রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ব্যবসা: সমস্যা ও সম্ভাবনা

সাইদুল ইসলাম
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

ইন্টেরিয়র ডিজাইন হোক পরিবেশবান্ধব

সৃষ্টিশীলতা, প্রযুক্তি ও রুচির এক সমন্বিত রূপ হলো ইন্টেরিয়র। বাংলাদেশের ইন্টেরিয়র ব্যবসার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ দেশটি দ্রুত নগরায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভোক্তাদের মধ্যে পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার পছন্দের সাথে সাথে, মানুষ আরও নান্দনিকভাবে আনন্দদায়ক এবং আরামদায়ক থাকার জায়গা খোঁজার অংশ হিসেবেও ইন্টেরিয়র করার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও এই সেক্টরের উন্নতির জন্য রিয়েল এস্টেট খাতের বিকাশও একটি বড় কারণ বলা যেতে পারে।

সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি ও পছন্দের পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও ডেকোরেশন মার্কেট সাইজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জনবলের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ইন্টেরিয়র সেক্টরের এই সম্ভাবনার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতি উপকৃত হতে পারে।


বিজ্ঞাপন


বড় ও আন্তর্জাতিক বাজার এর সুযোগ বাংলাদেশের ইন্টেরিয়র সেক্টরের জন্য অন্যতম একটি সম্ভাবনা। মার্কেট সাইজ বড় হওয়ার কারণে বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও ডিজাইনের সাপোর্ট দেওয়ার মাধ্যমে এই ব্যবসার সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। বলা যায়, বাংলাদেশের ইন্টেরিয়র ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য আশাব্যঞ্জক সুযোগ রয়েছে।

যাইহোক, এতসব সম্ভাবনা ও উন্নতির পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হয়, যা এই সেক্টরের উন্নতির পাশাপাশি ব্যবসা কার্যক্রম এবং বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

আরও পড়তে পারেন
ইন্টেরিয়র ডিজাইন পলিসি: প্রয়োজনীয়তা ও প্রত্যাশা
যুব ক্ষমতায়ন: সময়ের অপরিহার্য দাবি

বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ব্যবসার সমস্যাসমূহ:


বিজ্ঞাপন


১. নীতিমালার অভাব:

বাংলাদেশের ইন্টেরিয়র সেক্টরের মূল সমস্যা হলো এই সেক্টরের জন্য আলাদা কোনো নীতিমালা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এই খাতের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা না গেলে ইন্টেরিয়র ব্যবসা থেকে কাঙ্খিত আউটপুট পাওয়া অসম্ভব এবং এই সেক্টরের পরিধি ও পরিসর বাড়নো সম্ভব নয়।

২. কঠিন লাইসেন্স প্রক্রিয়া:

বাংলাদেশের সকল ব্যবসার জন্য একটি প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হলো জটিল আইনি, নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রক্রিয়া। ব্যবসা লাইসেন্স এবং অনুমোদন প্রাপ্তি সময়সাপেক্ষ এবং আমলাতান্ত্রিকভাবে জটিল হওয়ার কারণে নতুন উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ইন্টেরিয়র ব্যবসার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিদ্যমান।

৩. উপকরণের আমদানি নির্ভরতা:

এই খাতের বেশিরভাগ উপকরণ আমদানি নির্ভর হওয়ায়, দেশের অর্থনীতিতে এই ব্যবসার পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যে পরিমাণ বিনিয়োগ বা বাজার রয়েছে, এর মধ্যে ৮০ ভাগ উপকরণ মার্কেট। তার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ উপকরণ আমদানি করতে হয়। ৩০ শতাংশ উপকরণ দেশে উৎপাদন হয়। এসব উপকরণের দেশীয় খাত গড়ে তুলতে না পারলে, ইন্টেরিয়র ব্যবসার কাঙ্খিত আউটপুট পেতে বেগ পেতে হবে।

৪. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব:

বাংলাদেশের ইন্টেরিয়র সেক্টরে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। একাডেমিক্যালি দেখা যায় শুধুমাত্র শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের বিষয় হিসেবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন রয়েছে। এর বাইরে ডিপ্লোমা লেবেল এবং শর্ট কোর্সে যা শেখানো হয়, তা পর্যাপ্ত না। তাই সেক্টরের উন্নয়নের জন্য সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবজেক্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে এবং প্রশিক্ষণের জন্য শর্ট কোর্সগুলোকে আরও কার্যকর, বাস্তবধর্মী ও ফিল্ড লেভেলের অভিজ্ঞতার সমন্বয় জরুরি।

৫. বাজার গবেষণা এবং বিশ্লেষণের অভাব:

পুঙ্খানুপুঙ্খ বাজার গবেষণা এবং বিশ্লেষণ এই সেক্টর একদম নেই বললেই চলে। পর্যাপ্ত তথ্য সংকটের কারণে এই সেক্টর নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এই সেক্টরের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রচুর পরিমাণ গবেষণা না হলে, সেক্টরের অন্য সমস্যাগুলোও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে।

৬. উদ্ভাবনী সেবা সংকট:

ইন্টেরিয়র ব্যবসায় এগিয়ে থাকার জন্য উদ্ভাবন চাবিকাঠি। ইন্টেরিয়র ফার্মগুলি প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করে, এমন অনন্য এবং উদ্ভাবনী পরিষেবা দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা খুব কম দেখা যায়। যতই টেকসই উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হোক না কেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হোক না কেন, নতুন কিছু উদ্ভাবন করে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে না পারার চ্যালেঞ্জ পুরো ইন্টেরিয়র ইকোসিস্টেমে নেগেটিভ প্রভাব ফেলবে। 

৭. নেটওয়ার্কিং এবং অংশীদারিত্ব সংকট:

নেটওয়ার্কিং এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব এই সেক্টরে তুলনামূলকভাবে খুব কম। স্থপতি, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার, পণ্য সরবরাহকারী ও অন্যান্য শিল্প স্টেকহোল্ডারদের সাথে সহযোগিতা লাভজনক প্রকল্প এবং রেফারেলের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যোগাযোগের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি এবং পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক তুলনামূলক কম থাকা এই ব্যবসার অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ।

লেখক: সিইও, রিয়েল ইন্টেরিয়র 
সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানি ওনার্স এসোসিয়েশন- বিডকোয়া 
অনার্স ও মাস্টার্স (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) 
পিএইচডি গবেষক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর