শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যেমন ছিল মেট্রোরেলের প্রথম চার ঘণ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

যেমন ছিল মেট্রোরেলের প্রথম চার ঘণ্টা

তখনো কুয়াশার চাদর ভেদ করে দেখা দেয়নি সূর্য্যের হাসি। চারদিকে বইছে ঠান্ডা বাতাস। রাজধানীর তাপমাত্রা প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সব কিছু উপেক্ষা করেই রাজধানীবাসীর একাংশ ভিড় করেন নগরির দিয়াবাড়ি ও আগারগাঁও এলাকায়। উদ্দেশ্য, দেশের প্রথম মেট্রোরেলের প্রথম দিনের যাত্রী হওয়া। 

যে মানুষগুলো সকাল ৯টা-১০টার আগে বিছানা ছাড়েন না, তারাও বৃহস্পতিবার ঘুম থেকে উঠেছেন ভোরে। সকালের নাস্তা না করেই ধরেন মেট্রোরেলের স্টেশনে প্রবেশের লাইন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। একেকটি লাইনে যাত্রীদের সংখ্যায় হাজার ছাড়িয়ে যায়। 


বিজ্ঞাপন


অপেক্ষার প্রহর শেষে মেট্রোরেল স্টেশনে প্রবেশ করতে শুরু করেন যাত্রীরা। এবার টিকিট কাটার পালা। স্টেশনের প্রথম তলায় রাখা হয়েছে টিকিটের ব্যবস্থা। রাখা হয়েছে- টিকিট বিক্রির মেশিন। তবে শুরুতেই সার্ভার জনিত সমস্যার কারণে কয়েকটি মেশিনে সমস্যা দেখা দেয়। বন্ধ রাখা হয় সেসব মেশিন। সচল ছিল গুটি কয়েক। যাত্রীদের টিকিট দেওয়া হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে।
 
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পূর্ব নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী ৬০ টাকা করেই নেওয়া হয়। টিকিট কাটার প্রক্রিয়া একটি ধীর গতির হওয়ায় যাত্রীদের অপেক্ষার প্রহরও দীর্ঘ হয়। টিকিট দিয়ে স্টেশনের ওপরের তলায় যেতে রয়েছে একটি প্রবেশ দ্বার। সেখান দিয়ে টিকিট ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। টিকিট দেখালেই দরজা প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত হবে। 

এরপর যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার পালা। ওপরের তলায় মূল প্লাটফর্ম। সেখানে কিছু সময় পর পর আসছে ট্রেন। দাঁড়াচ্ছে ৪০ সেকেন্ড। মাইকে বলা হয়- ট্রেনটি কোন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এরপর খুলে যায় প্লাটফর্ম ও ট্রেনের দরজা। 

যাত্রীরা প্রবেশ করার পর ৪০ সেকেন্ডের মাথায় চালক মাইকে জানান, দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর দরজা বন্ধ হলে ট্রেন চলতে শুরু করে। ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে ছুটতে শুরু করে মেট্রোরেল। ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে ট্রেন পৌঁছায় তার গন্তব্যে। 

metro rail


বিজ্ঞাপন


মেট্রোরেল যাত্রার প্রথম দিনেই যাত্রীদের মাঝে ছিলে উৎসবের আমেজ। প্রথম দিনে কাজের প্রয়োজনে মেট্রোরেল ব্যবহার করেছেন এমন যাত্রীদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। প্রায় সকল যাত্রীই দেশের প্রথম বিদ্যুৎ চালিতে ট্রেন ভ্রমণে এসেছেন। এ সময় অনেকের হাতেই ছিল নানা ধরনের ক্যামেরা। বাকিরা মোবাইল ফোনে ছবি তুলেছেন, কেউবা ভিডিও করেছেন। আবার অনেকেই মেট্রোরেল যাত্রার মুহূর্তকে সবার কাছে তুলে ধরতে নিজ নিজ ফেসবুক একাউন্টে লাইভও করছেন। 

ট্রেনে বসেই ভিডিও কলে বন্ধুকে মেট্রোরেল দেখান সাইদুল ইসলাম। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, তার বন্ধু লন্ডন প্রবাসী। সেখানে মেট্রোরেল আছে। বাংলাদেশে প্রথমবার মেট্রোরেল হলো, সেই আনন্দ বন্ধুর সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ভিডিও কলে আলাপ করেছেন তিনি। 

এদিন যাত্রীদের একটি বড় অংশই এসেছেন পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে। হইহুল্লোড়ের কমতি ছিল না ট্রেনে। সকল বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ মিলন মেলায় পরিণত করে মেট্রোরেল যাত্রাকে। 

তিনজন মুক্তিযোদ্ধা এক সঙ্গে মেট্রোরেল ভ্রমণ করেছেন। বীব মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য টিকিট ফ্রি শুনেছিলাম। এখানে এসে দেখি, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্রি। পরে টিকিট কেটেই উঠলাম।’ সেবার মানে সন্তোষ প্রকাশ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

এদিন অধিকাংশ যাত্রীই মেট্রোরেলে দুইবার ভ্রমণ করেছেন। যারা আগারগাও থেকে উত্তরা গিয়েছেন, তারা আবার সেখান থেকে মেট্রোরেলে করেই ফিরেছেন। আবার যারা উত্তরা থেকে আগারগাঁও গিয়েছেন, তারাও আবার ফিরেছেন। এই দুই যাত্রার মাঝে গণমাধ্যমকে নিজেদের অনুভূতি জানান দিয়েছেন তারা। প্রত্যেকেই সন্তোষ ও খুশি প্রকাশ করেছেন। ধন্যবাদ জানিয়েছেন সরকারকে। 

এদিকে অসন্তোষ নিয়েও বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়েও মেট্রোরেলের স্টেশনে প্রবেশ করতে পারেননি শতশত মানুষ। পরে তীব্র আক্ষেপ নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। 

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করার কথা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১২টার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয় মেট্রোরেল স্টেশনের মূল ফটক। তখনও স্টেশনের বাইরে অপেক্ষমান শতশত যাত্রী। উত্তরা উত্তর স্টেশন ও আগারগাঁও স্টেশনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শতশত যাত্রীকে শেষ মুহূর্তে ট্রেন ভ্রমণের স্বাদ না নিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে। 

এসময় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী। মিরাজ হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘সকাল ৮টায় আসছি। অনেক বড় লাইন ছিল। অনেক কষ্টে গেট পর্যন্ত আসলাম। এখন বলে আজ হবে না। টাইম শেষ।’

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে একজন যাত্রী বলেন, ‘দুই ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করেছি, তারপরও উঠতে পারলাম না।’

অপর এক যাত্রী বলেন, ‘প্রথম দিনে মানুষের আগ্রহ থাকবে। এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল। বাচ্চাদের নিয়ে আসছি। এখন উঠতে পারলাম না। কেমন লাগে বলেন?’ 

এছাড়া প্রথম দিনে ব্যর্থ হয়ে আগামীকাল আসার আশা প্রকাশ করে ফিরে গেছেন শতশত যাত্রী। 

কারই/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর