রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘এই দেশের মানুষকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না’

মেশকাত সাদিক
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

khaleda
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

দেশ ও মানুষের প্রতি প্রেম-দায়বদ্ধতায় সাবেক প্রধামন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনিন্দ্য এবং অবিসংবাদিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া সুদীর্ঘ সময় ধরে দেশ, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষার সংগ্রামের অত্যুজ্জ্বল প্রতীক। তাঁর জীবনচর্যা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের সুস্পষ্ট এবং সত্যের মানদণ্ডে কলোত্তীর্ণ। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদলে তাঁর নেতৃত্বের উত্থানে দেশপ্রেমের দৃঢ় পরিচয় বিধৃত। ‘র’-এর পরিকল্পিত ষঢ়যন্ত্রে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দলীয় সংকট ও জাতীয় শোকের মুহূর্তে জনতার আবেগের দাম দিতে গিয়ে বেগম জিয়া নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তখনো তিনি পূর্ণাঙ্গ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, কিন্তু দেশের স্বার্থে, জনগণের আহ্বানে তিনি সামনে এগিয়ে আসেন। এই কঠিন সময়ে দায়িত্ব নেওয়াই তাঁর দেশপ্রেমের প্রথম বড় পরিচয়। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়, গণতান্ত্রিক ধারাকে টিকিয়ে রাখতে তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন, এবং ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

তাই এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার নাম এক গভীর মর্যাদার প্রতীক। তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বে যেমন দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে দেখিয়েছেন অদম্য সাহস, ধৈর্য ও মানবিকতা। দেশের বিভিন্ন অস্থির সময়ের মাঝেও তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছেন এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জীবন-ঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সংগ্রামী চরিত্র, আত্মত্যাগ, জনগণের পাশে থাকার দৃঢ় মনোভাব তাকে রাজনীতির সীমানা ছাড়িয়ে ‘সর্বজন শ্রদ্ধেয়’ জাতীয় নেত্রী হিশেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সাধারণ মানুষ থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল পর্যন্ত তিনি পরিচিত হয়েছেন দৃঢ় নেতৃত্ব, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দেশপ্রেমের কারণে। মতভেদ বা রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ নিবেদন, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবিচল ভূমিকা তাঁর প্রতি দেশবাসিকে স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শনে অনুপ্রাণিত করে। এই কারণেই বেগম জিয়া নিজেই একটি দল। একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সম্মানিত, সংগ্রামী এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসে যেসব ব্যক্তিত্ব রাজনীতিকে মানবসেবার হাতিয়ার হিশেবে ব্যবহার করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তাঁদের মধ্যে অন্যতম। রাজনীতির কঠিন ও অনিশ্চিত বাস্তবতা থেকে উঠে এসে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন দৃঢ়চেতা, মানবিক ও দেশপ্রেমিক নেত্রীরূপে। দেশপ্রেম শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নয়, বরং ছিলো গভীর আবেগ, ভালোবাসা, ছিলো মানুষের প্রতি অটল দায়বদ্ধতা। আর মানবপ্রেম ছিলো তাঁর প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অন্তরস্থ সুর, যা তাঁকে জনগণের কাছে আশ্রয় ও আশ্বাসের প্রতীক করে তুলেছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

সেরে উঠুন গণতন্ত্র, স্বাধীন থাকুক বাংলাদেশ

তবে নেতৃত্বের শুরুতেই দেশপ্রেমের অগ্নি-পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাঁকে। বেগম জিয়ার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় নিদারুণ শোকাবহ মুহূর্তে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যার পর, যখন দেশ রাজনৈতিক দোলাচলে, শংকা ও অনিশ্চয়তায় টালমাটাল। ঠিক সেই সময়ে একজন সাধারণ গৃহিণী নারী, জাতির সামনে দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসেন। এটি নিশ্চিতভাবে তাঁর জীবনের প্রথম অগ্নি-পরীক্ষা। কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই দলকে সংগঠিত করা, জনগণকে আশ্বস্ত করা এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা জাগানো- কোন স্বাভাবিক ঘটনা ছিলো না। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব গ্রহণ করা নিছক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত-ই ছিলো না; ছিলো দেশমাতৃকার প্রতি সুগভীর আকর্ষণ, দায়বদ্ধতা, জনগণের প্রতি অটুট আস্থা এবং তর্কাতীতভাবে নিগূঢ় দেশপ্রেম। এমন অনাবিল দেশপ্রেম থাকা সত্বেও রাজনৈতিক পথচলা কখনোই মসৃণ ছিলো না। আরও কঠিন ছিলো গণতন্ত্রের প্রশ্ন। বেগম জিয়া এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে দৃঢ় ও স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষাই, প্রকৃত গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্র মানেই মানুষের প্রতি সম্মান। অর্থাৎ মানবপ্রেমের আরেক নাম। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। বন্দী থেকেও জনগণের প্রতি তাঁর আস্থা কখনো ভাঙেনি। মানুষের অধিকার রক্ষায় এই দৃঢ়চেতা অবস্থান রাজনৈতিক নয়, এটি মানবিকতার উচ্চতম প্রকাশ।

55

মানবিক রাষ্ট্র ও দেশপ্রেমের শুদ্ধ পরীক্ষায় তিনি সম্পূর্ণ উত্তীর্ণ। বেগম জিয়ার মানবপ্রেম সবচেয়ে দৃশ্যমান হয় তাঁর নেয়া উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে। দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ। নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রসার। গ্রামীণ উন্নয়ন, দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত আধুনিকীকরণ। দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। মানবিকতার অনিঃশেষ আলো ছড়ানো। রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় দেশ উন্নয়নে দূরদৃষ্টি প্রদর্শন। অর্থনীতি উন্নয়নে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ। বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তিখাতের আধুনিকায়ন করাসহ মানবিক রাষ্ট্র গঠনে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বস্তুত মানবিকতার আলোকিত প্রতিচ্ছবি। কারণ- তিনি বুঝতেন, দেশ মানেই মানুষ। তাই মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সম্মান নিশ্চিত করা তাঁর লক্ষ্য ছিল নির্ভেজাল। পরার্থপরতার মানসিকতা তাঁর মধ্যে ছিলো প্রবল। তিনি রাজনীতিকে নিজের জন্য নয়, বরং অন্যের কল্যাণে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। রাষ্ট্র ক্ষমতা তাঁর কাছে প্রকৃত অর্থে সেবার ক্ষেত্র। এটি মানবিক নেতৃত্বের শুদ্ধতম পরিচয়।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

বেগম জিয়া এখন কী ভাবছেন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের অনন্য প্রতীক। ফ্যাসিবাদ নির্মূল করে গণতান্ত্রিক সমাজ আনতে গিয়ে তিনি কারাবরণ করেছেন। কারাগারে স্লো-পয়জনিং এবং সুপরিকল্পিত কুচিকিৎসার কারণে আজ তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অথচ তিনি মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন ৫৪/৫৫ বছর ধরে। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন  মূলত রাষ্ট্রের শক্তি জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করার দর্শন। এই নীতি, ভাবনা এবং মানবিকতা তাঁকে বাংলাদেশ শুধু নয়, বরং সারা বিশ্বে বিশেষ উচ্চতায় আসীন করেছে। তিনি সংগ্রামের আলোকবর্তিকা। মানবিক নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। এবং দেশের প্রতি গভীর প্রেমময় এক নাম। মানুষকে হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন-‘এই দেশের মানুষকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না’। এদেশের মানুষও তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে। তাঁর অসুস্থতায় দেশের মানুষ শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। দুই হাত আল্লাহর কাছে তুলে সর্বস্তরের জনগণ বলছে হে আল্লাহ, দয়াকরে দেশনেত্রীকে আমাদের কাছে ফেরত দিন।

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর