বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নীরব ঘাতক শব্দ দূষণ, নেই প্রতিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৮:০৬ এএম

শেয়ার করুন:

নীরব ঘাতক শব্দ দূষণ, নেই প্রতিকার

রাজধানীর নিকেতনের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার (৩০)। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অফিসের প্রয়োজনে ছুটে যেতে হয় শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। একদিন গুলশান-২ নাম্বারে ট্রাফিক নিয়ম মেনেই রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত থেকে আসা ক্ষিপ্রগতির একটি মিনি বাস তীব্র হর্ন বাজিয়ে এগিয়ে আসতেই অপ্রস্তুত তাসলিমা দাঁড়িয়ে যান। এরপর নিজেকে আবিষ্কার করেন হাসপাতালের কেবিনে।

ঘটনার প্রায় চার মাস পর কথা হয় তাসলিমার সাথে। কী ঘটেছিল সেদিন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানটিতে পদচারী সেতু নেই। আমি নিয়ম মেনেই রাস্তা পার হচ্ছিলাম। ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে তীব্র হর্ন দেওয়া গাড়িটি দেখে চমকে যাই। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে শুনলাম বাম কান থেকে প্রচুর ব্লাড (রক্ত) বের হয়েছে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি। ডাক্তার জানিয়েছেন, কানের শ্রবণক্ষমতা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর মধুবাগের বাসিন্দা হারুন মল্লিক। বারিধারায় অফিস হওয়ায় যানজট এড়াতে প্রায়ই অ্যাপচালিত মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন। সড়কে অযাচিত শব্দ দূষণে তিনি ত্যক্ত-বিরক্ত। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে ঢাকা মেইলকে বললেন, ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়তেই বাইকগুলো তীব্র হর্ন বাজাতে থাকে। জ্যামে পড়লে তো কথাই নেই। একদিন অযাচিত হর্ন বাজাতে দেখে বাইকারের কাছে এর কারণ জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘স্যার! অভ্যাস হয়ে গেছে। না চাইলেও বেজে ওঠে।’

এই বাস্তবতায় নগরীর বাসিন্দারা ঠিক কতটা শ্রবণশক্তির সমস্যায় রয়েছেন বা ভোগেন তা সহজেই অনুমেয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দ দূষণের প্রভাবে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি শ্রবণের মারাত্মক ক্ষতি হয়। শ্রবণক্ষমতা কমতে থাকে। একপর্যায়ে ব্যক্তি একেবারে বধিরও হয়ে যেতে পারেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, শ্রবণজনিত সমস্যা থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। সেই সাথে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাদির উচ্চমাত্রার কর্কশ শব্দ, শ্যালো মেশিন, এমনকি ওয়াকম্যানের উচ্চমাত্রার শব্দও শ্রবণযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। নির্মাণ শ্রমিক, উচ্চ শব্দের যন্ত্র চালনাকারী, ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাঝি, ব্যান্ড দলের বাদক-গায়ক (এমনকি সামনের সারিতে বসা ব্যান্ডসংগীতের শ্রোতা), পথচারী, গাড়িচালক, গাড়ির যাত্রী কিংবা ব্যস্ত সড়কের পাশে যাদের বাড়ি, দোকান বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা সাধারণত শব্দ দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রয়োজন ছাড়া হর্ন ব্যবহার করা যাবে না। আর পেশাগত কারণে উচ্চ শব্দে থাকতে হলেও তা যেন দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টার বেশি না হয়। যারা কাজের প্রয়োজনে শব্দের মধ্যে থাকতে হয়, পরবর্তী সময়ে কানকে দিতে হবে বিশ্রাম। হেডফোন ব্যবহারেও যতটা কম শব্দ শোনা যায়। ৩০ মিনিট পরপর পাঁচ মিনিট করে বিরতি দিতে হবে। উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে অবস্থান করলে এয়ার প্লাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। বিকল্প হিসেবে তুলা তেলে ভিজিয়ে চিপড়ে কানে গুঁজে রাখা যেতে পারে।

নাগরিক জীবনে শব্দ দূষণের প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, দূষণের সাথে স্বাস্থ্যঝুঁকি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। থাইরয়েড রোগী বাড়ছে। যাদের অধিকাংশ ৪০ বছরের নারী। এছাড়াও বন্ধ্যাত্ব বাড়ছে, যার মূলে পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ। এছাড়াও সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে ঝুঁকি বাড়ছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, শব্দ দূষণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এখানে আমাদের নাগরিকরা সব রকমের দূষণের সাথে জড়িত। প্রথমেই প্রয়োজন সচেতনতা। অধিদফতরের একটা শাখা শব্দ দূষণ রোধে কাজ করে যাচ্ছে অনবরত। 

জিয়াউল হক বলেন, আমরা নীরব এলাকা ঘোষণা করেছি। তাও খুব একটা কাজে আসছে না। ম্যাজিস্ট্রেট বসিয়ে (মোবাইল কোর্ট) কতক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর বাস্তবায়নে পুলিশকে ক্ষমতা দিতে হবে। যেহেতু সড়কে সারাক্ষণ পুলিশ উপস্থিত থাকে, আমরা অনুরোধ করবো, দেশটা সবার। পরিবেশ রক্ষায় সবারই ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। 

ডিএইচডি/জেবি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর