বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না জানিয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা হবে। এর সঙ্গে জড়িত যারাই থাকুক তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় পূর্বলন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত এক দোয়া-মহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ডা. জাহিদ বলেছেন, আরাফাত রহমান কোকো কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি ক্রীড়াঙ্গণে একজন মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তার সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট সারা পৃথিবীতে একটি পর্যায়ে চলে এসেছে। এই অবদান তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া হলে সেটি ইতিহাসকে বিকৃত করা হবে।
ডা. জাহিদ বলেন, আরাফাত রহমান কোকোকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার মৃত্যুকে আমরা কখনই স্বাভাবিকভাবে নেইনি এবং এখনও নিচ্ছি না। কাজেই আমরা এটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, এর মূলে রহস্য কী আছে। সে অনুযায়ী এর সঙ্গে সম্পৃক্ত যারাই আছেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সব সময়ই চেষ্টা করবো।
এসময় দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষ জিয়া পরিবারের প্রতি যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন এজন্য তিনি কৃতজ্ঞতাও জানান।
ডা. জাহিদ আরও বলেন, এখানে অনেকেই আছেন যারা নিজ কানে শুনেছেন ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। ২৬ এবং ২৭ মার্চ ১৯৭১ আমরা অনেকেই শুনেছি। কাজেই যারা আমরা শুনেছি তারা জানি, যারা পালিয়ে গেছে তারা দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পালিয়ে গেছে, আবার কেউই আত্মসমর্পণ করেছেন। আর যে মানুষটি নিজের দুটি নাবালেগ শিশুর কথা ভুলে গিয়ে দেশ প্রেমের কথা চিন্তা করে নিজের সহধর্মিণীর কথাও মনে রাখেননি। শুধু সামনে এগিয়ে গেছেন দেশ এবং দেশ প্রেমে সাড়া দিয়ে। নিজের পরিবারকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যে মানুষটি অস্ত্রহাতে রনাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন সেই মানুষটি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে ঘোষণা হয়েছে, আর সিলেটে প্রথম সেক্টর কমান্ডরদের মিটিং হয়েছে জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে সেখানেই প্রথম ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হয়েছেন জিয়াউর রহমান। আবার সেখানেই জেড ফোর্স গঠন করা হয়েছে, সেটার কমান্ডারও জিয়াউর রহমান। কাজেই বিএনপি করবেন গর্ব করবেন। আপনাদের ইতিহাস পালিয়ে যাওয়ার নয়, সামনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
ডা. জাহিদ আরও বলেন, আমরা যেমন আবু সাঈদের কথা ভুলবো না, মুগ্ধের কথা ভুলবো না ঠিক একইভাবে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের কথাও ভুলবো না। গত ১৫টি বছর গণতন্ত্র পুরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করেছে, তাদের সবাইকে যার যার সম্মান দিতেই হবে। কাজেই বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না।
ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ক্ষমতার মসনদে বসে রাজনৈতিক দল করার কেউ কেউ চেষ্টা করবেন আবার চুপচাপ করে তাল দেবেন অন্যদেরকে রাজনৈতিক দল করার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা নিয়ে ডিস্টিভিউট করবেন, সংগঠক হবেন ভালো কথা কিন্তু রাজনৈতিক দল করতে হলে সব কিছু ছেড়ে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো মাঠে আসুন, কর্মসূচি দিন। জনগণকে সংগঠিত করুন। জনগণ যাকে ভালো মনে করবে তাকে গ্রহণ করবে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই নিজেদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। নিজেদেরকে অতি বা প্রতি বিপ্লবী ভাবার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন বিএনপির জন্ম জনগণের মধ্য থেকেই হয়েছে। খালেদা জিয়া এক দিনেই তৈরি হননি। আগুনে পুড়তে পুড়তেই আজকের বেগম খালেদা জিয়া।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ মালেক বলেন, খালেদা জিয়া তো সুস্থ অবস্থায় জেলে গেছেন। তাকে তিলে তিলে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর বিচার করতেই হবে। আর এখন ছাত্ররা দেশ চালাচ্ছেন। ছাত্ররা দেশ চালালে শিক্ষকরা কী করবেন?
অনুষ্ঠানের পরিচালনা করেন আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কোঅর্ডিনেটর আবু নাছের শেখ ও শরফরাজ শরফুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফির আরও বক্তব্য দেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ প্রমুখ।
বিইউ/এএস

