মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

আওয়ামী লীগের মধু খেয়ে তিনি এখন বিএনপিতে!

জেলা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

আওয়ামী লীগের মধু খেয়ে তিনি এখন বিএনপিতে!
আবুল খায়ের আখন্দ টিটু। ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের আখন্দ টিটু ক্ষমতার পালাদবলের সাথে একাধিকবার রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে বিতর্কিত হয়েছেন। ২০০৯ সালের আগে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে থাকলেও পরে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবার বিএনপিতে ফিরেছেন টিটু মাস্টার। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন এবং দলের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য পদও পেয়ে গেছেন।

স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যখন যে দলের সরকার ক্ষমতায় আসে টিটু মাস্টার সেই দলেরই লোক হয়ে যান। ২০০১ সালের বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। দলীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কামিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। 


বিজ্ঞাপন


পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টিটু মাস্টার বনে যান পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগ নেতা। গত সাড়ে ১৫ বছরে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা, চাকরির নিয়োগ বাণিজ্য, ঠিকাদারি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি থেকে শুরু করে ক্ষমতার সবটুকু স্বাদই তিনি ভোগ করেছেন। হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। পাশাপাশি আওয়ামী ক্ষমতার পুরো সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট, মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ নির্যাতনের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছিলেন টিটু মাস্টার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে ছাত্র জনতার ওপর হামলা চালাতে অর্থ খরচ করে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মাঠে নামেন টিটু মাস্টার। গত বছরের ৪ আগস্ট অস্ত্রধারীদের সাথে দেখা যায় টিটু মাস্টারকেও। এসব ছবি ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর খোলস পাল্টে ফের বিএনপি নেতা বনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন টিটু মাস্টার। বিএনপির নানা অনুষ্ঠানে-মিছিলে প্রথম সারিতে তাকে দেখা গেছে ব্যানার হাতে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন নেতাদের ম্যানেজ করে। তবে এতে বিএনপি ও এর অংঙ্গ সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে বারহাট্টা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুন জানান, টিটু মাস্টার বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি নিধনে কাজ করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে মিলে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। সাবেক এমপি আশরাফ আলী খান খসরুর কাছের লোক হওয়ার সুবাদে অবৈধভাবে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়েছেন। এছাড়াও চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। এখন বিএনপির কিছু নেতার ছত্রছায়ায় আবারো বিএনপিতে পুনর্বাসিত হচ্ছেন। যার জেলহাজতে থাকার কথা তিনি এখন মিটিং মিছিল করছেন।

তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর পরেও জেলা ও উপজেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।


বিজ্ঞাপন


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, টিটু মাস্টারের মতো জঘন্য লোকজন আবারো দলে জায়গা পেলে এটা কলঙ্ক ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পটপরিবর্তনের পর নেতাদের ম্যানেজ করে আবারও বিএনপিতে ঢুকেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে যারা তাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন নেতাদের অনুরোধ জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন

বিএনপিতে ‘আশ্রয়’ পাচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন!

রাজশাহীতে পুলিশের ‘সহযোগিতায়’ প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ!

একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আওয়ামী লীগে থেকে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন, তিনি কীভাবে দলে ফেরেন?’ এমন বহুরুপী রাজনীতিবিদকে বিএনপিতে তারা চান না বলেও জানান।

বারহাট্টা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিক আহম্মেদ কমল এ ব্যাপারে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘টিটু মাস্টার এক সময় বিএনপির সহ-সভাপতি থাকলেও গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগে ঢুকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এখন তিনি আবার বিএনপিতে ঢোকার চেষ্টা করছেন। দলের কিছু নেতাকে ম্যানেজ করে তিনি এমন সুযোগ নিতে চাইছেন। তবে নেতাকর্মীরা টিটু মাস্টারকে বিএনপিতে আর মেনে নিতে চাইছে না।  ভুলে আহ্বায়ক কমিটিতে নাম চলে এসেছে টিটু মাস্টারের।  বিষয়টি জানার পর তাকে আর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কোনো কমিটিতে রাখা হয়নি।’

তবে আবুল খায়ের আখন্দ টিটু সব অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি আগেও বিএনপিতে ছিলাম, এখনো বিএনপিতেই আছি। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তাদের সাথে কিছুটা মিশতে হয়েছে। এই আরকি!’

বিএনপি দমানোর আন্দোলনে অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ছবিতে দেখা গেলেও এসব ছবি মিথ্যা বলে দাবি করে তিনি।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশতাক আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘টিটু মাস্টার গত সাড়ে ১৭ বছর আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিশে অনেক কিছু করেছেন, এটা সত্য। এখন তিনি বিএনপিতে আসতে চাইছেন। তাকে দলে রাখার আমি কেউ না। তাকে দলে রাখবে কি রাখবে না তা জেলাসহ উপরস্থ নেতারা ভেবে দেখবেন।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকে বিএনপিতে ঢোকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কারও পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। টিটু মাস্টারের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর