আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটি মনে করছে যতই দিন গড়াচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা ততই বাড়ছে। ফলে ধোঁয়াশা কাটিয়ে নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব কী তা স্পষ্টভাবে বুঝতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। দলটি প্রত্যাশা করছে, এই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে ভোট নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সেটা কেটে যাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুপুর ১২টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির মহাসচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাক্ষাৎ করবেন।
বিজ্ঞাপন
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, ‘এবার দলের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়বস্তুটি খানিকটা ভিন্ন। আমরা মূলত নির্বাচন নিয়ে সরাসরি কথা বলতেই যাচ্ছি। কারণ, গতবার আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম, তখন তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরাও তার কথায় আশ্বাস্ত হয়েছিলাম কারণ প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১৮ মাস সময় যথেষ্ট।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা তখন প্রধান উপদেষ্টাকে বলে এসেছিলাম, নির্বাচনসংক্রান্ত আপনার দেওয়া এই রোডম্যাপের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে জাতির সামনে তুলে ধরবেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এমন কোনো উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয় যে, জনগণ নাকি তাদের পাঁচ বছরের জন্য চায়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবও বলেছেন- ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ফলে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকারের মনোভাব আমরা সুনির্দিষ্টভাবে জানা ও বোঝার চেষ্টা করবো। সে অনুযায়ী তাকে (প্রধান উপদেষ্টা) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য আমরা আহ্বান জানাবো।’
সাক্ষাতে নির্বাচন ছাড়াও আর কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ছোট সংস্কার বা বড় সংস্কার বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেটাও আমরা জানতে চাইব। সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। বিএনপিও সংস্কারের কথা বলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠকও হচ্ছে। সংস্কার প্রক্রিয়া চালু থাকা অবস্থায় নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া যাবে না, বিষয়টা এমন তো হতে পারে না!’
আরও পড়ুন
দেশে ফিরে ফখরুল বললেন ‘নির্বাচনী রোডম্যাপের সমাধান হবে’
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সরকারে ভেতরে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা শক্তভাবে বসে আছে। কারা দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত, সুযোগ পেলেই দেশের ভেতরে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমরা বারবার তাদের অপসারণের ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এ বিষয়েও সরকারের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাছাড়া এখনো বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অসংখ্য মামলা ঝুলছে। এ বিষয়েও কোনো সুরহা এখন পর্যন্ত হয়নি।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’ ১১৯ কর্মকর্তাকে সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এমনটা তো হওয়ার কথা না। বিষয়গুলোতে জাতির কাছে ভুল বার্তা যায়। আমরা মূলত এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।’সূত্র: বাসস
জেবি