ইট-পাথরের রাজধানী ঢাকায় জল-সবুজে ঘেরা হাতিরঝিল নগরবাসীর জন্য এক টুকরো স্বস্তি। উদ্বোধনের পর থেকে এটি রাজধানীর মানুষের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সবুজে ঘেরা প্রকল্পটি দিনে দিনে সবুজতর হলেও পানির দুর্গন্ধ এখানে আসা সবাইকেই কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে। এরসঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি।
পরিকল্পিত প্রকল্প হিসেবে হাতিরঝিলকে ধরা হলেও শুরু থেকেই নাগরিক সুবিধার অনেক দিকই এতে যুক্ত করা হয়নি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে খোঁড়াখুঁড়ি আর মাসের পর মাস সড়ক বন্ধ রেখে। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের অংশ হিসেবে হাতিরঝিলের রামপুরা থেকে মগবাজার অংশের সড়কের দক্ষিণ পাশ খনন করে ১৩২ কেভি ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করা হচ্ছে।
ফলে একদিকে ওই সড়কে যান চলাচল ও সাধারণ মানুষের হাঁটা পুরোপুরি বন্ধ। অন্যদিকে ধুলা ও কাদায় অতীষ্ট জনজীবন।
সরেজমিন দেখা যায়, রামপুরা থেকে মগবাজার অংশের সড়কের একপাশ পুরোপুরি বন্ধ। বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে তোলা মাটি রাখা হয়েছে সড়কেই। রোদে শুকিয়ে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে এসব মাটি ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। যানবাহন চলাচলের ফলে উড়ছে ধুলা। বৃষ্টিতে সৃষ্টি হচ্ছে কাদা। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে কোথাও কোথাও ফুটপাত হেলে পড়ছে, যা ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে গাছের গুঁড়ি বা বাঁশ।
স্থানীরা বলছেন, কচ্ছপ গতিতে চলছে কাজ। মাসের পর মাস যাচ্ছে খোঁড়াখুঁড়িতে। খোঁড়া শেষ হলেও বৈদ্যুতিক তার বসানোর খবর নেই। কোথাও কোথাও তার বসালেও মাটি চাপা দিতে লাগছে দীর্ঘ সময়।
বিজ্ঞাপন
যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এ দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তার বসাচ্ছে। মগবাজার থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়কের অর্ধেক অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের শুরুতে এসব বিশেষায়িত লাইন তথা ‘ইউটিলিটি ডাক্ট’ না বসানোর কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রকল্পের ব্যয় কমাতে শুরুতে যুক্ত করা হয়নি। তখন নানা অর্থনৈতিক সংঙ্কটও ছিল। ইউটিলিটি ডাক্টের বিষয়টি বোঝা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
প্রকল্প স্থান ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্প এলাকায় ডিপিডিসি সড়ক বন্ধের একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের মালিকানাধীন ডিপিডিসি বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করছে। হাতিরঝিল সড়কের দক্ষিণ পাশের সড়ক খনন করে ১৩২ কেভি ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এ সময় হাতিরঝিলের মহানগর প্রান্ত থেকে মগবাজার পর্যন্ত একমুখী সড়কের একপাশ বন্ধ থাকবে। যানজট এড়ানোর জন্য জনসাধারণকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রকল্প শেষের কোনো সময় উল্লেখ নেই বিজ্ঞপ্তিতে।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত ছিল না। তারা বলছেন, ঢাকার যে স্থান যেমনই হোক না কেন, হাতিরঝিল ছিল প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার মতো স্থান। আমরা এখানে শুধু ঘুরতেই আসি না, প্রকৃতি আমাদের টানে। এমন জঞ্জাল দেখে মনে হয়েছে এসে ভুল করেছি। সর্বত্র ধুলা। গাছের পাতাগুলোও সাদা হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে আবার কাদায় সড়ক সয়লাব।
দর্শনার্থীদের জন্য এটি হয়তো একদিনের অভিজ্ঞতা। কিন্তু আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। হাতিরঝিল মহানগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মহিন উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে এ প্রকল্পে এসব নাগরিক সুবিধা যুক্ত করা হয়নি। দীর্ঘদিন পর যুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু কতদিনে কাজ শেষ হবে তা তারা বলছে না। ধীরগতির কাজে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। চাইলেও একটা গাড়ি নিয়ে আসা যায় না। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যায় না।
হাতিরঝিল প্রকল্পের শুরু থেকে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন স্থপতি ও নগর বিশেষজ্ঞ ইকবাল হাবিব। এসব জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের শুরুতেই ইউটিলিটি ডাক্ট মাটির নিচে দেওয়ার সুযোগ ছিল। তবে অর্থনৈতিক সংঙ্কটসহ নানা কারণে তা দেওয়া হয়নি। বর্তমানে চলমান কাজের মান যথাযথভাবে দেখা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী বর্ষার মৌসুমের আগেই কাজ হবে।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান জানান, বৃহৎ পরিকল্পরার অংশ হিসেবে ঢাকা শহরের বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নেওয়া হবে। তারই অংশ হিসেবে হাতিরঝিলে কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে হাতিরঝিলের জলাশয়ের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তার দেওয়া আছে। যেখানে ঝুঁকিও রয়েছে। মাটির নিচে নেওয়া গেলে সৌন্দর্যও বাড়বে।
ডিএইচডি/জেএম