রোববার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ভোট নিয়ে বিএনপির এত তাড়াহুড়া কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ভোটের জন্য উন্মুখ বিএনপির তৃণমূল। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই নির্বাচনের ব্যাপারে তাড়া দিয়ে আসছে টানা প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি। দলটি অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করলেও দ্রুত ভোটের ব্যাপারে তাড়া অব্যাহত রেখেছে। এতদিন সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করে আসা দলটি এবার চলতি বছরের জুলাই-আগস্টেই নির্বাচন চায় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এই সময়েই নির্বাচন করা সম্ভব বলে মনে করে দলটি। সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব না এলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি একাধিকবার সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের দুটি সময়সীমার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর একটু বিস্তারিত পরিসরে সংস্কার করতে চাইলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে সরকারের এমন বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি। তারা সরকারের কাছে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। এমনকি এই দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।


বিজ্ঞাপন


এর মধ্যেই সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুস্পষ্টভাবে দাবি করা হয়, চলতি বছরের মাঝামাঝিতে তারা নির্বাচন চান। পরে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে তাদের দাবির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা গণতন্ত্রের সবচেয়ে ইম্পোর্টেন্ট বিষয়। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেন আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।

আরও পড়ুন

নজর রোডম্যাপে, ভোটের দাবিতে মাঠে নামার চিন্তা বিএনপির

স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার যে বক্তব্য ছিল, এই বছরের শেষের দিকে অথবা পরবর্তী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে, এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গতকাল দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই।


বিজ্ঞাপন


ফখরুল বলেন, নির্বাচন সংস্কারসংক্রান্ত যে কমিটি এটার রিপোর্ট এসে যাবে কালকে। সুতরাং আমার মনে হয় না যে, এটা আরও বিলম্বিত করার কোনো প্রয়োজন আছে। কারণ যত বিলম্ব হচ্ছে তত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। বারবার করে বলছি আসলে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

BNP2

বিএনপির ওই সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরেই আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির আগস্টে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি নিয়ে করা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোনো মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের প্রস্তুতিটা হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় যে উইনডোটা দিয়েছেন সেই উইনডোটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

বিএনপির কেন এত তাড়াহুড়া?

তবে বাহ্যিকভাবে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের যে কারণই বলুক, নেপথ্যেও কিছু কারণ রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে বিলম্ব করাকে নিরাপদ মনে করছে না বিএনপি। তারা মনে করছে, দ্রুত সময়ে নির্বাচন হলে মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন বিএনপিই পাবে। দিন যত যাবে তত সমর্থন হারানোর ভয় আছে। দলীয় বিশৃঙ্খলাও বাড়তে থাকবে। তাছাড়া পতিত আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সম্ভাবনাও দেখা দেবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। তারা ভোটে এলেও খুব ভালো করার সম্ভাবনা কম।

আরও পড়ুন

চলতি বছরের মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব: ফখরুল

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর টানা ১৫ বছর ধরে মামলা-হামলার শিকার হওয়া বিএনপি অনেকটা নির্বিঘ্ন সময় পার করছে। তবে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে যাচ্ছেন নানা অপকর্মে। প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে এসব সংবাদ উঠে আসছে। বিএনপির হাইকমান্ড শক্ত অবস্থান নিয়েও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে দলটির ইমেজে ছাপ পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবে এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিএনপি বিশাল দল, হাজার নেতাকর্মী, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা তো ঘটবেই। কিন্তু অঘটনের সংখ্যা যখন অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে তখন চিন্তিত না হয়ে পারা যায় না। বিএনপিতেও এখন সেই দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে। দিন যত যাবে দলের নেতাকর্মীরা জনগণ থেকে তত দূরে সরে যাবেন বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মূলত এই কারণেই দ্রুত সময়ে নির্বাচন আদায় করে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি।

সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন ইস্যু নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটে নেতাদের মতামত নিয়েছে দলটি। সংস্কারে বেশি সময় না নিয়ে অবিলম্বে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা চান নেতারা। জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপের ঘোষণা দেওয়া না হলে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। কর্মসূচির লক্ষ্য হবে নির্বাচন ইস্যুতে জনমত তৈরি করা এবং সরকারের ওপর নির্বাচনী চাপ সৃষ্টি করা। এজন্য সারাদেশেই কর্মসূচির পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

BNP3

বিএনপি কেন দ্রুত নির্বাচন চায় সেটার ব্যাখ্যা করে দলের যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকে আমরা অস্বীকার করছি না। তারা সংস্কার করবে, কিন্তু আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছি। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কখন কোন বিষয়টি সংস্কার করা প্রয়োজন সেটা সময়ই বলে দেয়। আমরা নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছি। এতে অনেক লোকের জীবন দিতে হয়েছে। শুধু নির্বাচনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তো এত কিছু হয়েছে। দেশের মানুষ দ্রুত নির্বাচন প্রত্যাশা করে, এজন্য আমরাও দ্রুত নির্বাচন চাই। পাশাপাশি সংস্কার চলছে, চলবে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না অবশ্য বলছেন, নির্বাচনের জন্য সরকারকে কোনো চাপ তারা দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করেও নির্বাচন করা সম্ভব এবং সেটা দ্রুতই সম্ভব। এজন্য আমরা কোনো চাপ দিচ্ছি না। একটা গ্রহণযোগ্য, কোয়ালিটি নির্বাচন করার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো আমরা বলবে।

সরকার নির্বাচনের যে সময় জানিয়েছে তাতে কোনো সমস্যা ছিল না বলে মনে করেন বিএনপির সমমনা এই দলের শীর্ষ নেতা।

আরও পড়ুন

সংস্কার-নির্বাচনের দ্বৈরথে নতুন বছর

এদিকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরাও দ্রুত নির্বাচন চাই। কারণ মানুষ দীর্ঘ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। আমরা চাই একটা স্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ। সংস্কারের নামে নির্বাচনে কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার বর্তমান সরকার করবে, বাকি সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার সংসদের মাধ্যমে।’

জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর