যুদ্ধ শুধু ভূমির ওপরে নয়, আজকের দিনে তা মাটির নিচেও বিস্তৃত। শত্রুরা যখন বাঙ্কার বা ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি বানিয়ে নিজেদের লুকিয়ে ফেলে, তখন সাধারণ বোমা তাদের কাবু করতে পারে না। আর ঠিক তখনই ব্যবহৃত হয় ‘বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা’—যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Bunker Buster Bomb।
তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়ন এই বিশেষায়িত অস্ত্রের কার্যকারিতা বহুগুণ বাড়িয়েছে। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমার গঠন, কার্যপ্রণালি ও সামরিক কৌশলে এর ভূমিকা।
বিজ্ঞাপন
কী এই বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা?
বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা এমন একটি বিশেষ ধরনের বোমা যা শক্ত কংক্রিট বা ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ভেদ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। এগুলোর নির্মাণে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যাতে এটি উচ্চগতিতে মাটির গভীরে ঢুকে বিস্ফোরিত হয় এবং ভিতরের কাঠামো ধ্বংস করে দেয়।

কেমন প্রযুক্তি ব্যবহার হয়?
১. ভর ও বেগের সমন্বয়: এই বোমাগুলোর ওজন সাধারণত অনেক বেশি (৫০০ কেজি থেকে শুরু করে ১৪ টন পর্যন্ত হতে পারে)। এর ফলে এটি মাটিতে প্রবেশের সময় প্রচণ্ড বল তৈরি করে।
২. হাই-পেনিট্রেটিভ নোজ: বোমার মাথার অংশ বিশেষভাবে স্টিল বা টাংস্টেন দিয়ে তৈরি, যা কংক্রিট ভেদ করতে পারে।
৩. টাইম-ডিলে ফিউজ: সাধারণ বোমা সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়, কিন্তু এই বোমায় টাইমার বা বিলম্বিত বিস্ফোরণ ব্যবস্থা থাকে। এটি প্রথমে মাটিতে প্রবেশ করে, তারপর নির্দিষ্ট গভীরতায় গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।

৪. জিপিএস এবং স্মার্ট গাইডেন্স: আধুনিক বাঙ্কার বোমায় স্যাটেলাইট গাইডেন্স থাকে, যার ফলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিখুঁত আঘাত হানা সম্ভব হয় যদি টার্গেট মাটির অনেক নিচে লুকানো থাকে।
কোন কোন দেশ এই বোমা ব্যবহার করে?
যুক্তরাষ্ট্র: বিশ্বের অন্যতম উন্নত বাঙ্কার বোমা যুক্তরাষ্ট্রের। যেমন—GBU-57A/B Massive Ordnance Penetrator (MOP)। এটি প্রায় ২০ ফুট লম্বা ও ১৪ টন ওজনের, যা ৬০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ভেদ করতে পারে।
ইসরায়েল: এয়ার-ডেলিভার্ড বাঙ্কার বোমা তৈরিতে ইসরায়েলও দক্ষ। তারা অনেক সময় মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
রাশিয়া ও চীন: এই দুই দেশও নিজেদের মতো করে এই প্রযুক্তি তৈরি ও প্রয়োগ করছে।

বাঙ্কার বোমা ব্যবহারের লক্ষ্য কী?
ভূগর্ভস্থ সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস
পারমাণবিক গবেষণাগার বা অস্ত্রাগার ধ্বংস করা
শত্রুপক্ষের সুরক্ষিত বাঙ্কারে লুকানো অস্ত্র বা সেনা ঘাঁটি ধ্বংস করা
সন্ত্রাসী আস্তানা বা গোপন বাংকার আঘাত করা

বিতর্ক ও উদ্বেগ
যদিও এই বোমা কৌশলগত দিক থেকে অনেকটা কার্যকর, তবুও এটি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। এর ব্যবহার অনেক সময় বেসামরিক এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া মাটির নিচের বিস্ফোরণে ভূগর্ভস্থ পানি, ভূকম্পন কিংবা পরিবেশগত ক্ষতি হবার ঝুঁকিও থেকে যায়।
আরও পড়ুন: ক্লাস্টার বোমা কী, কেন বিতর্কিত এই অস্ত্র?
বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি, উপকরণ বিজ্ঞান ও যুদ্ধকৌশলের এক যুগান্তকারী সংমিশ্রণ। যেখানে সাধারণ অস্ত্র ব্যর্থ, সেখানেই এই অস্ত্র হয়ে ওঠে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। তবে এর দায়িত্বশীল ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করাও জরুরি, যেন মানবিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রিত থাকে।
এজেড

