সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘প্রকাশ্যে মাইরা ফেললো, তাগোরে কেমনে জামিন দেয়?’

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

‘প্রকাশ্যে মাইরা ফেললো, তাগোরে কেমনে জামিন দেয়?’

‘আসামিদের অধিকাংশই তো জামিনে বেরিয়ে গেছে। তারা এখন এলাকায় এসে মহড়া দেয়। ৮ নম্বর আসামি টিটু ও আরেক আসামি সুমন এখন আমার ছোট ছেলে মাইনুদ্দীনকে হত্যার টার্গেট করছে। তারা যে কোনো সময় আমার এই ছেলেকেও মাইরা ফেলতে পারে। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু খুনিদের ভয়ে এভাবে কতদিন থাকব? আমি কি বিচার পাব বাবা?’ বুকভরা কষ্ট আর আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর পল্লবীতে খুন হওয়া সাহিনুদ্দীনের মা মোসাম্মৎ আকলিমা।

জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সাবেক এমপি আউয়ালের পরিকল্পনায় ২০২১ সালের ১৬ মে মিরপুরের সিরামিক রোডে নিজ সন্তানের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাহিনুদ্দীনকে। খুনিদের সবাই এমপি আউয়ালে লোকজন ও ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: মামলার রায় দ্রুত দিলে অপরাধ কমবে: প্রধানমন্ত্রী

গত শুক্রবার বিকেলে নিজ বাসায় ঢাকা মেইলকে মোসাম্মৎ আকলিমা বলেন, সাবেক এমপি আউয়ালকে (লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব) জমি দেই নাই বইল্যা আমার বড় পোলারে (সাহিনুদ্দীন) হত্যা করলো। এখন তারা ছোট পোলারেও (মাইনুদ্দীন) শেষ কইরা দিব বইলা বেড়াইতাছে। মামলার ৮ নম্বর আসামি টিটু জামিনে বাইর হইয়া এখনো আউয়ালের পক্ষে রাজনীতি কইরা যাইতাছে। গত ১৮ নভেম্বর আমার জমির উপর দিয়া সে একটি রাস্তা নিয়া যাইবার চায়। আমার ছোট ছেলে মাইনুদ্দীন বাধা দেয়ায় আমারে ও আমার ছেলেরে সে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করল। পরে একটা কোদাল নিয়া কইয়া বসলো আমার পা কাইটা ফেলবো। আমারে মারতে আসছিল। বিষয়টি থানায় জানাইছি, জিডি করছি।

তিনি বলেন, ডিবি কয়েকজনের নাম বাদ দিছে। এই নামগুলা বাদ পড়লে কিন্তু ওরা আমার ছোট পোলা মাইনুদ্দীনকে শেষ কইরা দিব। আমার অনুরোধ, পিবিআই যেন তাদের নামগুলো যুক্ত করে এবং তাগোরে গ্রেফতার করে। প্রকাশ্যে মাইরা ফেলাইলো, তাগোরে আদালত কেমনে জামিন দেয়? দ্যাশে কি বিচার নাই, আমি কি বিচার পামু না?

>> আরও পড়ুন: রাজনৈতিক পরিচয়ে অপরাধ থেকে মুক্তি মিলবে না


বিজ্ঞাপন


আলোচিত এই মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগ সেটি তদন্ত করে ১৫ জনের নামে চলতি বছর চার্জশিট দিয়েছে। কিন্তু সেই চার্জশিটে যাদের নাম এসেছে তারা ছাড়া আরও কয়েকটি নাম বাদ পড়ায় বাদী মোসাম্মৎ আকলিমা আদালতে নারাজি দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, পিবিআই বাকি আসামিদের নাম যুক্ত করে চূড়ান্ত চার্জশিট আদালতে দাখিল করবে।

আকলিমা জানান, পরে আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি এখন পুনঃতদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই ঘটনায় বাদ পড়া আসামিরা এখনো এলাকায় ঘুরে বেড়ায় বলে জানান তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাহিনুদ্দীনের স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে থাকেন। সাহিনুদ্দীনের একমাত্র ছেলে তার নানী ও দাদীর বাড়িতে যৌথভাবে থাকে। কিন্তু তাদের শঙ্কা যদি ছেলের মতো নাতিকেও হত্যাকারীরা শেষ করে দেয়। যদিও মোসাম্মৎ আকলিমা কয়েক দফা পল্লবী থানায় জিডি করেছেন। শুধু তাই নয়, জামিনে বের হওয়া আসামিদের ভয়ে তার ছোট ছেলে মাইনুদ্দীনও এলাকায় একা বের হতে ভয় পান।

>> আরও পড়ুন: জামিনে বেরিয়ে সাবেক এমপি আউয়ালের শোডাউন, এলাকায় আতঙ্ক

বর্তমানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এখনো তদন্ত কাজ শেষ করিনি। প্রথমে ডিবি তদন্ত করেছিল। সেই তদন্তে নারাজি দিয়েছেন বাদী। ডিবির তদন্তে কিছু নাম বাদ পড়েছিল এবং কিছু আসামি পলাতক আছে। আমরা সেগুলো বের করার চেষ্টা করেছি। জেল হাজতে যারা আছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

তিনি আরও বলেন, যারা ঘটনা ঘটিয়েছিল তাদের নামে তো চার্জশিট হয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল না বা যারা জড়িত থাকলেও চার্জশিটে যাদের নাম আসেনি তারা এখনো গ্রেফতারের বাইরে আছেন। আমরা তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে বাদী কিছু জানাননি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। পুরো তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়া হবে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

>> আরও পড়ুন: অপরাধ যেই করুক তার বিচার হবে: আপিল বিভাগ

ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছিল, পল্লবীতে এমএ আউয়ালের সঙ্গে সাহিনুদ্দীনের পরিবারের সাথে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই জের ধরে এমএ আউয়াল ভাড়াটিয়া কিলার গ্রুপ দিয়ে সাহিনুদ্দীনকে খুনের পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৬ মে মিরপুরের সিরামিক রোডে সাহিনুদ্দীনকে নিজ সন্তানের সামনেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সুমন, মুরাদ, মানিক ও মনির। নৃশংস এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পুলিশ মামলার পর সক্রিয় হয়ে ওঠে। গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়। পরে র‌্যাব এই ঘটনায় প্রধান পরিকল্পনাকারী সাবেক এমপি আউয়ালকে গ্রেফতার করে।
 
আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের পরদিন সাহিনুদ্দীনের মা মোসাম্মৎ আকলিমা সাবেক এমপি এমএ আউয়ালকে প্রধান আসামি করে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। তাকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব ও ডিবি জানিয়েছিল, এই মামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এই এমপি আউয়াল। তার নির্দেশেই ৩০ লাখ টাকার চুক্তিতে সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করা হয়। পরে এই মামলার বেশিরভাগ আসামিকে গ্রেফতার করে ডিবি ও র‌্যাব।

এমআইকে/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর