সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

প্রতিযোগিতার মুখে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েটরাও

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৯ এএম

শেয়ার করুন:

প্রতিযোগিতার মুখে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েটরাও

দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে ফরম বিতরণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৩৬২টি। দেশের এমনও সংসদীয় আসন রয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের ২০ জনের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। আবার আটটি আসনে একক মনোনয়ন প্রত্যাশী ক্ষমতাসীন দলের। যে আটটি আসনে একক মনোনয়ন প্রত্যাশী সে আসনগুলো ‘হ্যাভিওয়েট’ প্রার্থীদের দখলে। এর বাইরেও অনেক প্রভাবশালী প্রার্থীদের বিপরীতেও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দলীয় নেতারা।

যদিও দলের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে, প্রার্থী যে কেউ হতে পারেন, মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। তবে এবার জনসম্পৃক্ততা আছে এবং ক্লিন ইমেজ আছে এমন ব্যক্তিকেই নৌকার কাণ্ডারী হিসেবে বেছে নেবেন দলীয় প্রধান।


বিজ্ঞাপন


আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ‘হ্যাভিওয়েট’ প্রার্থী দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি এবার দুই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে একটি গোপালগঞ্জ-৩। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চাননি আর কেউ। তবে দলীয় প্রধানের আরেক আসন রংপুর-৬ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে ধরা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির শ্বশুর বাড়িও এ আসনে। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এবারও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি।

আসনটি থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মন্ডল।


বিজ্ঞাপন


আওয়ামী লীগের চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে অন্যতম মাহবুব উল আলম। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে ২০১৪ সাল থেকে দলের মনোনয়ন পেয়ে আসছেন তিনি। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার পাশাপাশি প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলামসহ ছয়জন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও প্রভাবশালী নেতার তালিকায় অন্যতম তোফায়েল আহম্মেদ। ভোলা-১ আসন থেকে গত দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এবারও দলের মনোনয়ন চান এই প্রবীণ নেতা।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরন এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হেমায়েত উদ্দিনও আসনটি থেকে এবার মনোনয়ন চান।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক গত নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। বরিশাল থেকে উঠে আসা এই নেতা নবম ও দশম সংসদে ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদেও ঢাকা-১৩ আসন থেকে নৌকা চান তিনি। একই সঙ্গে বরিশাল-৫ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এই হ্যাবিওয়েট নেতা।

তবে নানকের আসন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-১৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর কমতি নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য সাদেক খান, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানসহ অনেকেই এ আসন থেকে নৌকার কান্ডারী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

একই চিত্র ফরিদপুর-১ আসনে। হ্যাবিওয়েট নেতাদের ছড়াছড়ি এ আসনটিতে। আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান দলের প্রবীণ নেতা। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য এবারও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে।

একই আসনে মনোনয়ন চান আরও ১৯ জন। তারা হলেন- আরিফুর রহমান (দোলন), সৈয়দ শামীম রেজা, মালিক খসরু, মো. বখতিয়ার রহমান, সাখাওয়াত হোসেন, লিয়াকত সিকদার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. গোলাম কবির, খান মাইনুল ইসলাম, মো. লুৎফর রহমান, মো. সিরাজুল ইসলাম, মাহমুদা বেগম কৃক, মোহাম্মদ সিরাজুল আলম, এম এম মোশাররফ হোসেন, মাজহারুল ইসলাম, শেখ আব্দুর রহিম, মো. খায়ের মিয়া, হাসনাত মিয়া ও দিলীপ রায়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম৷ মাদারীপুর-২ ও মাদারীপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তিনি। তবে তার নামে আরও তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।

যদিও বাহাউদ্দীন নাছিম জানিয়েছেন, বাকী তিনটি ফরমের বিষয়ে তিনি জানেন না। অতিউৎসাহী হয়ে কর্মীরা এটা করেছে।

তবে মাদারীপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপ তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।

একই সঙ্গে মাদারীপুর-৩ আসনে আছেন টানা ৭ বারের সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। এছাড়াও আসন দুটিতে আরও বেশ কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তার জায়গায় গত দুইবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন হাজী মো. সেলিম। তবে এবার নিজের আসন ফিরে পেতে চান তিনি। তুলেছেন মনোনয়ন ফরমও। 
তবে এবার ঢাকা-৭ আসনে হাজী সেলিম পরিবারের পক্ষ থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী মোট তিনজন।

এছাড়াও প্রতিটি আসনের বিপরীতে গড়ে ১১জন প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন চাইছেন এবার। কোনো কোনো আসনে এক হ্যাভিওয়েট প্রার্থীর মুখোমুখি আরেক প্রভাবশালী নেতা। যেমন- চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের গত দুইবারের সংসদ সদস্য দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. দীপু মনি। এবারও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। তার পাশাপাশি এবার আসনটি থেকে নৌকা চান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি।

একই অবস্থা শরিয়তপুর-১ আসনে। এখানে বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন সদস্য। তার জায়গায় এবার নিজের অবস্থান ফিরে পেতে চান আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।

এছাড়া জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার, শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল আলীম ব্যাপারী, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানসহ ২০ জন এ আসন থেকে মনোনয়ন চান।

একই চিত্র নাটোর-৩ আসনে। হ্যাভিওয়েট প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য জুনায়েদ আহমেদ পলক।

তার বাইরেও এবার নাটোর-৩ আসন থেকে নৌকা চান জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক শামসুল ইসলাম, সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সরফরাজ নেওয়াজ বাবু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম দুলু।

এদিকে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭২ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ।

সভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, চূড়ান্ত প্রার্থী কারা তা জানানো হবে শনিবার।

কারই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর