২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ড ও সহিংতাকে কেন্দ্র করে বিএনপি হরতাল ও অবরোধের মাধ্যমে চূড়ান্ত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে আন্দোলনের কৌশলে পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন৷
জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের কৌশলে পরিবর্তন আসবে৷ সেটা সামনের সপ্তাহে আপনারা দেখতে পাবেন৷ অবরোধ-হরতালের পরিবর্তে নতুন ধরনের কর্মসূচি আসবে৷ সেটা অসহযোগ কি না, এখনই বলা যাচ্ছে না৷ তবে নীতি নির্ধারকেরা নতুন ধরনের কর্মর্সূচি ঠিক করবেন৷'
বিজ্ঞাপন
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘সরকার আন্দোলনে দমাতে পুলিশ, আদালত সবই ব্যবহার করছে৷ কিন্তু আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে৷ যুদ্ধ বলেন, আন্দোলন বলেন এর কৌশলই হলো আত্মরক্ষা এবং আক্রমণ৷ আমরা সেটাই করছি৷'
আও পড়ুন: মাঠে নেতাকর্মীদের কতটা সক্রিয় করতে পারবে বিএনপি?
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে আছে বিএনপি ও তার শরিকেরা৷ তবে আন্দোলন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা৷ তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বহু ব্যবহারে গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে পারে৷ অতীতে এর উদাহরণ আছে৷ তাই বিকল্প কর্মর্সূচির কথা ভাবা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বুধবারও জামিন দেয়নি আদালত৷ ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় যে মামলা হয়েছে সেই মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে৷ এর আগে ২০ নভেম্বর এই মামলায় জামিনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও সেদির রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অনুপস্থিত থাকায় শুনানি হয়নি৷
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিবকে যে মামলায় জামিন দেওয়া হয়নি দেশে আাইনের শাসন থাকলে তিনি জামিন পেতেন৷ কারণ বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনার এক-দেড় কিলোমিটার দূরে ছিলেন তিনি৷ এছাড়া তিনি অসুস্থ, তিনি একজন শীর্ষ রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী এবং বয়স্ক মানুষ৷ জামিন পাওয়ার সব গ্রাউন্ড তার আছে৷ তারপরও তাকে জামিন দেওয়া হলো না৷ ২৮ অক্টোবরের পর তার বিরুদ্ধে পাঁচ-সাতটি মামলা দেওয়া হয়েছে৷ এ থেকেই সরকারের মনোভাব বোঝা যায়৷ এর আগেও তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে৷'
আরও পড়ুন: ভোটের প্রস্তুতিতে আ.লীগ, আন্দোলনে ছন্নছাড়া বিএনপি
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাও এখন কারাগারে আছেন৷ ‘নেতাকর্মীরা অব্যাহত গ্রেফতারের মুখে আছেন এবং এখন পুরনো মামলায় দ্রুত সাজা দেয়া হচ্ছে,' বলে জানান কায়সার কামাল৷
এই অবস্থায় একই ধরনের কর্মসূচি হরতাল-অবরোধের আন্দোলন তারা কত দূর নিতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা বিএনপির একার আন্দোলন নয়, দেশের মানুষের আন্দোলন৷ দেশের মানুষই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ তবে আন্দোলন কর্মসূচিতে যাতে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকে আমরা সেদিকে নজর দেব৷'
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল, নির্বাচনের তারিখ কোনো বৈধ নির্বাচন কমিশন দেয়নি৷ ফলে ওগুলো আমরা আমলে নিচ্ছি না৷ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার আগ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে৷'
২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির কর্মসূচির একটি সাধারণ চরিত্র স্পষ্ট হয়েছে৷ তাতে দেখা যায়, শুক্র ও শনিবারে বিএনপির হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি থাকে না৷ মঙ্গলবার একদিনের বিরতি থাকে৷ সপ্তাহের বাকি চারদিন তারা হয় হরতাল অথবা অবরোধ কর্মসূচি ডাকে৷
আরও পড়ুন: চার কারণে সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচনের পথে আ.লীগ
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ডাকার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে ফের অবরোধে ফিরছে বিএনপি৷ এ নিয়ে বিএনপি ষষ্ঠ দফায় অবরোধ ডাকল৷ প্রথম কর্মসূচিটি ছিল ৭২ ঘণ্টার৷ এরপর প্রতিটি কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার৷ এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর এখন পর্যন্ত ২২ কর্মদিবসের মধ্যে ১৯ দিনই হরতাল বা অবরোধের মধ্যেই আছে৷ তাদের সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হবে শুক্রবার ভোরে৷
২৮ অক্টোবরের পর দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়৷ এরপর ধারাবাহিকভাবে গ্রেফতার অভিযান চলছে৷ এখন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই কারাগারে আছেন৷ যারা বাইরে আছেন তারা গ্রেফতার এড়াতে কৌশলে চলাফেরা করছেন৷ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অজ্ঞাত স্থান থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলের কর্মসূচি দিচ্ছেন৷ বিএনপি অভিযোগ করেছে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ এবং এর পরবর্তী সময়ে এখন পর্যন্ত দলের ১৪ হাজার ৬৭৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ মোট মামলা হয়েছে ৩৪৬টি৷ একজন সাংবাদিকসহ নিহত হয়েছেন ১৫ জন৷ আহত হয়েছেন চার হাজার ৩৩৮ জন৷
এই সময়ে দ্রুতগতিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুরনো মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে৷ এপর্যন্ত ১৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে এপর্যন্ত হরতাল-অবরোধে দেশে প্রতিদিন প্রায় সাতটি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷
আরও পড়ুন: ‘একতরফা’ নির্বাচনের পথে দেশ, ৪৭ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ
এই সময়ে মোট ১৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে৷ যানবাহনের মধ্যে ১১৮টি বাস, ২৬টি ট্রাক, ১৩টি কাভার্ডভ্যান, আটটি মোটরসাইকেল, দুটি প্রাইভেট কার, তিনটি মাইক্রোবাস, তিনটি পিকআপ, তিনটি সিএনজি অটোরিকশা, দুটি ট্রেন, একটি নছিমন, তিনটি লেগুনা, একটি ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি, একটি পুলিশের গাড়ি ও একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে৷
আবার বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাও ঘটছে৷ মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা বাড়ছে৷ -ডয়চে ভেলে
জেবি