দুর্নীতি, লুচ্চামি, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হয়রানি, বেইমানি— সবকিছু করার পরও জাতি থেমে নেই। শেষে জনগণের ভোট চুরি করে জয়লাভ? এটা মেনে নিতে পারিনি। অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর। এই দিনটিতে আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। তখন আর যাই হোক ভোট চুরি বা ছিনতাই হয়নি। তবে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সে নির্বাচনের পর বিজয়ী শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করেছিল। এর জের ধরে কিন্তু শুরু হয়েছিল তীব্র রাজনৈতিক সংকট এবং শেষ পর্যন্ত গড়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। যার পরিণাম এবং পরিসমাপ্তি ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে। মনে করিয়ে দিতে চাই, পূর্ব পাকিস্তানে গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের মতো জেনারেলও।
এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান দায়িত্ব গ্রহণ করে সামরিক শাসন জারি করেন। তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সময়ও একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো ঘাটতি ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে সে ঘাটতি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
আমার অনুরোধ থাকবে জনগণের প্রতি, ঘরে বা লন্ডনে বসে ডিজিটাল না হয়ে পথে নামুন, ভোট কেন্দ্রে যান, নিজের ভোট নিজে দিন, সাংবাদিক ভাইয়েরা সঠিক ও সত্য খবর বিশ্ববাসীর দরবারে পেশ করুন। দেখবেন সত্যের জয় হবে, দেশ গণতন্ত্র ফিরে পাবে, শ্বৈরশাসনের পতন ঘটবে। আপনারা যদি সময়ের ডাকে সাড়া দিতে ব্যর্থ হন তবে আগামী প্রজন্ম আপনাদেরকেই দায়ী করবে।
বিজ্ঞাপন
আমি আমার শিশুকালে (১৯৭১ সালে) কাজটি করেছিলাম, আজ আমি সেই চল্লিশ বছর ধরে কলুর বলদের মতো ঘানি টেনে বেড়াচ্ছি দূরপরবাসে। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সোনার বাংলা করেই ছাড়ব কিন্তু সেটা মনে হয় সম্ভব হবে না! হবে কী করে, সবাই ডিজিটাল হয়ে গেছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, টিকটক, পর্নোগ্রাফির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে।
কালো কাপড় দিয়ে কলুর বলদের চোখ বেঁধে সারাদিন খাটানো হয়। আশপাশের কোনো কিছু যাতে দেখতে না পারে সেজন্যই কালো কাপড় দিয়ে চোখ বাঁধা হয়। ঘুরতে ঘুরতে হয়তো সবুজ ঘাসের দিকে মনোযোগ চলে যাবে গরুর কিংবা বন্ধুর হাম্বা ডাক শুনে ইচ্ছে করবে মাঠে ছোটার।
আরও পড়ুন
কে চায় ঘুরে ঘুরে সরষে ভাঙাতে? কিন্তু বেচারা গরু এসবের কিছু ভাবতেই পারে না। অন্ধকারে অবিরাম ঘোরে সে। ছুটে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কর্তার (চালক) মর্জি হলে হয়তোবা গরুটির জন্য কিছুটা বিশ্রামের ব্যবস্থা হয়, কখনো হয় না। এভাবেই দিনের পর দিন একটানা খাটছে গরুটি। তার খাটুনির বিনিময়ে ফোঁটা ফোঁটা করে তেল পড়ে। খাঁটি সরষের তেল। ঘানির তেল নামে যাকে চিনি আমরা।
তেল মাড়াইয়ের এই প্রাচীন পদ্ধতিটা নিষ্ঠুর বা কঠিন হলেও সবার কাছে এর চাহিদা দারুণ। ঘানিভাঙা তেলের ঘ্রাণ, স্বাদ খুব সহজে সবাইকে আকৃষ্ট করে। গায়ে মাখা, তরকারিতে ব্যবহার, যেকোনো ধরনের ভর্তা, মুড়ি মাখানো ও সালাদে এই তেল অতুলনীয়। তা ছাড়া সর্দি-কাশিরও বড় ওষুধ এই সরিষার তেল।
এক মিনিটে তেলের ফোঁটা পড়ে ৩৫-৪০ বার। যার ওজন মাত্র ৫০ গ্রাম। ছয় কেজি সরষে ভরে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সময় নিয়ে দুই লিটার সরষে তেল। এমনি করে প্রতিদিন একটি ঘানি থেকে চার লিটার পর্যন্তু তেল পাওয়া সম্ভব হয়। জানিনে এ যুগে তার মূল্য কত এবং এত দামের তেল মাড়ানোর জন্য পরিশ্রম করা বলদ গরুটির বেতনই বা কত? ‘তোমরা যারা এ সময়ের ডিজিটাল, তোমরা নিজেরাই না হয় অঙ্ক করে বের করে নিও।’
আরও পড়ুন
এদিকে অভাগা দেশটি লুটপাট হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই। পুরো জাতিকে বোকা ডিজিটাল বানানো হয়েছে যাতে করে তারা ২০৪১ সালে স্মার্ট ডিজিটাল হতে পারে। আমি নিজে কোনো পার্টির সাপোর্টার না, তবে আমি জনগণের ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী। তবে এই ন্যায্য অধিকার তো ঘরে বসে আদায় করা যাবে না। দেশকে ডিজিটাল করার অর্থ এই নয় যে সবাই ঘরে বসে টিকটক তৈরি করবে, রূপকথার বাণী রসিকতায় পরিপূর্ণ করে টকশো বা ইউটিউবে ছাড়বে আর জাতি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে। সেগুলো নিয়ে চায়ের দোকানে, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডাখানায় শেয়ার করবে এবং অট্টহাসির খোরাক যোগাবে। মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে চলমান গতিতে থাকার জন্য, ডিজিটাল হয়ে শুধু ঘরে ঘরে টকশো আর ইউটিউবার হবার জন্য নয়। ঘরে বসে যেমন কৃষি কাজ করা সম্ভব নয়, ঘরে বসে ডিজিটাল হয়ে টিকটক, ইউটিউব বা টকশো করে দেশের পরিকাঠামো বা রাজনীতির পরিবর্তন করা যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি আদর্শ ও যুগোপযোগী সুশিক্ষাও পাওয়া সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন
গরিব দেশ হলে সমস্যা নেই, দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি হলে সমস্যা আছে। দিনের ভোট রাতে, সমস্যা আছে। অন্যায় করবা বলা যাবে না, সেটা হবে না। দেশের দুর্দিনে থাকবা না, সেটাও হবে না। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, এটাই আমার শক্তি। আমার শক্তি, আমার বিশ্বাস, আমার দুর্বলতা, আমার ভালোবাসা আর আমার বাংলাদেশ আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

