দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট। তবে অতীতে মহাজোটের শরিক দলটি এখনও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সাথে জোট করলেও তাদের একতারা প্রতীক অনৈসলামিক হওয়ায় তা ব্যবহারেও আপত্তি তাদের। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বললেও কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে তা স্পষ্ট করেনি দলটি।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে দলটি এ ঘোষণা দেয়।
বিজ্ঞাপন
দলের প্রধান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী এক্যজোট এবার নির্বাচনে অংশ নেবে। আমাদের দল নির্বাচন কমিশনে এখনও নিবন্ধিত নয়, যে কারণে আমাদের দলীয় কোনো প্রতীক নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন মহাজোট প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমাদের দল মহাজোটের অন্যতম অংশিদার ছিল। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তবে আওয়ামী লীগ এবং তার দলীয় প্রধানের প্রতিটি দুর্দিনে আমরা পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। তবে সরকারের দোষ ত্রুটির সমালোচনা করতে আমরা কখনও ছাড় দেইনি।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বরতরা প্রথম প্রথম খুবই শক্তি নিয়ে কথা বলে কিন্তু পরে কেন যেন তারা মিইয়ে যায়। এবারেও একই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা চাই না আরেকটা ১/১১ আসুক। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্য চাই। এজন্যই আমাদের নির্বাচনে যাওয়া।
এসময় ১৪ দলে ইসলামিক দল থাকা, না থাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসলামি মূল্যবোধ বাদ দিয়ে কেউ রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবে না। ইসলামকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী ইসলামকে অন্তরে ধারণ করা একজন মানুষ।
নির্বাচনী পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশব্যাপী একই সাথে আনন্দ এবং উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। যারা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন, কর্মকাণ্ডকে সমর্থন যুগিয়েছে। যারা গণতান্ত্রিক ধারা বহাল রাখার পক্ষে মত পোষণ করেছেন, তারা সকলেই চান একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা আবার সরকার গঠন করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখুন।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে আতাত করছে। তারা নানাভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য কোনোভাবেই সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারেনি করতে পারলেন না। আমরা মনে করি বিএনপি আমেরিকার উপর অতিমাত্রায় নির্ভশীল হয়ে তাদের সহযোগিতায় সরকারের পতন ঘটাতে চাচ্ছে। যে কারণে এই বিশাল রাজনৈতিক দলটির আন্দোলন বার বার ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মনে করি বিএনপির অবশ্যই নির্বাচনে আসা উচিত। তারা নির্বাচনে না আসলে যত ভালো বা নিরপেক্ষ নির্বাচন হউক না কেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না।
নিবন্ধন না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১/১১-এর পরবর্তী নির্বাচন কমিশন RPO সংশোধন করে প্রকৃত রাজনীতিবিদ এবং বড় দুইটি রাজনৈতিক দলের বাইরে রাজনীতির চর্চা কঠিন করে দিয়েছে। পরবর্তী নির্বাচন কমিশনগুলো প্রকৃত দেশপ্রেমিক ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি আরও কঠিন করে ফেলেছে। এই সুযোগে মাফিয়া ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। অজানা অজ্ঞাত ব্যক্তিরা নতুন দল গঠন করে রাতারাতি রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাচ্ছে। এর বিপরীতে সহায়-সম্বল বিসর্জন দিয়ে জীবনের বড় একটি সময় ধরে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করেছেন, সেই রাজনৈতিক দলগুলোকে রহস্যময় কারণে নানা উছিলায় নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন পাচ্ছে না।
এমএইচ/এএস