শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘পুরনো কৌশলে’ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়ও ব্যর্থ আ.লীগ!

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

‘পুরনো কৌশলে’ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়ও ব্যর্থ আ.লীগ!
জিরো পয়েন্ট এলাকায় এসে মারধরের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ক্ষমতা হারানোর তিন মাসেও তারা ঘুরে দাঁড়াতে সফল হননি। সবশেষ গতকাল ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করেছিল দলটি। এক্ষেত্রে পুরনো একটি কৌশলও অবলম্বন করা হয়েছিল। তবে তাতে তেমন কোনো ফল আসেনি। প্রকাশ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক দিয়ে জিরো পয়েন্টে আওয়ামী লীগ ‘জিরো পারফরম্যান্স’ করেছে বলেও মনে করেন কেউ কেউ।

এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সামনে হতাশা আরও ঘনীভূত হয়েছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আরও চাপে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গ্রেফতার হয়েছেন অর্ধশতাধিক। অনেকে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করলেও নতুন করে আবার আত্মগোপনে চলে গেছেন।


বিজ্ঞাপন


আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সময়ও বেকায়দায় পড়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ছিলেন কারাগারে। দলের ভেতরে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল একটি সংস্কারবাদী গ্রুপ। শেখ হাসিনার মুক্তি ও নির্বাচন আদায় প্রশ্নে রাজপথে নামলেই তাদের শিকার হতে হতো মামলা-হামলার। তখন হামলা-মামলা নিশ্চিত জেনেও নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তাতে সাড়াও দিয়েছিলেন তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। সেই হামলার ছবি এবং গণমাধ্যমে উঠে আসা বিভিন্ন তথ্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে সহমর্মিতা কুড়িয়েছিল আওয়ামী লীগ। যার ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরে দলটি।  

এবারও একই পথে হাঁটতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপ সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে। সেখানে শোনা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশ দিচ্ছেন- শহীদ নূর হোসেন দিবসে সদ্য বিজয়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে আসতে। মিছিলে বাধা দেওয়া হলে সেই ছবিও যেন ভালোমতো তুলে রাখা হয়। ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি অবমাননা করা হয়েছে’ সেটা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী।

League5


বিজ্ঞাপন


আওয়ামী লীগ সভাপতির সেই নির্দেশনা মতো দলটির নেতাকর্মীদের অনেকেই নামার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল কঠোর অবস্থানে। সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দলগুলোও যোগ দেয়। এতে জিরো পয়েন্টের কাছেই ভিড়তে পারেননি আওয়ামী লীগের কেউ। যাদের পরিচয় মিলেছে তাদেরই গণধোলাই দিয়েছে বিরোধী পক্ষের লোকজন। নিজেদের নেতাকর্মীদের মার খাওয়ার ছবি আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে তুলে ধরা হয়েছে। এসব ছবি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। তবে তাতে খুব একটা সাড়া মিলছে না।  

আরও পড়ুন

দলীয় নির্দেশনা মানলেন না আ.লীগের নেতাকর্মীরা!

ট্রাম্প নিয়ে ‘ট্রাম্প কার্ড’, কল রেকর্ড-কর্মসূচি কি হাসিনার নতুন খেলা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৭ আর ২০২৪ এক নয়। এবার দলটি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে গণঅভ্যুত্থানে। প্রায় দেড় হাজার মানুষের রক্তের দাগ লেগে আছে তাদের গায়ে। নিপীড়িত হওয়ার কথিত কিছু ছবি দিয়ে তারা নিজের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে পারবেন না। জনসাধারণের মন থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। রোববার সাধারণ মানুষও ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতি মারমুখী। ফলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো এতটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

League3

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের একজন সহ-সভাপতির সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেত্রী জানান, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে এখন যে কেউ চাইলেই যোগাযোগ করতে পারছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তারও কথা হয়েছে। দলীয় প্রধান তাদের জিরো পয়েন্টে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং নির্যাতিত হলে সেই ছবিটি কাজে লাগানোর কথাও বলেছিলেন। তিনি রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে কয়েকজন মেয়েও জোগাড় করেছিলেন কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য। তবে পরিস্থিতি সেখানে যাওয়ার মতো ছিল না বলে তিনি আর সাহস করেননি।  

কর্মীরা সাহস করলেও ছিলেন না নেতারা!

রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মূলত ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের দখলে। এর মধ্যেই আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ঠিক বিপরীতে একজন হঠাৎ 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে ওঠেন। এ সময় সবার ক্ষুব্ধ চোখ পড়ে তার ওপর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উপস্থিত লোকজন স্লোগান দেওয়া ব্যক্তির ওপর চড়াও হন। এ সময় ব্যাপক মারধরের শিকার হন ওই ব্যক্তি। পরে বিএনপির কর্মীরা ডেকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যদের। পুলিশ তাকে উদ্ধার ও আটক করে।

League2

এক ঘণ্টা না পেরোতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে বের হয়ে এক ব্যক্তি জিরো পয়েন্টের দিকে যাচ্ছিলেন। পেছন ফিরে হঠাৎ 'জয় বাংলা' স্লোগান দেন তিনি। স্লোগান দিয়েই আবার হাঁটা শুরু করেন। এ সময় তার ওপরও চড়াও হয় জনতা।

মিরপুরের রূপনগর বিএনপির কর্মী সাজ্জাদুল ইসলাম এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, 'দেখেন, কেউ জানে ও আওয়ামী লীগ? ইচ্ছা কইরা মাইরডা খাইতে আইছে না? ওরে স্লোগানটা দিতে কইলো কে!'

আরও পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুতির আগে হাসিনা-সাহাবুদ্দিনের সম্পর্কে অবনতি, নেপথ্যে কী?

বিএনপি নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখরিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়

জিরো পয়েন্ট মোড়ে এদিন আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন কর্মী। সব মিলিয়ে এদিন ১৩ থেকে ১৪ জন আওয়ামী লীগ কর্মী পরিচয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন। এমনকি নারী কর্মীদেরও হেনস্তা করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সেদিন দলের প্রতি আন্তরিকতা থেকে আওয়ামী লীগের অনেক কর্মীই জিরো পয়েন্ট এলাকায় এসেছিলেন। তারা অপেক্ষায় ছিলেন কোনো নেতা তাদের নেতৃত্ব দেবেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব থাকলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।

League4

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, 'আমি জিরো পয়েন্টে যাইনি। যাবোও না। কেন্দ্রীয় নেতারা আসুক। তারা কেউ আসবে না, এখানে আমাদের নামিয়ে দেবে, অযথা মাইর খাবো, গ্রেফতার হবো, তখন কর্মীদের দায়িত্ব কে নেবে?'

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নিবেদিত একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘দলের সুদিনে অনেকেই নেতা হয়েছেন, লুটপাট করে দলকে বিতর্কিত করেছেন। এখন দলের দুর্দিন, সুদিনের সেই কোকিলদের আর পাওয়া যায় না। এত বড় দল, সাহস করে কয়েক শ লোকও সে দিন জিরো পয়েন্টে এলো না। আমরা হতাশ। দলের পরিচয় আর সামনে দেব কি না ভাবতে হবে।’

কারই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর