মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। একদিকে তেহরান, অন্যদিকে তেল আবিব—দুই দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক উত্তেজনা, পরমাণু কর্মসূচি, এবং সামরিক হুমকি প্রায়ই বিশ্ব সংবাদে স্থান পায়। কিন্তু অনেকেই বিস্মিত হন এই প্রশ্নে: ইরান আর ইসরায়েল কি প্রতিবেশি? দূরত্ব কত? আসলে ভূগোল বলছে ভিন্ন কথা।
এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হলো—ইরান ও ইসরায়েলের ভৌগোলিক দূরত্ব, মাঝখানে থাকা দেশগুলো, পারস্পরিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা, এবং প্রতিবেশী রাজনীতির বাস্তব চিত্র।
বিজ্ঞাপন
ইরান থেকে ইসরায়েলের দূরত্ব ঠিক কত?
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সীমান্ত নেই। দুই দেশের রাজধানী (তেহরান থেকে তেল আবিব) প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার দূরে। এটি প্রায় ঢাকা থেকে দিল্লির দূরত্বের সমান! আকাশপথে এ দূরত্ব অতিক্রম করতে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের কয়েক মিনিট সময় লাগে।

মাঝখানে কোন কোন দেশ রয়েছে?
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিক দেশ অবস্থান করছে। এই দেশগুলো ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনায় ভৌগোলিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ইরান ও ইসরায়েলের মাঝে থাকা দেশগুলো:
ইরাক
সিরিয়া
জর্ডান
লেবানন (আংশিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ হিজবুল্লাহ এই অঞ্চলে সক্রিয়)
সৌদি আরব (আংশিকভাবে দক্ষিণ রুটে)
এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ডে ঘুরিয়ে আনলে তুরস্ক ও মিশরও এক প্রকার ভৌগোলিক খেলোয়াড় হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা: যুদ্ধে অত্যাধুনিক গোপন এক অস্ত্র
ইরান ও ইসরায়েলের প্রতিবেশি দেশগুলো
ইরানের প্রতিবেশি দেশগুলো (১৫টি):
ইরাক
তুর্কমেনিস্তান
আজারবাইজান
আর্মেনিয়া
আফগানিস্তান
পাকিস্তান
তুরস্ক (আংশিকভাবে)
(বাকি সীমানা সমুদ্র বা উপসাগরের সঙ্গে)
ইসরায়েলের প্রতিবেশি দেশগুলো (৫টি):
লেবানন
সিরিয়া
জর্ডান
মিশর
ফিলিস্তিনি অঞ্চল (গাজা ও পশ্চিম তীর)
তাহলে এত দূর থেকেও কিভাবে হামলা সম্ভব?
দূরত্ব অনেক হলেও, উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতা আধুনিক ও দূরপাল্লার।

ইরান:
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যেমন শাহাব-৩ (দূরত্ব ২,০০০ কিমি+)।
আঞ্চলিক মিলিশিয়া (হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার কিছু গোষ্ঠী) দিয়ে ইসরায়েলের গা ঘেঁষে চাপ সৃষ্টি।
ইসরায়েল:
এফ-৩৫স্টেলথ ফাইটার দিয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ফেলা।
নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র যেমন জেরিকো সিরিজ, যা ইরান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
প্রযুক্তি ও মধ্যস্থ আঘাত
এই অঞ্চলের যুদ্ধ এখন সরাসরি সীমান্তের ওপর নির্ভর করে না। ড্রোন, স্যাটেলাইট, সাইবার হামলা—সবকিছুই যুক্ত হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল একে অপরকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা নিজেদের মিত্র গোষ্ঠী বা ছদ্মসংগঠন দিয়ে। ফলে যুদ্ধ সরাসরি না হলেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে তৃতীয় দেশের ভেতরে।
আরও পড়ুন: ক্লাস্টার বোমা কী, কেন বিতর্কিত এই অস্ত্র?
ইরান ও ইসরায়েল প্রতিবেশি নয়, তবে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে একে অপরের একেবারে গা ঘেঁষে রয়েছে। তাদের সংঘাত শুধু নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিশ্ব রাজনীতিকেও প্রভাবিত করছে। দূরত্ব যতই থাকুক, আধুনিক প্রযুক্তি আর ভূকৌশলিক অবস্থান মিলিয়ে এখন আর নিরাপদ দূরত্ব বলে কিছু নেই।
এজেড

