।

বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে নেতামকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধারা আমৃত্যু আপসহীন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।


বিজ্ঞাপন


হাফিজ বলেন, ‘পাঁচ-ছয় জন ব্যক্তি- কেউ আমেরিকা থেকে এসেছেন, কেউ লন্ডন থেকে এসেছেন, তাদের কথায় তো সংবিধান পরিবর্তন হতে পারে না এবং তাদের দুই-চারজনের অভিমত কখনো সংবিধানের উপরে প্রায়োরিটি বা অগ্রাধিকার পেতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক খেলাফেলা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। সুতরাং এই সময় মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকে আমাদেরকে সজাগ হতে হবে। অনেকে বৃদ্ধ, দাঁড়ি, টুপি, কিন্তু আপনারা তো ট্রেনিং জমা দেননি।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাই, পুরা জাতিকে মুক্তিযোদ্ধার জাতিতে পরিণত করব। আমরা ছাত্রদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেব। যাতে কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কেউ বাংলাদেশের দিকে রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে।’


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ‘ছয় কোটি লোকের দেশ মিয়ানমার, ১৮ কোটি লোকের দেশ বাংলাদেশের উপরে হামলা করতে চায়। ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের উপর তারা চাপিয়ে দিয়েছে।’

হাফিজ বলেন, ‘আজকে আমাদের প্রয়োজন ঐক্য। নানা ধরনের কথা শোনা যায়, আমরা যারা একসঙ্গে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, রাষ্ট্র ক্ষমতার দৃশ্যমান হয় অনেকেই তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে আমরা এত বছর আশ্রয় দিয়েছি, আমাদের প্রতীক নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরকে বেগম জিয়া মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন। আমাদের এখানে জয়নাল আবদিন ফারুক আছেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আছেন, মজিবুর রহমান সারওয়ার আছেন- এরা তো মন্ত্রী হতে পারতেন। আমাদের জোটের শরিক ছিল, সেজন্য তাদের (জামায়াত) মন্ত্রী করা হয়েছিল। আজকে তার প্রতিদানে কী বলছে? দুই সাপের একই বিষ, নৌকা আর ধানের শীষ’। এজন্য কি এদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিলাম।’ 

হাফিজ উদ্দিন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাদের কেন এই ক্ষোভ আমাদের প্রতি। ক্ষোভ এজন্য যে, কেন জনগণ বিএনপিকে সমর্থন করে? বিএনপি জনপ্রিয় দল, এটা তো আমাদের দোষ না রে ভাই? আমরা ১৬-১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। বারবার আমরা জেলে গিয়েছি, আমাদের হাজার হাজার কর্মী জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে।’

তার দাবি, ‘আওয়ামী লীগ মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, বিরোধী দলকে দমন করেছে, আমাদের বহু নেতা হারিয়ে গিয়েছে, সে জন্যই তো আজকে বিএনপির এই জনপ্রিয়তা।’

হাফিজ বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। সংবিধান যেকোনো সময়ে যেকোনো দল পরিবর্তন করতে পারে। সারা পৃথিবীতে সংবিধান প্রণয়ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশেও এটি হয়ে এসেছে। আগামী দিনেও ইনশাআল্লাহ সেটিই হবে।’

তার মতে, ‘কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তির দ্বারা সংবিধান সংশোধন হতে পারে না। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে আশা করি সুষ্ঠ নির্বাচন পাবো এবং সেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ঠিক করবে বাংলাদেশের সংবিধান কেমন হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এই দলটি শুধু একাত্তর সালে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে তাই নয়, তারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠারও বিরোধিতা করেছে। এই দল এখন জনগণের মালিক-মোক্তার হয়ে বসতে চায়। তারা ইতোমধ্যে উপলব্ধি করেছে যে, জনগণের মাধ্যমে তাদের সুযোগ নাই, তাদেরকে জনগণ ভোট দেবে না। তাদের একমাত্র চেষ্টা হলো বিএনপি ঠেকাও, বিএনপি যেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় না আসতে পারে। সুতরাং নির্বাচন দরকার নাই, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্যে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে যে এই ধরনের একটা পরিস্থিতি হবে, আমরা কিন্তু কখনো চিন্তাই করিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদেরও সাবধান হতে হবে, আওয়ামী লীগ যা যা করেছে, আমরা যদি একই কাজ করি, আমাদের পরিণতি কিন্তু আওয়ামী লীগের মতোই হবে। এটা উপলব্ধি করে আগামী দিনগুলোকে আমাদের পথ চলতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, রাষ্ট্র ক্ষমতার লোভে জাতীয়তাবাদকে জলাঞ্জলি দেবেন না।’

হাফিজ আরও বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সেখানে আওয়ামী লীগ অফিস খুলেছে এবং মাফিয়া নেত্রী পলায়ন করে সেখানে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করব।’

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারওয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

বিইউ/এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর