শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

৩ লাখ টাকার জন্য সৌদির মর্গে পড়ে আছে হাবিবুরের মরদেহ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩, ০৯:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

৩ লাখ টাকার জন্য সৌদির মর্গে পড়ে আছে হাবিবুরের মরদেহ

মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার হাবিবুর রহমান। দুই বছর আগে বৈধ কাগজপত্রে সৌদি আরব যান। কিন্তু এজেন্সির প্রতারণায় পড়ে কাজ পেলেও বেতন পেতেন না। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলার ফলে হতাশা ও মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন হাবিবুর এবং গত ৩ এপ্রিল মারা যান। দুই মাস ধরে তার মরদেহ সৌদি আরবের একটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে।

জানা গেছে, শুধুমাত্র বৈধ শ্রমিকদের মরদেহ মন্ত্রণালয় বা সরকারের খরচে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু হাবিবুর রহমান সৌদিতে গিয়ে কাজ করার পর এক সময় অবৈধ হয়ে যান এবং অবৈধ শ্রমিক হিসেবেই সেখানে মারা যান। এখন তার মরদেহ আনতে ৩ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য হাবিবুরের পরিবারের নেই। ফলে তার মরদেহ দেশে আনার বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

হাবিবুরের ভাতিজা ইয়াকুব আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, এ কেমন বিচার! আমার চাচা তো বৈধ কাগজপত্র নিয়েই সৌদি আরব গিয়েছিলেন। দেশটিতে যাওয়ার পর তিন-চার মাস কাজও করেছেন। কিন্তু কফিল তাকে কোনো বেতন দেয়নি। শুধু তিন বেলা খাওয়াতো। পরে বাধ্য হয়ে তিনি সেই জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যান। এরইমধ্যে তার বৈধ কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেছেন কিন্তু পাননি। শেষে এক জায়গায় বাবুর্চির কাজ পেলেও সেখানে অসুস্থ হয়ে মারা যান।

saudiইয়াকুব আলী জানান, হাবিবুরের স্ত্রী ও ১৬ বছরের এক ছেলে রয়েছে। তাদের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত। তার চাচা হাবিবুর মারা যাওয়ার পর সৌদি থেকে কল করে তাদেরকে মৃত্যুর সংবাদটি জানানো হয়েছে। তারা ভেবেছিলেন হয়তো মরদেহ সরকার নিয়ে আসবে। কিন্তু দুই মাস পার হলেও এখনো তা আসেনি। ফলে তারা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কথা শুনে তারা হতবাক হয়েছেন। এরপর তারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে গিয়ে হাবিবুরের মরদেহ আনার আবেদন জানান। তবে তাদের পক্ষ থেকে তেমন কিছু এখনো জানানো হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের মার্চে জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি আকাশ ভ্রমণ তাকে সৌদিতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে হাবিবুর কোনো কাজ পাননি। অথচ তাকে কাজ দেওয়া হবে বলেই সেখানে পাঠানো হয়েছিল।


বিজ্ঞাপন


এদিকে হাবিবুরের পরিবারের দাবি, বৈধভাবে জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়ে সৌদিতে যাওয়ার পর রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতারণায় পড়ে মৃত্যুর পরও কেন মরদেহ আনতে পরিবারকে টাকা দিতে হবে। কেন সরকার বা রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের খরচে মরদেহ আনবে না।

অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড জানিয়েছে, মরদেহ দেশে আনতে দিতে হবে ৩ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হামিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

অবশ্য বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, কোনো শ্রমিক অবৈধ হিসেবে মারা গেলে তাকে দেশে আনার খরচ বোর্ড বহন করে না।

এমআইকে/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর