শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য কি নতুন?

মহিউদ্দিন আহমেদ
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য কি নতুন?

২০১১ সালে শুল্কমুক্ত সুবিধা অর্থাৎ জিএসপি বাতিল করে বাংলাদেশের ওপর প্রথম অসহযোগিতা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বলা হয়, কিছু অভিযোগ এবং উন্নয়নশীল বা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বা স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে জিএসপি বাতিল করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন রানা প্লাজার দুর্ঘটনার কারণে জিএসপি বাতিল করা হয়েছে। আদৌ কি তাই? ২০১৩ সালের ২ জুলাই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, জেএসপি সুবিধা বাংলাদেশের বাতিল করার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশকে শাস্তি দেওয়া। তাই যদি না হয় তাহলে ভেনেজুয়েলার মতো দেশ কীভাবে জিএসপি সুবিধা পায়? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপির অধীনে ১৭০টি দেশ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে থাকে। এ থেকে বাংলাদেশ পায় মাত্র তিন কোটি ৫০ লাখ ডলারের শুল্কমুক্ত সুবিধা।

বর্তমানে শুল্কমুক্তর সুবিধার পণ্যের মধ্যে হচ্ছে তামাকজাত, প্লাস্টিক সামগ্রী, ক্রিয়া সামগ্রী ও চিনামাটির তৈরি পণ্য। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলংকা এখনো জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছে। অনেকেই বলছিলেন, সিএসপি সুবিধা বাতিল করার ফলে বাংলাদেশে পোশাকশিল্প খাত ধ্বংস হবে। রাস্তায় নেমে আসবে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। বাস্তবে যা এখনো হয়নি বরং বাংলাদেশ পোশাকশিল্পে আরও অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।


বিজ্ঞাপন


২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‍্যাব) ও পুলিশের মহাপরিচালকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম করে- আরও আসছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। সংবাদটি অনেকেই হালকাভাবে নিলেও গত বুধবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ভিসা কড়াকড়িসংক্রান্ত একটি ঘোষণা দেন। ব্লিঙ্কেনের টুইট বার্তা এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ঢাকা স্টক মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ বিষয়ক নতুন এক ভিসার নীতিমালা প্রচার করা হয়। বলা হচ্ছে, এই নীতির অধীনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তিদের বা তার সঙ্গী স্বজন বা আত্মীয়-পরিজনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদান করা হবে না।

ব্লিঙ্কেন ওই ঘোষণায় বলেন, আমি অবাধ সুষ্ঠুও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা (২১২)এ(৩)(সি)("৩সি") এর অধীনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য বা দায়ী বা জড়িত যেকোনো বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান সীমিত করবে। নতুন ভিসা নিতে আওতায় বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা পড়বেন। ইতোমধ্যে মার্কিন ভিসানীতির এই সিদ্ধান্তের কথা ৩ মে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তাও উল্লেখ রয়েছে- এর মধ্যে আছে ভোট জালিয়াতি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, জনগণের স্বাধীনভাবে সবার সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে জামায়েত হওয়ার অধিকার থেকে বিরত রাখতে বল প্রয়োগ বা সহিংসতা। এছাড়া রাজনৈতিক দল, ভোটার নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার।

নির্বাচন সামনে রেখে যেহেতু বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে এবং চীন ভারত এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে, যেকোনোভাবেই হোক বাংলাদেশের তাদের অবস্থান তৈরি করা। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের জাতীয়তাবাদ বা দেশের জনগণের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট নেই তারা যেকোনোভাবেই ক্ষমতায় থাকতে বা আসতে চায়, আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের কথা মানলে সুবিধা আর কথা না মানলে নিষেধাজ্ঞা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া এবং বসবাস করার স্বপ্ন অনেকেই দেখে। বর্তমানে সর্বশেষ তথ্য অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসকারী বাংলাদেশের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। যা মার্কিন মোট জনসংখ্যার তুলনায় 0.0৪ শতাংশ। স্বাধীনতার পূর্ব অর্থাৎ ১৯৭০ সালের পূর্ব থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশিদের বসবাস বেশিরভাগ বাংলাদেশি নিউইয়র্কের জ্যাকসন হার্ডসে বসবাস করে। তাছাড়া ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, আটলান্টা, সানফাস্ট কিসকো, শিকাগো ফ্লোরিডা, ডালাস টিউটন ও উত্তর ক্যারিনায় অনেক বাংলাদেশি বসবাস। জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ নাম্বার সড়কের বেশিরভাগ কাপড় খাবার ফল বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দোকান বাংলাদেশিদের। শাহবাগের মতো এখানে একটি মুক্তমঞ্চ আছে, যেখানে রাজনৈতিক আলোচনা, বক্তব্য দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈরিতা আমাদের নতুন কিছু না। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে তারা ভালোভাবে নেয়নি সেটি ইতিহাসের সাক্ষী এবং আমরা সকলেই জানি‌। তবে আধুনিক বিশ্বে বর্তমান সময়ের এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে- এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা খুব দ্রুতই প্রত্যাহার হোক। আগামীতে বাংলাদেশ একটি অবাধ সুষ্ঠু জনগণের অংশগ্রহণে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে- এটি আমরা প্রত্যাশা করি।

লেখক: আহ্বায়ক, সাধারণ নাগরিক সমাজ

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর