মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতিও বিএনপিতে

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:১৩ এএম

শেয়ার করুন:

আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতিও বিএনপিতে
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করছে বিএনপি। ছবি: সংগৃহীত

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকা বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ভোটের প্রস্তুতিও নিচ্ছে৷ চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ৷ সারাদেশে কাউন্সিলের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটিও এগিয়ে রাখছে সংসদে না থেকেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি৷ পরিস্থিতি পাল্টে গেলে দ্রুততার সঙ্গে যাতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা যায়, সেদিকটায় নজর দিচ্ছে দলের হাইকমান্ড৷

অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে প্রার্থীর সংখ্যা এবার বাড়বে বলেই মনে করছেন দলটির নেতারা৷ তবে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক অবস্থায় থাকতে চান ক্ষমতাসীনেরা৷ তাই কয়েক ধাপে জরিপের পর প্রার্থী চূড়ান্ত করবনে দলপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷


বিজ্ঞাপন


শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয়, অন্য রাজনৈতিক দলেও চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি৷ বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় স্বাদ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীরও চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি৷ এছাড়া জাতীয় পার্টিও ভেতরে ভেতরে গুছিয়ে রাখছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটি৷ যদিও দলের প্রধান দুই নেতার দ্বন্দ্বে, অস্বস্তির মধ্যে আছে সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি৷

আরও পড়ুন: নির্বাচনে ‘ভারত ফ্যাক্টর’, কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলো?

বিএনপি বর্তমানে নির্দলীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফার আন্দোলন করছে৷ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনে সফল সমাপ্তি চায় দলটি৷ সেই পরিকল্পনা নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতা-কর্মীরা৷ আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি৷ ইতোমধ্যে তারা প্রায় সব আসনে প্রার্থী তালিকার খসড়া তৈরি করেছে৷ সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামা যাচ্ছে লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানের কাছে৷ চিঠি দিয়ে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঠে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে৷ পদধারী কেউ রাজপথে অপারগ হলে তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করা হচ্ছে৷

বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না৷ আমাদের এখন এক দফা দাবি সরকারের পতন বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা৷ তারপরও যদি আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করা হয় তাহলে সেখানেও প্রস্তুতি রয়েছে৷'


বিজ্ঞাপন


এই নেতা বলেন, ‘একজন নয়, আমরা চাইলে প্রতি আসনে দুই থেকে তিনজন করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা আছে৷ হয়ত সর্বোচ্চ ৫০-৬০টি আসনে নতুন করে প্রার্থী নিয়ে ভাবতে হবে৷ অন্য আসনগুলোতে সবকিছু চূড়ান্ত করা আছে৷'

বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি নেই বলে যে কথা রাজনীতির মাঠে আছে, তা অপপ্রচার হিসেবেই দেখছেন দলটির এই নেতা৷

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিয়মিত এলাকায় মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নেওয়া, দলের সাবেক নেতাকর্মীদের কবরে শ্রদ্ধা জানানো, জনসংযোগ, নির্বাচনী পরিকল্পনা থেকে অনেক কিছুই স্থানীয় পর্যায়ে সেরে রাখছেন৷ অনেকেই মনে করছেন, গতবারের মতো এবার মনোনয়ন নিয়ে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই৷ আর ঘরে বসে থাকা অনেক সিনিয়র নেতাও এবার মনোনয়ন পাবেন না৷ জানা গেছে, সবকিছু লন্ডন থেকে ঠিক করছে তারেক রহমান৷ তার কাছে স্থানীয় পর্যায় থেকে সব তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে৷ তাই আগে রাজপথ, পরে নির্বাচনের দিকে জোর দিচ্ছে দলটি৷

স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তার মাপকাঠি অনুসারেই এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা৷ এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, আগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মধ্যে অনেকেই এবার পাবেন না মনোনয়ন৷ এমনকি মন্ত্রীদের মধ্যেও অনেকে মনোনয়ন পাবেন না, এমন কথা বেশ জোরের সঙ্গে শোনা যাচ্ছে৷ তবে সেই তালিকায় কাদের নাম রয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি৷ 

বিএনপির বরিশালের (উত্তর) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না৷ এখন আমাদের ভাবনায় শুধুই আন্দোলন ও সরকারের পতন৷ হ্যাঁ, তারপরও যদি পরিস্থিতি অনূকূলে আসে তাহলে ভোটের মাঠে কোনো অসুবিধা হবে না৷'

৩০০ আসনে বিএনপির অন্তত এক হাজার প্রার্থী আছেন দাবি করে তৃণমূলের এই নেতা বলেন, ‘তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ আমরা তো দলের প্রতিটি ইউনিটে কাউন্সিল করে নেতৃত্ব নির্বাচন করেছি৷ ফলে ভোটের মাঠে কাজ করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীও প্রস্তুত আছেন৷ এখন শুধু প্রয়োজন একটা সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করা৷'

আরও পড়ুন: ফের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আলাপকালে বলেন, ‘৩০০ আসনের বিপরীতে এক হাজার ২০০ প্রার্থীর খসড়া রয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে৷ শুধু নির্দেশের অপেক্ষা৷ দলের নির্দেশনা পেলে প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়বেন৷'

League2
পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি সারছে আওয়ামী লীগ। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, এক প্রকার ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনী মাঠ গোছাচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নৌকায় ভোট চাচ্ছেন৷ বিদ্রোহী ও বহিষ্কৃতদের একে একে ক্ষমা করে নির্বাচনী মাঠে নামাচ্ছেন৷ সেই সঙ্গে তৃণমূলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷

স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তার মাপকাঠি অনুসারেই এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা৷ এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, আগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মধ্যে অনেকেই এবার পাবেন না মনোনয়ন৷ এমনকি মন্ত্রীদের মধ্যেও অনেকে মনোনয়ন পাবেন না, এমন কথা বেশ জোরের সঙ্গে শোনা যাচ্ছে৷ তবে সেই তালিকায় কাদের নাম রয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি৷

আরও পড়ুন: ইশতেহার তৈরিতে কেন জনমত চায় আওয়ামী লীগ?

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা তো ভোটের মধ্যেই আছি৷ প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন৷ রাজপথের কর্মসূচির পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত জনসংযোগ করছেন৷'

বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এখন আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না৷ আমাদের এখন এক দফা দাবি সরকারের পতন বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা৷ তারপরও যদি আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করা হয় তাহলে সেখানেও প্রস্তুতি রয়েছে৷' 

দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় আগ্রহী প্রার্থী অনেক বেশি হতে পারে, সেক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের সামাল দিতে কী ভাবছে আওয়ামী লীগ? এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো একটা রাজনৈতিক দলে একটি আসনে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হতে চাইবেন সেটাই তো স্বাভাবিক৷ প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেওয়ার পর এসব বিদ্রোহ আর থাকবে না৷ সবাই দলের পক্ষেই কাজ করবেন৷ বিদ্রোহ করে অনেকেই দল থেকে ছিটকে গেছেন৷ আর ৪-৫ ধরনের জরিপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই৷ ফলে তার কাছে তো সব ধরনের রিপোর্ট আছে৷ যার পাশ করার সম্ভাবনা আছে তিনিই মনোনয়ন পাবেন।’

বিএনপির পাশাপাশি রাজপথে আছে আওয়ামী লীগও৷ প্রতিদিনই দলটি নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে৷ দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে না ধরনের কর্মসূচিও নিচ্ছেন দলটির নেতারা৷ তবে অন্তর্কোন্দল দলটিকে ভোগাতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা৷

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ে, এটা সত্যি৷ কিন্তু নৌকা যিনি পাবেন তার পক্ষেই থাকবে নেতাকর্মীরা৷ কেউ যদি বিদ্রোহী হন তিনি আসলে টিকতে পারবেননা৷ ফলে সবার চেষ্টাই মনোনয়ন পাওয়ার৷ যে নৌকা পাবে আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই মাঠে থাকব৷' সূত্র: ডয়চে ভেলে

জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর