সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

কেন্দ্র-তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, কীভাবে হবে আ.লীগের হরতাল-অবরোধ?

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ ছয় মাস পর আবারও আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ১৬ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচির কথা জানিয়েছে, যার লক্ষ্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ। এছাড়া, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে লিফলেট বিতরণ এবং বিক্ষোভ-সমাবেশও করার কথা রয়েছে তাদের।

দলটির ‘পলাতক’ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলছেন— এই অবৈধ সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।


বিজ্ঞাপন


এই কর্মসূচি ঘোষণা করার সময়ে আওয়ামী লীগ এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে দলের শীর্ষ ও তৃণমূল নেতাদের অনেকেই বর্তমানে কারাগারে অথবা পলাতক। দলের সভাপতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত ছয় মাস ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। ৫ আগস্টের পর অনেক নেতাকর্মী মামলা, হামলা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, আওয়ামী লীগের জন্য রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের এই আন্দোলন ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, বরং জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হচ্ছে। দলের মতে— বর্তমানে দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অন্য নানা কারণে সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট এবং এই অসন্তোষই তাদের আন্দোলনের জন্য উসকানি দিচ্ছে। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এই আন্দোলন জনগণের দাবি আদায়ের জন্য। মানুষ এখন এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়।

আরও পড়ুন
আ.লীগের কর্মসূচি গায়ে মাখছে না রাজনৈতিক দলগুলো 

তবে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ নেতারা গ্রেফতার, নির্যাতন বা মামলা মোকাবেলার ভয়ে এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে চাইছেন না। তাদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে না।’ তাদের বক্তব্য, ‘দেশের বাইরে বসে নেতারা তো কর্মসূচি দিয়েই নিরাপদে আছেন, তাদের মাঠে নামার প্রয়োজন নেই। আমাদের ওপরেই সব কিছু আসবে।’

আওয়ামী লীগের কিছু নেতার মতে— এই কর্মসূচি দলের মনোবল বাড়াতে এবং তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে সহায়ক হতে পারে। জেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেন, এতে কর্মীদের উৎসাহ বাড়বে, দলও শক্তিশালী হবে’। 

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি আওয়ামী লীগ আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়, তারা তা প্রতিহত করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি রাস্তায় আসে, জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। তাদের রাজনীতি আর এই দেশে করতে দেওয়া হবে না।’

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ যদি এই আন্দোলন চালিয়ে যায়, তবে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, কোনো দেশই খুনি ও দুর্নীতিবাজদের পুনরায় ক্ষমতায় আসার সুযোগ দেয় না। আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।’

আরও পড়ুন
আ. লীগ নিষিদ্ধ করে দ্রুত নেতাকর্মীদের বিচার চাইলেন হাসনাত

এছাড়া, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এই মামলায় বেশ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন, আর শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করতে পারলে, তা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কিছু নেতার মতে— আন্দোলন সফল করতে হলে সিনিয়র নেতাদের প্রথমে মাঠে নামা উচিৎ, তবেই তৃণমূলের কর্মীরা সাহস পাবে। তবে, কিছু নেতা মনে করেন, দলীয় কর্মসূচির সফলতা দেশের মানুষের মধ্যে শক্ত সমর্থন পাওয়ার ওপর নির্ভর করবে। ‘আমরা সাধারণ মানুষের পাশে আছি, তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে,’ বলেছেন বাহাউদ্দিন নাছিম। সূত্র: বিবিসি

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর