- আপাতত হার্ডলাইনে যাবে না বিএনপি
- নির্বাচন প্রশ্নে চাপে রাখার কৌশল
- ড. ইউনূসের সম্মানজনক বিদায় চায় বিএনপি
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য আমলে নেওয়ার পরামর্শ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তবর্তীকালীন সরকারকে শুরু থেকে সহযোগিতা করে আসছে বিএনপি। বারবার দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসা বিএনপি করিডোরসহ কিছু বিষয়ে প্রতিবাদ জানালেও সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরেনি। হঠাৎ রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ইঙ্গিত, আগামী নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও সরকার যাতে বিব্রত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। বরং দলটির নীতিনির্ধারকদের আশা, নির্বাচন নিয়ে সরকার দ্রুতই সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে ড. ইউনূস সম্মানজনক বিদায় নেবেন।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নেতারা বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের জন্য সরকারকে চাপে রাখলেও বিএনপি চায় না তাদের কোনো কার্যক্রম ঘিরে দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক।
নেতারা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন, সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচার ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে পরস্পরের মধ্যে চিড় ধরা জাতীয় ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নেবে সরকার।
ইতোমধ্যে বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতের পক্ষ থেকেও সরকারকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে ড. ইউনূসের পদত্যাগ করার ভাবনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর রাজনীতির ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ নিয়েও বিএনপি সতর্ক রয়েছে। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা ড. ইউনূসের পদত্যাগ চান না। বরং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সুন্দর সমাধানের লক্ষ্যে তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন দলটির নেতারা। শনিবার সন্ধ্যা (২৪ মে) তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ড. ইউনূসের পদত্যাগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই। বিএনপি তার পদত্যাগও চায় না। তবে ড. ইউনূস স্বেচ্ছায় চলে যেতে চাইলে জাতি বিকল্প বেছে নেবে।
সালাউদ্দিন আরও বলেন, ড. ইউনূসের পদত্যাগে কোনো শূন্যতা তৈরি হবে না। তবে বিএনপি চায় সম্মানের সঙ্গে ড. ইউনূস থাকুন এবং নির্বাচনি রোডম্যাপ দিয়ে জাতিকে সংকট থেকে মুক্ত করুন।
স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানেরও ভাষ্য একই রকম। যদিও পদত্যাগের খবর নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন তিনি।
ঢাকা মেইলকে সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘মানুষের সত্যিকারের চাওয়া হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মর্যাদাপূর্ণ বিদায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, সত্যিকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ রূপান্তর নিশ্চিত করার জন্য তার ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জনগণ তার সফল বাস্তবায়ন দেখতে চায়।’
এদিকে গত সপ্তাহে দুটি ইস্যুতে বিএনপিকে হার্ডলাইনে দেখা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের শপথ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা সৌম্য হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে বিএনপি। টানা কর্মসূচিতে জনদুর্ভোগের কারণে মানুষের তীব্র সমালোচনার মধ্যেও কর্মসূচি থেকে পিছু হটেনি দলটি।
দলীয় সূত্র বলছে, নানা কারণে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যে শঙ্কা সে কারণেই রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন নেতাকর্মীরা। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েই এমন অবস্থান নেন তারা।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, টানা এক সপ্তাহ নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সরকারকে বার্তা দিতে চেয়েছে দলটি। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ‘তালবাহানা’ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে তাও বোঝানোর চেষ্টা করেছে বিএনপি।
জানা গেছে, রাজপথে এমন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা বিএনপির সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, তারা এই সরকারকে কোনোভাবেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চায় না।
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতার বিষয়টি আরও কিছুদিন নানা ফোরামে তুলে ধরতে চায়। আসছে ঈদুল আজহার পর তাদের দলটির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও নির্বাচনের জোরালো দাবি তুলে ধরা হবে।
সরকার আন্তরিক হলে আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট করবে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতারা।
সবশেষ গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা কমপক্ষে আরও দুই মাস সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়ের পরে নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলে কিংবা নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হলে তখন রাজপথের কর্মসূচির কথা ভাববে বিএনপি।
অন্যদিকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যে বক্তব্য রেখেছেন তাকে যৌক্তিক বলে মনে করছে বিএনপি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তার বক্তব্য ও অবস্থানকে সরকারের আমলে নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন বিএনপি নেতারা।
বিইউ/জেবি