রোববার, ১৫ জুন, ২০২৫, ঢাকা

শ ম রেজাউল করিমকে ‘দু-মুখো সাপ’ লিখে ছাত্রলীগ নেতার পোস্ট

জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুর
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৫, ০৮:২৩ এএম

শেয়ার করুন:

Politics

সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক ও হাইকোর্ট বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শ ম রেজাউল করিমকে ‘দু-মুখো সাপ’ লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম তাপস (চৌধুরী)। শনিবার (৩১ মে) সন্ধ্যা ৬টায় তার ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ কথা লিখেন।

তরিকুল ইসলাম তাপস (চৌধুরী) নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক। কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা শেখমাঠিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান চৌধুরী (নান্নু) ছোট ভাই।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

৫ আগস্টের পর শ ম রেজাউলকে অপহরণ করতে চেয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা!

জানা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম তাপস চৌধুরী ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত শ ম রেজাউল করিমের অনুসারী ছিলেন। ছাত্রলীগ সভাপতির বড় ভাই আতিয়ার রহমান চৌধুরী নান্নু সাবেক বন্ধুর বাল্যবন্ধু।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম তাপস (চৌধুরী) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  ফেসবুকের পোস্টটি তুলে ধরা হলো-  জনাব শ. ম রেজাউল করিম, আপনি একজন ভালো আইনজীবী  হতে পারেন কিন্তু ভালো মানুষ না। যারা কাছ থেকে দেখেছি তারা জানি, নিজের প্রয়োজনে আপনি এমন কোনো ভয়ংকর কাজ নাই যা আপনি করতে পারেন না।

1000130152


বিজ্ঞাপন


আপনার দীর্ঘ বক্তৃতায় আপনি বলেছেন, ওয়ান ইলেভেনে একজনের স্ত্রীর মামলা আপনি লড়েছেন সেই লোক ছিলেন সমন্বয়ক। সে আপনাকে বাসা থেকে পালাতে সহযোগিতা করেছে। তার কাঁধে মাথা রেখে অসুস্থতার অভিনয় করে এক কাপড়ে বাসা থেকে পালিয়েছেন। আচ্ছা ওয়ান ইলেভেনে যার স্ত্রী ছিল! সে কীভাবে এই আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়ক হয়! আপনি যেমন করে শিশু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভুয়া সনদ নিয়েছিলেন, তেমন করে?

আরও পড়ুন

এবার দেশ ছেড়ে পালানোর ‘নাটকীয়’ বর্ণনা দিলেন শ ম রেজাউল

আপনি যে বাক্যটি বলেছেন সেটি হুবহু এমন, 'নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যাকে আমি টাকা দিয়ে বানিয়েছি।' আপনি যদি টাকা দিয়ে আমাকে সভাপতি বানিয়ে থাকেন তাহলে সেই টাকা কাদের হাতে দিয়েছেন কবে কোথায় কার মাধ্যমে? ইতোমধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সেটি প্রত্যাখান করে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। আমার রাজনৈতিক জীবনে দলীয় বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রোগ্রামে ১টি পয়সাও খরচ হিসেবে আমাকে দেন নাই। আর আপনি সভাপতি বানাতে টাকা খরচ করেছেন! এ কথাতো আপনার বাড়ির গৃহকর্মীটিও বিশ্বাস করবে না।

আরও পড়ুন

ভারত থেকে ফিরে ঝিনাইদহ আ.লীগের শীর্ষ নেতা গ্রেফতার

আপনি বলেছেন- আপনি কয়েকবার বাসা পাল্টে এক দূরবর্তী আত্মীয়র বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন, সেটা কেউ জানে না। আমি আপনাকে ফোন ট্রাকিং করে খুঁজে বের করেছি এবং জেলা উপজেলার জামাত-বিএনপির লোকজন নিয়ে আপনাকে ধরতে গিয়েছি। আপনি তো নিজে বললেন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইল এবং চশমাটি পর্যন্ত নিতে পারেননি তাহলে কীভাবে আমি আপনার ফোন ট্র্যাকিং করলাম! যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাকে খুঁজে পাচ্ছিল না, সেখানে আমি কীভাবে খুঁজে পাব! এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই আপনাকে দিতে হবে।

rejaull

আপনার কথামতো আপনার বাসা বাড়ি লুট হয়েছে, আগুনে পুড়েছে, এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছেন! শুধু পাসপোর্ট পুড়ল না! দিব্যি লন্ডন চলে গেলেন!

আমি যদি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকি এবং আপনাকে ধরার জন্য খুঁজতে থাকি, তাহলে ৫ আগস্টের পর আপনার নির্বাচনী এলাকায় সেই জামায়াত-বিএনপি আমার নামে এতগুলো মামলা করল কেন? যার অধিকাংশে আমি ১ নম্বর ২ নম্বরের মধ্যে ! এলাকায় আপনি কয়টা মামলা খেয়েছেন?

আপনার নিজ ভগ্নিপতি কাশেমের কথা মনে আছে যাকে আপনি বিএনপির সভাপতি থেকে আওয়ামী লীগ বানিয়েছিলেন এবং তাকে দিয়ে আপনি এলাকায় এমন কোনো অপকর্ম নাই যা আপনি করেছেন। সত্যিকারের আওয়ামী লীগরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল আপনাদের প্রভাবে।

আপনার দাবি অনুযায়ী আমি অপহরণকারী দল নিয়ে এসেছিলাম তখন আপনার ভাই আমাকে পায়ের নিচে পাড়িয়ে ধরে রাখলো। আমার সঙ্গে থাকা বাকি অপহরণকারীরা কি তখন ফটোসেশন করছিল? আপনি বলেছেন আমি দলবল নিয়ে মব করেছি তাহলে এত লোকের মধ্যেও আপনি তামিল নায়কের মতো এতগুলো মানুষ পেরিয়ে মোটরসাইকেলে করে চলে যেতে পারলেন!

সত্যটা হলো আমি একা একটি মানুষ ছিলাম।

তিনি বলেছেন, আমি তার নির্বাচনী এলাকার জামায়াত-বিএনপির লোকের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে তাকে ধরতে গিয়েছি সেই ভিডিও ফুটেজ তার কাছে আছে। লোকগুলো যেহেতু তার নির্বাচনী এলাকার তাই সবাইকেই তার চেনা উচিত তাহলে ভিডিও ফুটেজ পাবলিক করে আমর সঙ্গে থাকা জামায়াত-বিএনপির লোকগুলোকে চিহ্নিত করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

আপনি বলেছেন- আমি আপনাকে ধরতে গেছি কিন্তু আপনার স্ত্রী ভাইকে কেন ধরিনি? রাত দেড়টা পর্যন্ত বাসা ঘিরে রাখলে, সেখানেতো আরেও অনেক মানুষ জুটে যাওয়ার কথা!

sk_31052025-0106

আর আমিই বা কেন আপনার স্ত্রী ভাইকে ধরিয়ে দিলাম না?

আপনি বলেছেন সীমান্তে পাচারকারীরা বিনা পয়সায় আপনাকে পার করে দিয়েছে কি সম্পর্ক তাদের সাথে আপনার!  সবাই আপনাকে এমনি এমনি সাহায্য করল! এই গল্পেতো হলিউড সিনেমা হয়ে যাবে। আপনি যেখানেই যান, একজন পিওন, বা একজন পরিচিত লোক হঠাৎ করে হাজির হয়ে যায়! কতজন পিওন আপনার!

ঘটনার আসল চিত্র এবার সত্য জানুক সবাই।

একদিন হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে রেজাউল করিম আমাকে ফোন করেন। তিনি নিজে একটি সময় নির্ধারণ করেন, উপস্থিত থাকতে বলেন। আমি সেই সময়ের এক ঘণ্টা আগেই পৌঁছাই। পরে বুঝতে পারি তিনি দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন এবং তার নিরাপত্তা দিতে তার সঙ্গে সীমান্ত পর্যন্ত যাওয়ার কথা বলেন।

এরপর তিনি আমাকে এক লাখ (গুনে দেখিনি) কম বেশি হতে পারে, টাকা হাতে দিয়ে বলেন তোমার জন্য এটা। আমি তা নিতে অস্বীকৃতি জানাই। বলি আমি যদি এটা নেই আপনি মানুষকে বলবেন আমাকে আপনি টাকা দিয়েছেন কিন্তু কত টাকা তা হয়ত বলবেন না, এতে নেতা কর্মীরা আমাকে ভুল বুঝবে। এই কথায় তিনি আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হন এবং সিদ্ধান্ত বদলে আমাকে না নিয়ে দ্রুত বলেন, এখন বিদায় হও।

আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিত আপনি পালানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। আমি তখন রেগে বলি আপনি আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ফেলে রেখে পালাতে পারেন না আগে একটা দিকনির্দেশনা দিন, একটা মিটিং অত্যন্ত করেন। তখনই রাগ-বিতণ্ডা শুরু হয়।

এরপর তিনি লিফটে ঢুকে পড়েন আমিও সাথে সাথে লিফটে উঠে যাই, লিফটের ভেতরে তিনি আমাকে ভয় দেখান এবং অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেন তখন সেখানে আমাদের মধ্যে সামান্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তাকে এখনই না যেতে বারবার অনুরোধ করি।

লিফট থেকে নেমে দেখি তার আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের একটি দল লিফটের নিচে অপেক্ষা করছে। লিফটের দরজা খোলা মাত্র তারা আমাকে ঘিরে ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করে। আমি তাকে থামানোর অপ্রাণ চেষ্টা করি।

thumbnail_1000130154

আপনার মুখে প্রায় ইসলামের দোহাই শুনেছি অথচ আপনার মেয়ে লন্ডনের একজন খ্রিষ্টান ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করে হারামের জীবন যাপন করছে এটা দ্বিমুখী চরিত্রের চূড়ান্ত রূপ নয় কি? আপনার ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে কথিত ইসলামী মূল্যবোধের এই সংঘর্ষিকতার কি কোনো ব্যাখ্যা আছে?

আপনার বক্তব্যে প্রতিনিয়ত দ্বিচারিতা অসংলগ্নতা ও মিথ্যাচার ফুটে উঠেছে। আপনি এলাকায় একমাত্র আওয়ামী লীগার হিসেবে  নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সব কাজই করেছেন, এই অপপ্রচার তারই ধারাবাহিক কাজ।

আমার বড় ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে নৌকার মনোনয়ন পেলে, তার প্রতিপক্ষকে জিতিয়ে আনতে আপনি ও আপনার ভাই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহায়তা করেছেন। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। নৌকাই বিপুল ভোটে জয় পায়। আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি। ভবিষ্যতে আমরা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে যেন না পারি, তার জন্য এই দুঃসময়ে এসেও এত বড় মিথ্যাচার এতদিন পরে এসে আপনি করছেন! যেখানে রাজনৈতিকভাবে আপনাকে এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করতে আমার সর্বোচ্চ শ্রম আপনার পেছনে দেওয়া। তার প্রতিদান এই!

আরও পড়ুন

এবার দেশ ছেড়ে পালানোর ‘নাটকীয়’ বর্ণনা দিলেন শ ম রেজাউল

অসংখ্য মানুষ আমাকে প্রশ্ন করছে, সেজন্য ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হলাম। আপনি কথায় কথায় দুর্নীতি করেন নাই বলে দাবি করেন। এ তথ্যগুলো এবার জনগণকে জানাবার সময় এসেছে। অপেক্ষা করুন....!

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম তাপস (চৌধুরী) গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ss-sm-rezaul-karim-with-wife-19022025

উল্লেখ,  ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতার মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। কিন্তু দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে পরিচিত এক ছাত্রলীগ নেতা তাকে অপহরণ করে ১২ কোটি টাকা আদায়ের চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন। তাকে তুলে নিতে নানান কৌশল ও ধস্তাধস্তি হলেও ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান তিনি। পরে সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়েন।

ইউটিউব চ্যানেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ ম রেজাউল করিম ৫ আগস্টের দিন ছাত্র-জনতার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ও দেশত্যাগের ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। এ সময় নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপ‌তি ত‌রিকুল ইসলাম চৌধুরী তাপসের বিরুদ্ধে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ আনেন তিনি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর