আলোচিত 'টিপকাণ্ডে' চাকরি হারানো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্য মো. নাজমুল তারেক ওই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তার বিচার দাবি করেছেন। তার অভিযোগ, তদন্ত কর্মকর্তা এডিসি রহিমা আক্তার লাকী মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন, যা মিথ্যা ও বানোয়াট।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই বিচার দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে স্ত্রী ও শিশু সন্তান উপস্থিত ছিল।
বিজ্ঞাপন
গত মার্চ মাসে রাজধানীর ফার্মগেটে পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক তেজগাঁও কলেজের এক শিক্ষিকার কপালে টিপ পরা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার কয়েক দিন পর বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষিকা। যা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
যদিও শুরু থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য।
এদিকে ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তিতে নাজমুল তারেকের চাকরি চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি জানান চাকরি হারানো এই পুলিশ সদস্য। পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন বলে জানান। একইসঙ্গে সেখানেও তিনি মিথ্যা অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এমন অভিযোগ ছিল নাজমুল তারেকের। চেয়েছিলেন নতুন করে তদন্ত।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে নাজমুল তারেক বলেন, সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফার্মগেট সেজান পয়েন্ট এলাকা শনিবার সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা থাকার কারণে ফার্মগেটে প্রচণ্ড জ্যাম থাকে। তাই সেজান পয়েন্ট এলাকায় উল্টো দিক থেকে আমি মোটরসাইকেল চালিয়ে যাই। যাওয়ার পথে একজন ভদ্র মহিলা মোবাইলে কথা বলতে বলতে অসাবধানতাবশত আমার মোটর সাইকেলের লুকিং গ্লাসের সাথে ধাক্কা লাগে। ফলে ভদ্র মহিলা ব্যাপকভাবে ক্ষেপে যান এবং আমাকে চ্যালেঞ্জ করে ‘পুলিশের ক্ষমতা দেখাস’ এই বলে উচ্চ স্বরে চিল্লাচিল্লি করতে থাকেন। তখন আমি তাকে ‘সরি’ বলে সামনে যেতে চাই।
নাজমুল তারেক বলেন, আমি মোটরসাইকেল নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসরের সময় আমার ইউনিফর্মের শোল্ডার ব্যাজ ধরে টান দিলে ঘটনাস্থলে আমার বাইক নিয়ে পড়ে যাই। পরে বাইক নিজে উঠিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যাই এবং কাজ করতে থাকি। ঘটনার চার দিন পরে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে আমি জানতে পারি তিনি আমার বিরুদ্ধে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি জিডি দাখিল করেন। তাতে কপালে টিপ পরায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
তার অভিযোগ, ওই কলেজ শিক্ষিকা আমাকে পোশাক পরা অবস্থায় ফেলে দেওয়ার কারণে সুপরিকল্পিতভাবে আমার মুখে দাড়ি এবং মাথায় টুপি থাকার কারণে এই অভিযোগ করেছেন। কারণ পরে এই ঘটনায় ঘটিত তদন্ত কমিটি টিপ নিয়ে কটূক্তির প্রমাণ পায়নি বলে রিপোর্ট দিয়েছে। তবে ওই নারীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সত্যতা পেলেও তা বাইকে লাগাকে কেন্দ্র করে হয়েছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
আরও পড়ুন: টিপকাণ্ড: সেদিনের ঘটনা জানালেন কনস্টেবল নাজমুল
নাজমুল তারেকের অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হওয়ার পর অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রহিমা আক্তার লাকী মিথ্যা ও মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন।

তারেক বলেন, কোনো অডিও, ভিডিও কিংবা কেউ সাক্ষ্য দিয়েও বলেনি যে, আমি লতা সমাদ্দারকে টিপ পরা নিয়ে কোনো কটূক্তি করেছি। সেখানে এই কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছেন যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। আমি ইলেকট্রিক প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো ভিডিও ফুটেজে নিশ্চিত হয়েছেন যে কটূক্তি করেছি সেই ফুটেজ প্রকাশ করুক। তিনি ফুটেজ প্রকাশ এবং প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে আমি তার বিচার চাই।
এক প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল তারেক বলেন, আমাকে অন্যায়ভাবে গত ১১ আগস্ট চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পেনশনসহ কোনো আর্থিক সুবিধা পাইনি। এতে দুই কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সামাজিকভাবেও আমার সম্মানহানি হয়েছে। তাই যারা এই মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা নেবো।
চাকরি ফেরত পাওয়ার জন্য কোনো চেষ্টা করেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো অবশ্যই চাকরি চাই। কারণ এটা আমার হক৷ অন্যায়ভাবে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি গত ২২ আগস্ট ডিএমপির কমিশনার বরাবার চাকরি ফেরত চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি স্যার আমার প্রতি ন্যায়বিচার করবেন। না হলে নিয়ম অনুযায়ী দুই মাস পরে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে চাকরি ফেরত চেয়ে মামলা করবো।
বিইউ/জেবি

