বিশ শর্তে নিজেদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এই শর্ত বেধে দেওয়া হয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কাছে আমরা সাতটি বিষয় জানতে চেয়েছিলাম। দলের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চিঠিতে তারা যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে- আশা করব সেগুলো তারা অনুসরণ করবে। দুই দলই নিশ্চিত করেছে তাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আমরা নিরাপত্তা দিতে চাই যারা সমাবেশে আসবে, আমরা নিরাপত্তা দিতে চাই ঢাকাবাসীর। আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সহযোগিতা করবে।
এছাড়া রাতে জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ২০ শর্তে তাদের পছন্দ অনুযায়ী স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরপরেও যদি জামায়াত সমাবেশ করার জন্য মাঠে নামে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর ঘিরে নানা উৎকণ্ঠা
বিজ্ঞাপন
বিএনপির মহাসমাবেশ এবং আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরা হলো—
বিএনপির মহাসমাবেশের ২০ শর্ত
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমোদিত স্থানের মধ্যেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. দুপুর ১২টার আগে কোনোক্রমেই জনসমাগম করা যাবে না।
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ দিতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগত ব্যক্তিদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোথাও লোক সমবেত হতে পারবে না।
৮. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/ শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৯. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে, এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে।
১১. সমাবেশ সমাপ্তির পর প্রস্থানের সময় রাস্তা বা কোথাও কোনো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বা অবস্থান করা যাবে না।
১২. আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য প্রদান বা তাঁর কোনো বক্তব্য সমাবেশে প্রচার করা যাবে না।
১৩. রাস্তার বাঁ লেন ন্যূনতম ব্যবহার করে সমাবেশ করতে হবে এবং অন্য লেনগুলো কোনোক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না।
১৪ . আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৫. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
১৬. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
১৭. সমাবেশে ব্যানারের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা বা রডসদৃশ কোনো বস্তু ব্যবহার করা যাবে না।
১৮. আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
১৯. উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২০. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতির আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর ঘিরে উদ্বেগ, কী ঘটবে সেদিন?
আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ২০ শর্ত
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমোদিত স্থানের মধ্যেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. দুপুর ১২টার আগে কোনোক্রমেই জনসমাগম করা যাবে না।
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ দিতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগত ব্যক্তিদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোথাও লোক সমবেত হতে পারবে না।
৮. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/ শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৯. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে, এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে।
১১. সমাবেশ সমাপ্তির পর প্রস্থানের সময় রাস্তা বা কোথাও কোনো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বা অবস্থান করা যাবে না।
১২. আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য প্রদান বা তাঁর কোনো বক্তব্য সমাবেশে প্রচার করা যাবে না।
১৩. রাস্তার বাঁ লেন ন্যূনতম ব্যবহার করে সমাবেশ করতে হবে এবং অন্য লেনগুলো কোনোক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না।
১৪ . আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৫. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
১৬. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
১৭. সমাবেশে ব্যানারের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা বা রডসদৃশ কোনো বস্তু ব্যবহার করা যাবে না।
১৮. আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
১৯. উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২০. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতির আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ রাত সাড়ে ৮টার দিকে পল্টন মডেল থানা থেকে অনুমতির চিঠি গ্রহণ করেন।
এর আগে, ডিএমপি এক চিঠিতে বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের পরিবর্তে বিকল্প দুটি জায়গার নাম প্রস্তাব করতে ক্ষমতাসীন দলকে অনুরোধ জানায়।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুলিশকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়— ২৮ অক্টোবর শাস্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চ নির্মাণ ও প্রচার প্রচারণার কার্যক্রম) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায়, স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর আটঘাট বেঁধে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ জানায়— সমাবেশটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, নগর ভবন, নবাবপুর সড়ক, মহানগর নাট্যমঞ্চ সড়ক, দৈনিক বাংলা মোড় এবং মতিঝিল সড়ক, স্টেডিয়াম সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। আর এতে যোগ দেবেন প্রায় দুই লাখ নেতাকর্মী।
লোক সমাগমের সময় দেওয়া হয়েছে শনিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আর মূল সমাবেশ শুরু হবে দুপুর দুইটায়।
এদিকে বিএনপির কাছে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ করতে নয়াপল্টন ছাড়া দুটি বিকল্প ভেন্যুর প্রস্তাব চাওয়া হলেও বিকল্প কোনো স্থানের কথা জানায়নি দলটি। কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনেই তারা মহাসমাবেশ করবে- এমনটা জানিয়ে পুলিশকে চিঠির জবাব দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে লোকসমাগমের বিষয়ে দলটি পুলিশকে জানিয়েছে, তাদের মহাসমাবেশে এক লক্ষ থেকে সোয়া লক্ষ লোক হতে পারে।
অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া হয়নি। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি ছাড়াই শনিবার শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
কারই/এএস