কত দ্রুত সব বদলে গেল। চিত্রের যুবকটির বাম পাশে সাদা রঙের যন্ত্রটির নাম ‘টেলিপ্রিন্টার’। এটি আশির দশকের মডেল। এর আগের মডেল ছিল টাইপরাইটারের মতো। সারাক্ষণ খটখট শব্দে একটির পর একটি সংবাদ আসতো। ঢাকার দৈনিক সংবাদপত্র মানেই অফিসে একটা টেলিপ্রিন্টার থাকতেই হবে। এই যন্ত্র দিয়ে সারা দুনিয়ার খবর আসতো। সরকারি খবরও আসতো। সবই ইংরেজি খবর। তরুণ সাংবাদিকরা টেলিপ্রিন্টারের সঙ্গে পরিচিত নয়।
বাংলা সংবাদপত্রের সাব-এডিটর মহোদয়গণ টেলিপ্রিন্টারে আসা খবর অনুবাদ করতেন। ইংরেজি দৈনিকের সাব-এডিটর মহোদয়গণ ফুলস্টপ, কমা, সেমিকোলন ঠিক করার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় অংশ ছেঁটে ফেলতেন। একটা সময় পর্যন্ত টেলিপ্রিন্টারে আসা সংবাদই ছিল সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের প্রধান উৎস।
বিজ্ঞাপন
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়েই টেলিপ্রিন্টার জাদুঘরের বস্তুতে পরিণত হয়। টেলিপ্রিন্টারের স্থান দখল করে ফ্যাক্স। কিন্তু খবর পাওয়ার মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রে ফ্যাক্সের ব্যবহার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। অফিসিয়াল কাজে ফ্যাক্সের ব্যবহার এখনও বেশ আছে। এখন ইন্টারনেট, ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপে সব আসে, সব পাওয়া যায়। এখন সংখ্যা বেশি, সাব-এডিটর সংখ্যা সে তুলনায় অনেক কম।
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমে প্রথম টেলিপ্রিন্টার আসে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই বছর পর ১৯৪৯ সালে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অফ পাকিস্তান (এপিপি), যা বর্তমানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), এ প্রতিষ্ঠানের ঢাকা ও চট্টগ্রাম অফিসে দুটি টেলিপ্রিন্টার চালু করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম টেলিপ্রিন্টারে খবর আসা শুরু হয়। এপিপি সংবাদপত্রগুলোতে বাহক মারফত খবরগুলো পাঠাতো। এরপর পর্যায়ক্রমে সংবাদপত্রগুলোতে টেলিপ্রিন্টার স্থাপন শুরু হয়।
বিনয়ের সঙ্গে একটি কথা বলি। ১৯৮৮ সালে লন্ডন থেকে টেলিপ্রিন্টারে আমার একটি নামে একটি খবর আসে। নিউজ এডিটর কবীর ভাই আমার একটি ছবি চান এবং মিষ্টি আনতে বলেন। খবরটি ছিল, আমি রয়টার্সের ফেলোশিপ পেয়েছি এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাব। বাংলাদেশের প্রথম রয়টার ফেলো। ফেলোশিপ পাওয়ার চেয়ে রয়টার আমাকে নিয়ে রিপোর্ট করেছে, এই আনন্দ ছিল বেশি। পরদিন ঢাকার সবকটি সংবাদপত্রে খবরটি প্রকাশিত হয়। একজন ক্ষুদ্র রিপোর্টারের জন্য এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
টেলিপ্রিন্টার এখন কেবল স্মৃতি।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রখ্যাত সাংবাদিক

