রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নির্মাণসামগ্রীর আকাশছোঁয়া দাম, ‘সংকটে’ আবাসন শিল্প

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২২, ০৭:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

নির্মাণসামগ্রীর আকাশছোঁয়া দাম, ‘সংকটে’ আবাসন শিল্প

রাজধানীর আফতাব নগরের বাসিন্দা আফজাল হোসেন। বাবার রেখে যাওয়া তিন তলা বাড়িতেই থাকতেন তাদের চার ভাই ও এক বোনের পরিবার। দেড় বছর আগে জরাজীর্ণ বাড়িটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের কাজ দেন একটি আবাসন কোম্পানিকে। এক বছরে পুরো কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আবাসন কোম্পানিটি দেড় বছরেও তা পারেনি। আবাসন কোম্পানিটির দাবি, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ইট, বালু ও সিমেন্টের দাম। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকের মজুরিও এখন দ্বিগুণের কাছাকাছি। ফলে নির্মাণ খরচ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সবমিলে নির্মাণসামগ্রীর আকাশছোঁয়া দামের কারণেই বন্ধ রেখেছেন কাজ।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা হয় আফজালের। তিনি বলেন, বাড়ির নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই ভাড়া বাসায় থাকছি। ছয় মাস আগে ভাড়া বাসা ছেড়ে নিজের বাড়িতে ওঠার কথা। কিন্তু আবাসন কোম্পানির কাজে ধীরগতির ফলে ভোগান্তিতে পড়েছি সবাই।


বিজ্ঞাপন


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে জীবনের সব ক্ষেত্রে। এমন কিছু নাই যার মূল্যবৃদ্ধি হয় নাই। আবাসন শিল্পেও তার ছায়া পড়েছে। নির্মাণসামগ্রীর আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে আবাসন শিল্প এখন সঙ্কটের মুখে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছর কোম্পানি ও এলাকা ভেদে নতুন প্রকল্পে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুটে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে।

আরও পড়ুন: ঢাকার নতুন ইমারত বিধিমালা, ক্ষতির মুখে আবাসন খাত

nirman

বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নির্মাণ কাজ ঘুরে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ। লোকসান ও ঝুঁকি বিবেচনায় সরকারি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজও বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদাররা। কাজ না করার ঘোষণায় সরকারের কোনো কোনো প্রকল্পে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের প্রায় সব নির্মাণ কাজেই চলছে ধীরগতি।


বিজ্ঞাপন


ডেভেলপাররা জানান, এক বছর আগেও যারা অন্যের জমি নিয়ে ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি করেছিলেন তারা পড়েছেন লোকসানের মুখে। নির্মাণসামগ্রীর বাজারে স্থিতিশীল না হলে কেউ নতুন প্রকল্পে হাত দিচ্ছেন না। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে কোনো কোনো প্রকল্পের কাজ।

নির্মাণসামগ্রীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকেই অস্থির নির্মাণসামগ্রীর বাজার। ইট, বালু, পাথর, রড, সিমেন্ট, রেডি মিক্স, বিটুমিন এবং লোহাজাতীয় সব জিনিসের দাম উপকরণ ভেদে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ডলারের তীব্র সংকটের কারণে শতভাগ মার্জিন দিয়েও অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না।

আরও পড়ুন: ঢাকা দক্ষিণের বর্জ্য পুড়ছে সড়কে, পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ

nirman

এ নিয়ে মেসার্স গুলশান ট্রেডার্সের মালিক লাবু মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, করোনার আগে এক ব্যাগ সিমেন্টের দাম ছিল ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা। করোনার পরে দেখা যায় সিমেন্টের দাম হুট করে ৪৮০ টাকা হয়ে যায়। কিছুদিন আগে তেলের দাম বাড়ে, তখন সিমেন্টের দাম ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা হয়ে যায়।

প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে জানিয়ে লাবু মিয়া বলেন, ২৫ টাকার বালি এখন ৪৫ টাকা বস্তাসহ। খোয়া আগে ছিল ৬০ টাকা, এখন ১১০ টাকা। আগে ইট ছিল ৩৯ হাজার টাকা গাড়ি (তিন হাজার ইট), এখন ৪৯ হাজার টাকা। এছাড়াও সেকেন্ড ক্লাস ইট তিন হাজারের দাম ৪২ হাজার টাকা, যা তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ৩৬ হাজার টাকা।

রডের দরের বিষয়ে লাবু মিয়া বলেন, করোনা যখন শুরু হলো তখন প্রতি টনের দাম ছিল ৫০ হাজার টাকা। করোনার ১ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর টন হয় ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে রডের টন ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। তার দাবি, তিন মাস পরে সিমেন্ট বিক্রি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ, সিমেন্ট তৈরিতে কাঁচামাল সংঙ্কট দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: অবশেষে ভাঙা হচ্ছে নীলক্ষেতের ১৪৮টি দোকান

nirman

সার্বিক বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) বলেন, একদিকে ঢাকায় ইমারত নির্মাণ বিধিমালার কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে লাগামহীন নির্মাণসামগ্রীর বাজারের কারণে ছোট ছোট আবাসন কোম্পানিগুলো নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে।

রিহ্যাব সভাপতি আরও বলেন, আবাসন কোম্পানির নির্মিতব্য ভবনের জন্য কমন ফ্যাসিলিটি, দাফতরিক ও অন্যান্য ব্যয় একই থাকবে। এতে ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বাড়বে। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাও যৌক্তিকভাবে কমে যাবে। ‘আবাসন’ সমস্যা আরও বাড়বে। ভবনের আয়তন কমে গেলে সিরামিক, স্যানিটারি, টাইলস, ইলেকট্রিক কেবল, রড ও সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পাথর, বালি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ ২৬৯টি সংশ্লিষ্ট শিল্প গভীর সঙ্কটে পড়বে। সর্বোপরি আবাসন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

ডিএইচডি/জেএম/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর