বিগত সরকারের সময়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, মেয়র, পুলিশের আইজিপিসহ বিভিন্ন আমলাদের অনেকে এখন কারাববন্দি। তাদের বন্দি জীবন কেমন কাটছে, সেখানে কী কী খাচ্ছেন তারা, কীভাবে তাদের সময় কাটছে —এ নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে কৌতুহল। আগামীকাল ঈদুল ফিতরে তারা সেখানে কীভাবে দিনটি কাটাবেন, কেমন মর্যাদা পাবেন এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান অনেকেই।
যারা বিভিন্ন স্থানে গেলে ভিআইপির মর্যাদা পেতেন সেই ব্যক্তিদের অনেকে এখন কারাগারে সাধারণ জীবন কাটাচ্ছেন। আগামীকাল ঈদুল ফিতরের দিনটি তাদের সাধারণ বন্দিদের মতোই কাটবে। তাদের জন্য বাড়তি কোনো আয়োজন থাকবে না। এর মাঝে স্বজনরা আসবেন, দেখা করবেন কিন্তু বাড়িতে তৈরি কোনো খাবার তারা খেতে পারবেন না।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ বিভিন্ন কারাগারে বন্দিদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
কারা সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত বিগত সময়ে মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, আইজিপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা ও রাজনৈতিক নেতা মিলে ১২৫ জনের বেশি বন্দি আছেন। এদের অধিকাংশই বন্দি আছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এসব বন্দির অধিকাংশের স্বজনরা রমজানে তাদের জামিন করানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময়ে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক শিল্পমন্ত্রী কালাম আহমেদ মজুমদার, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা, সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দন সরকার, সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা, সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এসএম মাইনুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইডি মশিউর রহমান, সাবেক এডিসি জুয়েল রানা, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি-উত্তর) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আইজিপি থেকে শুরু করে সচিবরা কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ডিভিশনের জন্য কয়েকবার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তারা কেউ ডিভিশন পাননি। ফলে সাধারণ বন্দির মতোই তারা খাবার খাচ্ছেন। তাদের জন্য আলাদা কোনো সুযোগ রাখেনি কারা কর্তৃপক্ষ। অন্য বন্দিদের সঙ্গে রুটি, কম্বল ও খাবার পান। তাদের নিয়মিত গড় হাজিরা দিতে হয়। কারাগারের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হচ্ছে। তারা প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী পড়ার জন্য একটি করে পত্রিকা পান। এছাড়া আর কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। সাবেক ভিআইপিরা অন্যদের সঙ্গে আড্ডা বা গল্প করার সুযোগ না থাকায় তারা নিজেরাই গল্প গুজব করে সময় কাটান।
বিজ্ঞাপন
ঈদের দিন যা খাবেন আওয়ামী লীগের কারাবন্দি নেতারা
কারা সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ঈদের সময় কারাবন্দিদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। ঈদের দ্বিতীয় দিন বিশেষ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি ঈদের দিন স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে পাঁচ মিনিট বেশি সময় ধরে ফোনে বন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। তবে ঈদের দিন স্বজনরা কারাবন্দিদের সাক্ষাত করতে পারলেও খাবার খাওয়াত পারবেন না। ঈদের দ্বিতীয় দিন বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে আসতে পারবেন। তবে নির্ধারিত নিয়ম মেনে খাবার কি কি হবে তা ঠিক করে দেবেন কারা কর্তৃপক্ষ।
কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এ কে এম মাসুম জানান, ঈদের দিন সকালে মুড়ি, পায়েস অথবা সেমাই থাকবে কারাবন্দিদের জন্য। দুপুরে গরুর মাংস, মুরগির রোস্ট, ডিম, কোমল পানীয়, সালাদ ও পান-সুপারি পাবেন। যারা গরুর মাংস খাবেন না, তাদের জন্য রাখা হবে খাসির মাংস। রাতে সাদা ভাতের সঙ্গে রুই মাছ ও আলুর দম। সেইসঙ্গে থাকবে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব সাবেক ভিআইপি ব্যক্তিরা আগে সকাল সকাল না উঠলে এখন কারা নিয়ম অনুযায়ী ভোরে ওঠেন। নামাজ, গোসল, খাওয়া শেষে লাইনে দাঁড়িয়ে সব কার্যক্রমে সহায়তাও করেন। তবে ডিভিশন না পাওয়ায় বাড়তি সুবিধা না পাওয়ায় অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ আবার অসুস্থতার কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে জীবন কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) জান্নাত উল ফরহাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, যারা গত আট মাসে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন তাদের কেউ ডিভিশন পায়নি বলে জানি। তবে তারা সাধারণ বন্দিদের মতোই খাবার, পোশাক ও অন্য সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের কাউকেই বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
এছাড়াও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার বলেন, কেউ ডিভিশন পায়নি। কারা নিয়ম অনুযায়ী তাদের স্বজনরা দেখা-সাক্ষাত করছেন। ঈদের দিন অন্য বন্দিরা যা খাবেন তারাও তা খাবেন। তবে প্রতি বছর ঈদকে কেন্দ্র করে যে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয় সেই আইটেমই এবারও থাকছে।
এমআইকে/এমএইচটি