মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘বিএনপির রাজনীতি করি, এটাই কি অপরাধ?’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আমরা বিএনপির রাজনীতি করি, এটাই কি আমাদের অপরাধ?’

‘আমরা বিএনপি করছি বলে আমাদের এভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ভাইকে না পেয়ে বাবাকে নিয়ে যাচ্ছে। একজনকে না পেয়ে আরেকজনকে নিয়ে যাচ্ছে। অসুস্থ মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ছোট নাবালক বাচ্চাদেরও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এদেশের নাগরিক। আমরা বিএনপির রাজনীতি করি, এটাই কি আমাদের অপরাধ?’

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। মানববন্ধন শেষে তারা প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেলে তাদের প্রেসক্লাবের সামনে আটকে দেয় পুলিশ।


বিজ্ঞাপন


এসময় ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা লিয়ন হক ও রাজিব হাসানের বোন বলেন, ‘আমার দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, এক ভাইকে পুলিশ এক মাস গুম করে পরে গ্রেফতার দেখিয়েছে। এক বছর আগে আমার ভগ্নিপ্রতিকে লক্ষ্মীপুরে র‌্যাব গুলি করে মেরে ফেলেছে, তিনি বিএনপি করতেন, পরে আমরা ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে লাশটা ফেরত দেয়। তারা প্রথমে লাশ পর্যন্ত দিতে চায়নি। শেখ হাসিনাকে বলব, যদি আমার এবং আমার পরিবারের বাঁচার অধিকার না থাকে তাহলে আমাদের সবাইকে একসাথে মেরে ফেলুন, একজন একজন করে কষ্ট দিয়ে মারবেন না। আমরা বিএনপির রাজনীতি করে অপরাধ করেছি, আমরা পুরো পরিবার এখন মরতে চাই।’

 

আরও পড়ুন

বিএনপি নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় স্বজনরা 

 


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী বলেন, ‘রাত দুইটা বাজে দরজা ভেঙে আমার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমার স্বামী বয়স্ক, পুলিশকে কত আকুতি মিনতি করলাম যে, বয়স্ক অসুস্থ নির্দোষ লোকটাকে না নিয়ে যেতে, কিন্তু পুলিশ বাসায় ভাঙচুর করে নির্দয়ভাবে তাকে তুলে নিয়ে যায়।’

ছাত্রদলের নেতা আমান উল্লাহ আমানের বড় ভাইয়ের মেয়ে বলেন, ‘আমার চাচাকে না পেয়ে পুলিশ আমার বাবাকে নিয়ে নির্যাতন করেছে। রিমান্ডে নিয়েছে। তারপর আমার চাচাকে গ্রেফতার করে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে, অনেক দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাদের কী অপরাধ। তাদের অপরাধ তারা তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে চেয়েছিল। এটাই তাদের অপরাধ।’

জেলেখানায় নিহত বিএনপি নেতা আবুল বাশারের স্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার স্বামী হারানোর বিচার চাই, আমার সন্তানকে এতিম করেছে, পুলিশ গ্রেফতার করে অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে। যার ফলে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

 

আরও পড়ুন

বিএনপি নেতা সোহেলের বাসায় পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশি 

 

যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোথায় যাবো! আমার স্বামীর মামলার বাদী পুলিশ, মামলা করলও পুলিশ, সাক্ষী দিলও পুলিশ। এটা কেমন বিচার! আদালতে বিচারকের সামনে এমন অবিচারের প্রতিবাদ করলে বিচারক বলেন- ‘এখানে আইনের কথা বলবেন না।’

BNP2

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহানের স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া বলেন, ‘আমার স্বামীকে দুই বছরের জন্য জেল দিয়েছে, তার কোনো দোষ নাই, আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুক।’

ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, ‘আমার তিন ছেলে ও এক ছেলের বউকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করছে জেলে, যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের দেখতে গেলেও আত্মীয়-স্বজনকে আটকে থানায় হয়রানি করছে পুলিশ। আমি দেশে-বিদেশের বিবেকবান মানুষকে বলতে চাই; আমরা কীভাবে দিন কাটাচ্ছি, একটু চিন্তা করুন।’

 

আরও পড়ুন

মহাসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন, মারা গেলেন কারাগারে 

 

২০১৩ সালে গুম হওয়া বিএনপি নেতা কাউসার হোসেনের স্ত্রী মিনা আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তানের বয়স ১৩ বছর, সে এখনো বুঝ হওয়ার পর বাবাকে দেখেনি। যখন সে বলে- মা! আমার বাবার মুখ কি আর দেখতে পারব না? তখন আমার বুকটা ফেটে যায়।’

রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে ব্যারিস্টার তাবাসসুম বলেন, ‘আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত! অথচ তাকে মুক্তি না দিয়ে জেলে ভরে রেখেছেন। আমার বাবার মুক্তি চাই।’

মানবন্ধনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুলহক নুরসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও পেশাজীবীরা সংহতি প্রকাশ করেন।

টিএই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর