বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমকে (বীরপ্রতীক) দল থেকে বহিষ্কার করে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গে কাজ করা নেতারা। দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন পারভেজকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মুহাম্মদ আবু হানিফকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করে ৪১ সদস্যের কমিটিও করা হয়েছে। তবে এমন বহিষ্কার ও কমিটি গঠন নিয়ে উদ্বিগ্ন নন জানিয়ে সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম বহিষ্কারের কথা। আলহামদুলিল্লাহ। তবে এসব করার আগে পার্টির গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা বাঞ্চনীয়। আর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নামটি ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্দেশনা পড়ে নেওয়া ভালো। এসব নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই।’
রোববার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে সৈয়দ ইবরাহিমসহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেইলকে ভাইস চেয়ারম্যান দাবি করা শামছুদ্দিন পারভেজ বলেন, ‘দলের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতার সম্মতিতেই বহিষ্কার এবং নতুন কমিটি করা হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত সৈয়দ মোঃ ইবরাহিম, বীর প্রতীক নির্বাহী কমিটির অধিকাংশের মতামতকে তোয়াক্কা না করে অফিস নোটিশ ব্যতীত ১৩১ জনের নির্বাহী কমিটির গোপন বৈঠকে বাংলাদেশের মানুষের চিন্তা চেতনার বিপরীতে দলীয় আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ও অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে কথিত যুক্তফ্রন্ট নামীয় নির্বাচনী জোটে যোগদান করেছেন। যে কারণে নির্বাহী কমিটির দুই তৃতীয়াংশ সদস্য বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০, উপধারা-ঙ এর অনুচ্ছেদ এক অনুযায়ী একাধিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীককে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘অধিকাংশ সদস্য বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন পারভেজকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ করেন। অনুরোধ গ্রহণ করে শামছুদ্দিন পারভেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে পার্টির নিবেদিত প্রাণ নির্বাহী কমিটির সদস্যগণের সমন্বয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘পুনর্গঠিত নির্বাহী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে দলীয় নীতি নৈতিকতা ও আদর্শকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত লোভ ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে পার্টির সাবেক চেয়ারম্যানকে প্ররোচিত করায় পার্টির সাবেক মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিবকে পার্টি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।’
৪১ সদস্য বিশিষ্ট কল্যাণ পার্টির নতুন কমিটিতে পাঁচজন ভাইস চেয়ারম্যান, একজন অতিরিক্ত মহাসচিব, আটজন যুগ্ম মহাসচিব, ছয়জন সহকারী মহাসচিব ও ১৯ জন সদস্য করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন করা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সম্প্রতি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার দল এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উদ্যোগে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক জোট 'যুক্তফ্রন্ট' থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান। মুহাম্মদ ইবরাহিম এই ফ্রন্টের প্রধান। তিনি কক্সবাজার-১ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর আগে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা ১২ দলীয় জোট থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবার তাকে নিজের দল থেকে বহিষ্কারের কথা শোনা গেল।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলে ভাঙাভাঙি হতেই পারে। কারও না কারও উসকানিতে এটা করেছে। অস্থির হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করতে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। সেটা কি রাতারাতি সম্ভব? কল্যাণ পার্টি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।’
খেতাবপ্রাপ্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘নোংরা কাজ করার জন্য উসকানি দেওয়ার লোকের অভাব নেই। তারপরও তারা যা করেছে এজন্য শুভেচ্ছা। কিন্তু আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করতে না চাইলে তাদের আলাদা করার সুযোগ আছে, করবে। তবে এই দলকে ব্যবহার করার সুযোগ নেই।’
যারা বহিষ্কার করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না আমি এমন কিছু করবো না। তাদের জন্য শুভেচ্ছা।’
বিইউ/জেবি

