সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তারা ফেসবুকে সুন্দরী মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খুলে এই প্রতারণা করে আসছিল।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে গ্রেফতারদের আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে রাজশাহী ও নাটোর জেলায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের একটি টিম। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
>> আরও পড়ুন: দিনে-রাতে বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র, বাধা দিলেই বিপদ
গ্রেফতাররা হলেন- মো. সোহাগ আহমেদ, মো. রিপন ইসলাম, মো. সোহেল রানা ও মো. লিটন আলী।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০২২ সালের ২৬ আগস্ট ইরাক প্রবাসী মো. সামছুল হকের ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কণ্ঠস্বর নকল করে তার বোনের নম্বরে ভয়েস ম্যাসেজ পাঠায় প্রতারকরা। ওই ম্যাসেজে লেখা হয়, ‘আমি বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছি, চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন।’ সেই ম্যাসেজের সঙ্গে প্রতারকরা তাদের কয়েকটি বিকাশ ও নগদ নম্বর দিয়ে সেগুলোয় টাকা পাঠাতে বলে। পরে এই বার্তা পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ওই নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর তারা প্রবাসী সামছুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
ওই ঘটনায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। এরপর মামলার তদন্তে নামে ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। পরবর্তীকালে তদন্তকালে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকদের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
>> আরও পড়ুন: রাজধানীতে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল চালকের
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন জানান, গ্রেফতাররা প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। চক্রটি প্রথমে ফেসবুকে সুন্দরী মেয়েদের ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলত। এরপর সেই ভুয়া আইডি থেকে প্রবাসীদের আইডিগুলোকে টার্গেট করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত। পরবর্তীকালে প্রবাসীরা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলে ফেক ফেসবুক আইডিগুলো থেকে ম্যাসেজ দিকে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলত চক্রের সদস্যরা। একপর্যায়ে প্রতারকরা ভিডিও কলের প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীদের ইমো নম্বর নেয়। তবে চক্রটি প্রবাসীদের কিছু ভার্চুয়াল নম্বর দিত যার ফলে সেই নম্বরে প্রবাসীরা ফোন করতে পারত না। তবে এই কৌশলে প্রতারকরা টার্গেট করা ভিকটিমের নম্বর দিয়ে নিজেদের ডিভাইসে একটি ইমো অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করত।
পরবর্তীকালে ভিকটিমের কাছে যাওয়া ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) নম্বর নানা কৌশলে জেনে নেওয়ার পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলত প্রতারকরা। এরপর কৌশলে আইএমও বেটার ব্যবহার করে টার্গেট করা প্রবাসীর ইমো অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তন করে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের নম্বর সংগ্রহ করত। সবশেষ বিভিন্ন দুর্ঘটনার কথা বলে স্বজনদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।
কেআর/আইএইচ

