মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইরানের পারমাণবিক চুল্লি কতটা সুরক্ষিত?

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

iran

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ইরানের পারমাণবিক চুল্লি ও স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা। সাম্প্রতিক সময়েই ইসরায়েল কয়েকটি হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে—যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা। কিছু ক্ষেত্রে লোকজনকে চুল্লির আশপাশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—ইরানের পারমাণবিক চুল্লি আদৌ কতটা নিরাপদ?


বিজ্ঞাপন


এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার প্রকৃতি, সুরক্ষা ব্যবস্থা, এবং সম্প্রতি সৃষ্ট সামরিক ঝুঁকির বাস্তবতা।

IRAN_NR_PIC

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির পটভূমি

ইরান ১৯৭০-এর দশক থেকে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার ও গবেষণা শুরু করে। যদিও তারা বরাবরই বলে এসেছে এটি শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য, যেমন- বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসাবিজ্ঞান। তবে পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র, বরাবরই সন্দেহ করে যে, ইরান গোপনে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে।


বিজ্ঞাপন


বড় বড় পারমাণবিক স্থাপনা ও চুল্লি

১. নাতাঞ্জ (Natanz)

ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র।

সাবটেরেইন (ভূগর্ভস্থ) স্থাপনা থাকলেও, এর উপরিভাগ একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে।

২. ফোরদো (Fordow)

কাস্পিয়ান সাগরের নিকটে একটি গভীর পাহাড়ের নিচে অবস্থিত।

সুরক্ষার দিক দিয়ে এটি সবচেয়ে নিরাপদ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।

IRAN_NR_PIC2

৩. ইসফাহান

রূপান্তরকরণ কেন্দ্র।

ইউরেনিয়াম গ্যাস তৈরি ও রড উৎপাদন কাজ চলে।

৪. বুশেহর চুল্লি

বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত।

এটি সক্রিয় পারমাণবিক চুল্লি, যেখানে সাধারণ মানুষ বসবাস করে আশপাশে।

কতটা সুরক্ষিত ইরানের চুল্লিগুলো?

ভৌগোলিক সুরক্ষা

কিছু চুল্লি পাহাড় বা মাটির গভীরে নির্মিত, যেমন ফোরদো, যাতে বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সরাসরি না পৌঁছায়।

বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

ইরান এসব স্থাপনায় আধুনিক এয়ার ডিফেন্স মোতায়েন করেছে (যেমন—Bavar-373, S-300)।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই প্রতিরক্ষা আধুনিক স্টেলথ বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে কতটা কার্যকর?

সাইবার ও গোপন হামলার শঙ্কা

ইসরায়েল ২০১০ সালে 'Stuxnet' ভাইরাস দিয়ে নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস করেছিল।

এ ধরনের সাইবার ও অভ্যন্তরীণ নাশকতা প্রতিরোধে ইরান এখনও দুর্বল।

IRAN_NR

সামরিক হামলা

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নস্যাৎ করতে হলে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

কিছু গোপন হামলা এরই মধ্যে চালানো হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করছে।

সম্প্রতি কেন আতঙ্ক?

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি 'লাল সীমা' অতিক্রম করেছে বলে মনে করছে।

নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের কাছে ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া গেছে।

ইরান কিছু অঞ্চল থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে—যা সংকটের গভীরতা বোঝায়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) উদ্বেগ জানিয়েছে, সুরক্ষার ঝুঁকি বাড়লে পারমাণবিক দূষণের আশঙ্কা তৈরি হয়।

জাতিসংঘ এই ধরনের স্থাপনায় হামলা না করতে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইরান থেকে ইসরায়েলের দূরত্ব কত?

যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে কোনো হামলায় সহায়তা না করলেও, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সুরক্ষা নীতির পক্ষে রয়েছে।

পারমাণবিক চুল্লি কোনো সাধারণ সামরিক স্থাপনা নয়। এগুলোতে হামলা মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ইরান তার স্থাপনাগুলো আরও গভীরে নির্মাণ করলেও, ইসরায়েলের দূরপাল্লার অস্ত্র, সাইবার দক্ষতা ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এখনকার চুল্লিগুলোকেও অরক্ষিত করে তুলেছে।

তাই এই অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আইএইএ পর্যবেক্ষণ, এবং ট্রান্সপারেন্সি এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর