ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ প্রকাশ্যে এসেছেন। সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তাকে দেখা যায়। ভিডিওতে হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
ভিডিওতে ফয়সাল দাবি করেন, তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তবে শুধু ভিডিওর মাধ্যমে তার ভৌগোলিক অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নিজের দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রামাণ্য তথ্য- যেমন লোকেশন ডেটা বা পাসপোর্টের সিল উপস্থাপন করেননি।
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে ফয়সাল আরও দাবি করেন, হাদি হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে তিনি ছিলেন না। এই দাবিকে সরাসরি মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান।
তাদের আগের বিশ্লেষণ এবং পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মোটরসাইকেলের পেছনে বসে গুলি চালিয়েছিলেন ফয়সাল করিম নিজেই এবং চালকের আসনে ছিলেন তার সহযোগী আলমগীর শেখ। দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতেও এই তথ্য সপ্রমাণভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
ভিডিওতে ফয়সাল অভিযোগ করেন, ওসমান হাদি তাকে মন্ত্রণালয় থেকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অগ্রিম পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তবে হাদির মৃত্যুর পর এই দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, হাদি জীবিত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের কোনো অভিযোগ ছিল না। বরং তিনি অন্তর্র্বতী সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অনিয়মের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন।
ভিডিওটি প্রকাশের পর তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বিষয়টি যাচাই করে একটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ভিডিওটির সত্যতা এবং ফয়সাল করিম মাসুদের বিভিন্ন দাবির অসারতা তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি নয়। ফয়সাল করিমের বাস্তব চেহারার গঠন ও মুখভঙ্গির সঙ্গে ভিডিওর দৃশ্যগুলোর পূর্ণ সাযুজ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ বিশ্লেষণ এবং একাধিক নির্ভরযোগ্য এআই যাচাই টুল ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটি একটি আসল ভিডিও।
ভিডিওর কিছু অংশে ফয়সালের থুতনির দাড়ি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হলে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদনে জানানো হয়, এটি ভিডিও ধারণের সময় ব্যবহৃত ফিল্টারের প্রভাব। এই কারিগরি ত্রুটি পুরো ভিডিওটিকে এআই-সৃষ্ট প্রমাণ করে না।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরীফ ওসমান হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি চলন্ত অবস্থায় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
সে সময় গুরুতর আহত অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।
এ হত্যাকাণ্ডের ১৮ দিন পর রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে আসামিরা অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ছয়জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং চারজন সাক্ষী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এম/এএইচ

