শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

বিএনপির নেতৃত্বে সর্বদলীয় জোট আটকে আছে কেন?

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০৭ এএম

শেয়ার করুন:

বিএনপির নেতৃত্বে সর্বদলীয় জোট আটকে আছে কেন?
ফাইল ছবি

বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী দলগুলো এক প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে- রাজনীতিতে সম্প্রতি এমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে। এই আলোচনায় ডান-বাম এবং মধ্যপন্থী সব ধরনের দলের নামই আসছে ঘুরেফিরে। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বে এমন একটি সর্বদলীয় জোটের সম্ভাবনা বাস্তবে কতটা আছে?

আওয়ামী লীগ যখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, তখন রাজপথে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। গত বুধবার এতে যুক্ত হয়েছে নতুন কর্মসূচি ‘অসহযোগ আন্দোলন’। এসব কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে আলাদাভাবে আন্দোলনে আছে জামায়াত, গণতন্ত্রমঞ্চসহ সরকার বিরোধী অন্যান্য দলগুলোও।


বিজ্ঞাপন


তবে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এমন আলাদা কর্মসূচির মধ্যেই রাজনীতিতে এখন আলোচনা চলছে, ‘বিএনপির নেতৃত্বে সর্বদলীয় জোট’ নিয়ে। যদিও খোদ বিএনপিই বলছে, এমন জোটের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

‘জোট নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, সর্বদলীয় জোটের বিষয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

অসহযোগ আন্দোলনে বিএনপিতে বিস্ময়, নিশ্চুপ নেতাকর্মীরা 

অন্যদিকে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনও বলছেন, জোট নিয়ে বিএনপিতে নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির আদর্শ একরকম। আবার বামপন্থী কিংবা গণঅধিকার পরিষদের মতো দলগুলোর আদর্শ আরেক রকম। জামায়াতে ইসলামী এবং চরমোনাই পীরের দলের আদর্শও এক নয়। সবগুলো দলের মধ্যে ভিন্নতা আছে, নিজস্ব গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে।’

‘'তবুও আমরা নির্দিষ্ট একটা দাবির বিষয়ে একমত হয়েছি, আন্দোলন করছি। এখানে জোটের বিষয়ে তো নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি,’ বলছিলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।

জামায়াতসহ অন্য দলগুলো কী বলছে?

বিএনপি বলছে, জোটের আলোচনায় অগ্রগতি নেই। কিন্তু এই বিষয়ে অন্যান্য দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর আগ্রহ রয়েছে।

BNP2

এর আগে বিশদলীয় জোটে বিএনপির পাশাপাশি বড় দল ছিল জামায়াত। জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, জোট নিয়ে আলোচনা খুব একটা জোরালো না হলেও জামায়াত এমন একটা জোটের পক্ষেই আছে।

আকন্দ বলেন, ‘ঐক্যই শক্তি। সবগুলো দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক প্লাটফর্মে এলে সেটার প্রভাব বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সবার লক্ষ্যই হচ্ছে সকলে এক অবস্থানে থেকে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।’

আরও পড়ুন

অসহযোগ আন্দোলনে কতটা সফল হবে বিএনপি? 

‘এখানে আরও যারা দল আছে, তাদের পক্ষ থেকে একমত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সময় লাগতে পারে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ কারণে। সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এরমধ্যেই আলাপ-আলোচনা চলছে।’

তবে ঐক্য নিয়ে জামায়াতের আগ্রহ থাকলেও জোটের বিষয়টি যে ঝুলে আছে তার বড় কারণটাই আবার জামায়াতকে ঘিরে। বিশেষ করে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ আগেই আদর্শিক কারণে জামায়াতের সঙ্গে এক প্লাটফর্মে আসতে অনীহার কথা জানিয়েছে বিএনপিকে।

কিন্তু নির্বাচনের আগে যখন সর্বদলীয় জোটের কথা আবারো জোরেশোরে উঠছে তখন গণতন্ত্র মঞ্চের অবস্থান কী? জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভিন্নতার মধ্যেও সব দলে ভোটাধিকারের দাবিতে একমত। এখানে আরও ঐক্য কীভাবে আনা যায় তা নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।

‘এই আন্দোলন আরও কীভাবে জোরদার হতে পারে, জনগণ কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে সেজন্য যে আলাপ-আলোচনা সেখানে রাজনৈতিক-আদর্শিক পার্থক্য আছে। আবার ভোটাধিকারের দাবি যে সবার দাবি সেই বিবেচনাবোধও আছে। এ নিয়েই কিন্তু আন্দোলন অগ্রসর হচ্ছে। অর্থাৎ পার্থক্য সত্ত্বেও ভোটাধিকারের প্রশ্নে কিভাবে, কতদূর পর্যন্ত ঐক্য গড়ে তোলা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’

তবে জোনায়েদ সাকি স্পষ্ট করে বলতে না চাইলেও গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো যে সর্বদলীয় জোটের অংশ হতে চায় না সেটা স্পষ্ট। দলগুলোর বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, এর পেছনে মূল কারণ জামায়াত। জামায়াতের সঙ্গে একমঞ্চে থাকতে আদর্শিক কারণেই মূলত গণতন্ত্র মঞ্চের এই অনীহা। এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনকেও কার্যকর বলে মনে করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বেশিরভাগ দলেরই সর্বদলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহ আছে।

অতীতে বিশদলীয় জোটে ছিল এমন দলগুলো ছাড়াও নুরুল হকের গণঅধিকার পরিষদ কিংবা অলি আহমেদের এলডিপি মতো দলও একজোট হওয়া নিয়ে অনাগ্রহ দেখায়নি বলেই খবর দিচ্ছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। তবে সর্বদলীয় ঐক্যজোটের ধারণা ধাক্কা খেয়েছে আরেকটি কারণে। সেটা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আলোচনায় থাকা ইসলামী আন্দোলনের এমন জোটে যুক্ত হওয়ার অনীহা।

ইসলামী আন্দোলন কী চায়?

ইসলামী আন্দোলন দুটি কারণে সর্বদলীয় কোনো জোটে অংশ নিতে চায় না। প্রথমত, এমন একটি জোটের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনে সম্ভাব্য সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি এড়ানো।

আরও পড়ুন

কর্মীদের চাঙ্গা রাখার কৌশল খুঁজছে বিএনপি 

দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা এমন নিশ্চয়তা দিতে পারি না যে, একজোট হয়ে আন্দোলন করলেই সরকারের পতন হবে। আমরা একজোট হয়ে আন্দোলন করলাম, সেটা যাতে হিতে বিপরীত না হয় সেটাও আমাদের মনে রাখতে হচ্ছে।’

BNP3

‘যদি এমন অবস্থা তৈরি হয় যে, বিএনপি আবারো কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পেরেছে, অন্যান্য দল নেমে গেছে। তখন একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। তখন আমরা বিবেবচনা করবো। কিন্তু এর আগে আমরা নিজেদের অবস্থানে থেকেই আন্দোলন করাটাকে ভালো মনে করছি।’

তাহলে যুগপৎ আন্দোলনেই সমাধান?

বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বে অতীতে বিশ দলীয় জোট আন্দোলন করলেও সে আন্দোলনে সফলতা আসেনি। ২০২২ সালে বিশদলীয় জোট ভেঙে গেলে বিএনপির সমমনা দলগুলো আলাদা আলাদা জোটের মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়।

আরও পড়ুন

এবার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক বিএনপির 

প্রায় বছরব্যাপী এ আন্দোলনের পর নির্বাচনের আগে আবারো জোটবদ্ধ হওয়ার আলোচনা উঠলেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দলের মতভেদের কারণে সর্বদলীয় জোটের ধারণা এখন আর বাস্তবতা নয় বলেই মনে হচ্ছে। তবে জোট না হলেও বিরোধী দলগলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন চলবে বলেই জানাচ্ছেন নেতারা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলছেন, বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনেই গুরুত্ব দিচ্ছে। ‘এখন যেভাবে আমরা আছি, আন্দোলন করছি, এখানে কোনো অসুবিধা তো হচ্ছে না। আমাদের দাবি তো একটাই। সেখানে সবাই একমত। এখানে বরং যুগপৎ আন্দোলনই বেশি কার্যকর হবে। কারণ প্রতিটি দলই এখানে তাদের নিজেদের শক্তি আলাদাভাবে দেখাতে চায়।’

তবে আন্দোলন চললেও দলগুলোর কারো কারো মধ্যে যে তীব্র পারস্পরিক সংশয় এবং মতপার্থক্য রয়েছে সেটা স্পষ্ট। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এসব মতপার্থক্য মিটিয়ে ভোট বর্জনকারী দলগুলো এক প্লাটফর্মে আসবে এমন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। -বিবিসি বাংলা

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর