জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা—শনিবার দুপুরে যেন শোকের এক বিশাল সমুদ্রে পরিণত হয়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর নামাজে জানাজায় তাঁকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জড়ো হন সব শ্রেণি–পেশার মানুষ। কয়েক লাখ মুসল্লির অশ্রু আর দীর্ঘশ্বাসে শেষ হয় তাঁর জানাজা। তবে মানুষের কণ্ঠে ছিল একটাই আক্ষেপ—শেষবারের মতো তাঁকে দেখার সুযোগটুকুও দেওয়া হয়নি। বড় এলইডি স্ক্রিন বসালে অন্তত সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতো।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। সকাল গড়াতেই মানুষের ঢল নামতে থাকে সংসদ ভবন এলাকা জুড়ে। সকাল ১০টার পর থেকেই যেন একের পর এক শোকাহত মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন—কেউ এসেছেন দূর জেলা থেকে, কেউ রাতভর পথ পাড়ি দিয়ে।
বিজ্ঞাপন
নামাজে জানাজায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের জন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পতাকা ও মোবাইল ছাড়া অন্য কোনো সামগ্রী বহনে ছিল নিষেধাজ্ঞা। বিপুল মানুষের চাপ সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।
শেষ বিদায়ের এক ঝলক দেখতে সংসদ ভবনের আশপাশে গাছে উঠে পড়েন অনেক মুসল্লি। কেউ আবার সংসদের দেয়ালের গ্রিল আঁকড়ে ধরে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু দূরত্ব আর ভিড়ের কারণে অনেকেই তাঁকে দেখতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ক্ষোভ আর কষ্ট মিশ্রিত কণ্ঠে তাঁরা বলেন, “অন্তত সরকার বড় এলইডি স্ক্রিন বসিয়ে হাদী ভাইকে একনজর দেখাতে পারত। আমাদের একজন বীরকে শেষবারের মতো দেখতে না পারার কষ্ট সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।”
বরিশাল থেকে আসা মুসল্লি সাইফুর রহমান বলেন,
“শুধু হাদী ভাইকে একনজর দেখতে ঢাকায় এসেছি। মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রওনা হয়েছিলাম। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, তিনি আর নেই। আমার ছোট দুই সন্তান, স্ত্রী—সবাই কাঁদছে। মনে হচ্ছে, আমি আমার পরিবারের একজন সদস্যকে হারিয়েছি। ঢাকায় এসে শেষবারের মতো তাঁকে দেখতেও পারলাম না—এই আফসোস আজীবন থেকে যাবে।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা হুরায়রা মাহমুদ বলেন,
“ওসমান হাদী ভাই এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, তা কখনো কল্পনা করিনি। তিনি ন্যায় ও ইনসাফের রাজনীতির কথা বলতেন। নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী আর ঘুষখোররা তাঁকে বাঁচতে দিল না। তাঁর মৃত্যুতে মনে হচ্ছে, আমি আমার পরিবারের একজন মানুষকে হারিয়েছি। আমরা হাদী ভাইকে একনজর দেখতে না পাওয়ার দুঃখ সারাজীবন বয়ে বেড়াব।”
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ প্লাজা থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মোহাম্মদপুর আসাদগেট, ধানমন্ডি ২৭, খামারবাড়ি মোড় ও ফার্মগেট পর্যন্ত মানুষের ঢল নামে। পুরো এলাকাজুড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজে জানাজা আদায় করেন মুসল্লিরা। শোকের ভিড়ের মাঝেও ছিল একটাই উচ্চারণ—শরীফ ওসমান হাদী হত্যার সঙ্গে জড়িত ঘাতক ও সংশ্লিষ্ট সবাই যে দেশেই থাকুক না কেন, দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ বিদায়ে তাই শুধু এক নেতাকে নয়, অনেকের চোখে হারিয়ে গেল একজন আপন মানুষ, একজন স্বপ্নের নাম—শরীফ ওসমান হাদী।

