রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার ও অপব্যবহার

মহিউদ্দিন আহমেদ
প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার ও অপব্যবহার

৭ জানুয়ারির দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে প্রযুক্তির ব্যবহার। পাশাপাশি অপব্যবহারও থেমে নেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে আমরা একটি গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্ব গ্রামে বসবাস করছি। চলমান চতুর্থ শিল্পের মধ্যে থেকে বিশ্ব যখন পঞ্চম শিল্প যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ বা কেন পিছিয়ে থাকবে? ডিজিটাল গণ্ডি পেরিয়ে যখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ, তখন জনপ্রতিনিধি, ভোটার এবং জনসাধারণ প্রযুক্তির মাধ্যম বেছে নেবে এটাই স্বাভাবিক। 

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সারাদেশে নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত করে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন এবারের নির্বাচনে অনলাইনে ও আ্যপসের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল, প্রত্যাহার, ভোটের তথ্য পাওয়ার জন্য তৈরি করেছে নির্বাচনী ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস। এমনকি ভোটাররা কোন কেন্দ্রে ভোট দেবে, তার ভোটার নাম্বার কত? সেই তথ্যও পেয়ে যাবে নির্বাচনী অ্যাপসের মাধ্যমে। এই অ্যাপস তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন খরচ করেছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। 


বিজ্ঞাপন


এবার নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৯৬ জন। নির্বাচনের আগে থেকেই অংশগ্রহণকারী প্রায় সকল প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচার বিগত সকল নির্বাচনকে হার মানিয়েছে। নিজেদের পক্ষে প্রচারণা যেমন রয়েছে, তেমনি সাইবার বুলিংও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। তার মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমো নির্বাচনের প্রচারে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভেলুএড্যেড সার্ভিস বা ভ্যাস অপারেটরের মাধ্যমে ভোটারদের সরাসরি ৩০ সেকেন্ডের ভয়েস কল। যেখানে প্রার্থীরা একটি নাম্বার থেকে ভোট ও দোয়া চাচ্ছেন।

>> আরও পড়তে পারেন:
ভোট ও বর্জনের সভা-সমাবেশে আগ্রহ নেই সাধারণ নাগরিকদের

অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুস্টিং করছে ,খরচ করছে কারি কারি ডলার। নির্বাচনের ব্যয়ভার এবং আচরণবিধির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচার পত্রের ব্যয় এবং ভয়েস কলের মাধ্যমে ভোট চাওয়ার কোনটাই না থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা তা করছে। নির্বাচনে আচরণবিধি লক্ষ্য করার জন্য নির্বাচনে কমিশনের বিচারিক কার্যক্রম এবং মনিটরিং টিম থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ে মনিটরিংয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনে আলাদা কোন ইউনিট নেই। 

২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাশ হবার পর সরকার ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গঠন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি। এরপর গত বছর ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হলে সেখানেও জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের কথা বলা হয়। তাছাড়া ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট,র‌্যাবের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে সাইবার পেট্রোলিং। 


বিজ্ঞাপন


গত বছরের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সাথে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দল দ্বাদশ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার সাইবার বোলিং বন্ধের পরামর্শ দেন। তারা এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশ্বস্ত করে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি সাইবার বোলিং-অপপ্রচার ব্যাপক হারে চলছে। যদিও আমাদের টেলিযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এনটিএমসির ইন্টেলিজেন্স। এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সব মোবাইল অপারেটরের ভয়েস এবং ডেটা, নির্বাচন কমিশন ডেটাবেস, পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশন ডেটাবেস, জন্ম নিবন্ধন ডেটাবেস, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ডেটাবেস, র‍্যাব ডেটাবেস (ক্রিমিনাল ডেটাবেস, জেল ইনমেট ডেটাবেস) এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেছে। যার মাধ্যমে আইনপ্রয়োগকারী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং হজ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের তথ্য যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করতে পারে। 

সব রকম সামাজিক এবং ওয়েব মিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এনটিএমসির প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ও রাষ্ট্রবিরোধী তথ্যদাতাদের শনাক্ত করতে পারে। শনাক্তের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এত নিরাপত্তা বলয় এবং আইন ও এজেন্সি থাকা সত্বেও কিভাবে অপপ্রচার এবং সার্ভার বোলিং করে চলেছে প্রার্থী এবং প্রার্থীর সমর্থকেরা, তা আমাদের বোধগম্য নয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির প্রচার ও অপপ্রচার দুটি বিষয়ই মাথায় রাখা। আর এ বিষয়ে তাদের নিজস্ব একটি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা। 

আপরদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনকে বয়কট করে নানা প্রচার-অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রার্থীদের ও বয়কটকারীদের প্রচার-অপপ্রচার সাধারণ মানুষকে রসাত্মক বিকৃত বিনোদনের খোরাক জুগাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তির সেবা নিশ্চিত করতে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করাটাই বাঞ্ছনীয়। আগামী দিনের সংসদে যারা গিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে, তাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করাটা হবে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তারাই যদি এর অন্যতম অপব্যবহারকারী হয় তাহলে আমরা কেমন স্মার্ট বাংলাদেশ পেতে পারি সেটা সহজেই অনুমেয়।

তবে আমরা আশা করি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে আমাদের প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

লেখক
মহিউদ্দিন আহমেদ
সভাপতি, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন

এমএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর