মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

জামিনে বেরিয়ে সাবেক এমপি আউয়ালের শোডাউন, এলাকায় আতঙ্ক

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

জামিনে বেরিয়ে সাবেক এমপি আউয়ালের শোডাউন, এলাকায় আতঙ্ক
ফাইল ছবি

রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক এমপি আউয়াল জামিনে বেরিয়ে সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে শোডাউন করেছেন। ফলে সাহিনুদ্দীনের পরিবারসহ এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, যে কোনো সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে পল্লবীর আলীনগর এলাকা।

পুলিশ জানায়, পল্লবীতে এমএ আউয়ালের সঙ্গে সাহিনুদ্দীনের পরিবারের সাথে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই জের ধরে এমএ আউয়াল ভাড়াটিয়া কিলার গ্রুপ দিয়ে সাহিনুদ্দীনকে খুনের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৬ মে মিরপুরের সিরামিক রোডে সাহিনুদ্দীনকে নিজ সন্তানের সামনেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মুরাদ, মানিক ও মনির। নৃশংস এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন


আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের পরদিন সাহিনুদ্দীনের মা মোসাম্মৎ আকলিমা পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। সেই মামলার প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এমএ আউয়াল। তাকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব ও ডিবি জানিয়েছিল, এই মামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এই এমপি আউয়াল। তার নির্দেশেই ৩০ লাখ টাকার চুক্তিতে শাহীন উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। পরে এই মামলার বেশিরভাগ আসামিকে গ্রেফতার করে ডিবি ও র‌্যাব।

awal2

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এতদিন কারাগারে থাকলেও আউয়ালসহ অন্য আসামিরা সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছেন। সাবেক এমপি আউয়াল গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পল্লবীর আলীনগর এলাকায় হাজির হন। এসময় তিনি সেখানকার রূপায়ণ ভবনের নিচে যান এবং লোকজন নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করেন। সঙ্গীদের নিয়ে একটি গোপন মিটিংয়ের পর আউয়াল আলীনগর এলাকায় যান এবং একটি মাঠে মহড়া দেন। এসময় তার বিভিন্ন সময়ের অপকর্মের অন্যতম সহযোগী সুমন, নিহত সাহিনুদ্দীনের প্রতিবেশী টিটু ছাড়াও ১০-১৫ জন যুবক ছিল। সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার আসামি সুমনের বাবাও এসময় আউয়ালের কাছে যান এবং তাকে শুভেচ্ছা জানান বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

হঠাৎ করে এমএ আউয়ালসহ সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার আসামিদের দেখে এলাকার অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। পরে তারা জানতে পারেন, সাবেক এই এমপিসহ জড়িতরা সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন। তারা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


পল্লবীর এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, এমপি আউয়াল রূপায়ণ ভবনে মিটিং করার সময় তার দলের লোকজন ছাড়া কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেননি। ফলে তারা আবারও ওই এলাকায় কোনো অঘটন ঘটানোর পরিকল্পনা করেছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা।

awal3

নিহত সাহিনুদ্দীনের মা মোসাম্মৎ আকলিমা রোববার দুপুরে ঢাকা মেইলকে বলেন, এমপি আউয়াল জামিনে বেরিয়ে শনিবার সকালে এসেছিল। তারা নাকি এখন আমার ছোট ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা তাকে নজরে রাখেন। না হলে তিনি ও তার লোকজন আমার আবারও ক্ষতি করবে।

তিনি বলেন, একজন হত্যা মামলার আসামি জামিনে বেরিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়, এটা বড় লজ্জার। এই রকম হলে বিচার পাওয়া নিয়ে আমার শঙ্কা। তার এই মহড়ায় আমরা আতঙ্কিত। আমার বড় ছেলের ওপর যেকোনো সময় তার লোকজন হামলা করতে পারে। আমরা এখন ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।

পল্লবী থানার ওসি পারভেজ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এমপি আউয়াল জামিনে বের হয়েছে। আমরা বিষয়টি জানি। সেখানে আর পরিস্থিতি উত্তপ্ত বা কোনো অঘটন ঘটার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে শাহীন উদ্দিনের পরিবার থেকে প্রায় অভিযোগ করা হয়। তবে তারা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক এমপি এমএ আউয়ালের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিবারই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এমআইকে/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর