রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঢাকার রাস্তায় একটি মানবিক ছবির গল্প

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২২, ০৪:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাকার রাস্তায় একটি মানবিক ছবির গল্প
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া মামুনের পাশে দাঁড়ান পথচারীরা। ছবি: ঢাকা মেইল

পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম খান (মামুন) ও রহমত উল্লাহ নোমানের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। নিজেদের ব্যবসায়িক, পারিবারিক ব্যস্ততার মাঝেও কোনো রকম ছেদ পড়েনি তাদের সম্পর্কে। সোমবার দুই বন্ধু মিলে পবিত্র ওমরা পালন করার প্রস্তুতিও সেরেছেন। কিন্তু হঠাৎ সবকিছু যেন থমকে যাওয়ার অবস্থা হয়ে পড়ে।

বন্ধুর ভ্যাসপায় করে জরুরি কাজে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন মামুন। ঢাকার ব্যস্ত সড়কে এমন দৃশ্য দেখে কয়েকজন পথচারী এগিয়ে আসেন। সবার সম্মিলিত সেবায় কয়েক মিনিটের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন মধ্য বয়স্ক এই মানুষটি।


বিজ্ঞাপন


ঘটনাটি রোববার (৩০ অক্টোবর) বেলা একটার দিকে। শিক্ষা ভবনের দক্ষিণ পাশের মূল গেটের সামনের ব্যস্ত সড়কে এমন ঘটনা ঘটায় লম্বা যানজটেরও সৃষ্টি হয় তখন। কিন্তু দূর থেকে কেউ বুঝতে পারছিলেন না আসলে কী ঘটেছে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন: বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে গেল ছেলে, পাশে দাঁড়ালেন ডিসি

কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। চোখ বন্ধ করে ভ্যাসপায় বসে থাকা মানুষটির বুকের বাম পাশে চাপ দিতে দেখা যায় একজনকে। অন্যদিকে একজন মাথায় বোতল থেকে পানি ঢালছেন। যার মাথায় পানি দিচ্ছিলেন তিনি চোখও খুলছেন না, কোনো কথাও বলতে পারছিলেন না।

অবস্থা বেগতিক দেখে পাশে দাঁড়ানো সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত একজন বারবার ফোনে কাকে যেন দ্রুত শিক্ষা ভবনের সামনে আসার জন্য বলছেন। আর দোয়া পড়ে অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে ফুঁ দিচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন


এমন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মিনিট-তিনেক কাটার পর হঠাৎ চোখ খুলে তাকান ভ্যাসপায় বসা মামুন। মুহূর্তে সবার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে মৃদুস্বরে কথা বলতে শুরু করেন তিনি।

পরে ধরে নিয়ে রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় বসানোর পর পুরোপুরি সুস্থবোধ করেন মামুন। এসময় দুই বন্ধু তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

আরও পড়ুন: ৩৫ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন নারী ইউপি সদস্য

নাজমুল ইসলাম খান (মামুন) ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা দুই বন্ধু সোমবার ওমরা করতে যাবো। কিছু কাগজ আনার জন্য ট্রাভেল এজেন্সিতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মাথা ঘুরে দেখি চোখে অন্ধকার নেমে এসেছে। পরে কোনোমতে বন্ধুকে জড়াইয়া ধরি। এরপর কী হয়েছে তা বলতে পারবো না।’

পাশে দাঁড়ানোর তার বন্ধু নোমান বলেন, ‘আমি গাড়ি খুব আস্তে চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি ও আমাকে জড়াইয়া ধরছে। পরে দ্রুত গাড়ি থেকে নামতেই আশপাশের কয়েকজন এগিয়ে আসে, পানি দেয়। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

মামুন বলেন, ‘আমি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাই। কিন্তু গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি। আবার জার্মান থেকে ভাইয়ের আনা কোলেস্টরল কমানোর জন্য ওষুধও খেয়েছিলাম। এতে মনে হয় প্রেশার বেশি লো হয়ে গিয়েছিল।’

অবশ্য তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার সেবায় এগিয়ে আসা ধানমন্ডি ইস্টার্ন কেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করা জুয়েল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তার সম্ভবত কার্ডিয়াক অ্যাটাক হচ্ছিল। লক্ষণ দেখে দ্রুত বুকের বামপাশে চাপ দিতে দিতে সে স্বাভাবিক হয়েছে। অল্প কিছু সময় লেট হলে বড় বিপদও হতে পারত।’

এসময় তাকে সেবা করার জন্য এগিয়ে আসা ইকবাল হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাকে কেউ বলেনি, কেউ ডাকেওনি। মানুষ হিসেবে বিপদে পাশে দাঁড়ালাম মাত্র। আমার জরুরি কাজ ছিল। কিন্তু তাকে অসুস্থ দেখে মনে হলো আগে মানুষটাকে বিপদ থেকে রক্ষা করি। কাজ পরে করা যাবে।’

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর