রাজধানীর বুকে ফার্মগেট এলাকার সেজান পয়েন্টে লতা সমাদ্দার নামে এক নারী শিক্ষিকাকে হেনস্তা ও ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে কটাক্ষ ছাড়াও গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গত ২ এপ্রিল সকাল বেলার।
ওই ঘটনার পর ওই ভুক্তভোগী নারী সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি অভিযোগ করে পোস্ট দিলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয় পুলিশ কন্সটেবলকে। পরে জানা যায় তার নাম নাজমুল তারেক। তিনি ডিএমপির প্রটোকল শাখায় কাজ করেন। এ ঘটনার পর সেই কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে স্থায়ীভাবে তার চাকরি চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
সেদিন কি ঘটেছিল অনেকেই জানেন না। সেই কনস্টেবলকে নাজমুলের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে লুকোচুরি করা হয়। সর্বশেষ তিনি মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে হাজির হয়েছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। তবে একা নন। সঙ্গে ছিল তার স্ত্রী, দেড় মাসের সন্তানও। সেখানে এসেই তিনি তার হারানো চাকরি ফিরে পেতে বিষয়টি পুন:তদন্তের দাবি জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করে তার সাথে। এরপর পুরো ঘটনাটি জানতে চাওয়া হয়।
সদ্য বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল নাজমুল তারেক ঢাকা মেইলকে বলেন, সেদিন আমি বাসা থেকে সকাল ৮টার দিকে বের হই। এরপর সেজান পয়েন্ট হয়ে আনন্দ সিনেমা হলের দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সেই সময় সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা থাকায় রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। ফলে উল্টো পথে রাস্তা দিয়ে যাই। এজন্য অবশ্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি যখন আসছিলাম ওই সময় এক নারীও মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে আসছিল।
তখন আনুমানিক সাড়ে ৮টা থেকে ৮টা ৪০ মিনিট হবে। ওই নারী যাওয়ার সময় আমার বাইকে ধাক্কা খায়। তখন আমাকে দেখেই তিনি এই বাস্টার্ড, তুই কি উল্টা যেতে পারিস বলে উঠলেন। পরে আমি তাকে সরি বলি। এরপর বলি আমি আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। একথা বলে যখন আমি আমার বাইকটা নিয়ে সামনের দিকে যাই। তখনও উনি আমার সঙ্গে চিল্লাপাল্লা করেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি তখন আমাকে বলেন, তুই কি বাইক নিয়ে উল্টো যেতে পারিস। তোকে দেখতে জামায়াতির মতো লাগে। তোকে দেখলে জঙ্গির মতো মনে হয়। বিভিন্ন অযৌক্তিক কথা বলেন তিনি। এক পর্যায়ে আমি তার সামনে এগিয়ে যাই। যদিও উনি মিডিয়ায় বলেছিলেন আমি নাকি দাঁড়িয়ে ছিলাম। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যখন চলে যাচ্ছিলাম, তিনি তখন আমার ইউনিফর্ম ধরে টান দিলে আমি পড়ে যাই। এ ঘটনার সাক্ষীও আছে।
এসময় তার কাছে প্রশ্ন ছিল লতা সমাদ্দার আপনাকে শার্টের কলার ধরে ফেলে দিল আপনি প্রতিবাদ করলেন না কেন। জবাবে নাজমুল বলেন, আসলে ভাই আমি তো উল্টো পথে এসেই ভুল করেছিলাম এজন্য কিছু না বলে যাওয়ার চেষ্টা করি। এরপর তার সাথে আমার কিছু কথা হয়। বিষয়টি বাকবিতণ্ডার পর্যায়ের যাওয়ার আগেই আমি ঘটনাস্থর থেকে চলে যাই। কিন্তু পরে আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারি, আমি নাকি ওই নারীকে হেনস্কা করেছি এবং বলেছি তুই টিপ পরছোস কেন। আসলে তার সাথে এমন কথাই আমার হয়নি।
ঘটনার সময় তাকে লতা সমাদ্দার শার্টের কলার ধরে ফেলে দেওয়ার বিষয়টি যে অপরাধ তা ঢাকতেই তার বিরুদ্ধে টিপকাণ্ডের মতো গুজব ছড়ান বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বিষয়টির শুধুমাত্র একটি ফুজেট দেখে আমাকে বরখাস্ত করা হলো। আমি এর পুন:তদন্ত চাই।
সেদিনের ঘটনার পর লতা সমাদ্দার যা বলেছিলেন:
ভুক্তভোগী নারী তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘শনিবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা থেকে রিকশায় করে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে কর্মস্থল তেজগাঁও কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন। সেজান পয়েন্টের সামনে একজন পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি মোটরসাইকেলের ওপর বসেছিলেন। তার মোটরসাইকেলের নম্বর-১৩৩৯৭০।
অভিযোগে তার দাবি ছিল, পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কপালে টিপ পরা দেখেই তাকে কটূক্তিমূলক কথাবার্তা বলতে শুরু করে নাজমুল। একপর্যায়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হয়। পেছনে ফিরে ঘটনার প্রতিবাদ করায় কনস্টেবল নাজমুল আরও গালিগালাজ করেন। পরে পুলিশের পোশাক পরা কনস্টেবল নাজমুল তার গায়ের ওপর মোটরসাইকেল চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি সরে গিয়ে নিজেকে শারীরিকভাবে আহত হওয়া থেকে রক্ষা করেন বলেও উল্লেখ করেন এই শিক্ষিকা। নিকটস্থ ট্রাফিক পুলিশকে বিষয়টি জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। সেই সময় তাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছিল।
এমআইকে/একেবি

