শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের ইতিহাস, রূপান্তর, বর্তমান অবস্থা

মাহফুজুর রহমান
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৪ এএম

শেয়ার করুন:

ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের ইতিহাস, রূপান্তর, বর্তমান অবস্থা
ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের ইতিহাস, রূপান্তর, বর্তমান অবস্থা। ছবি: কোলাজ

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক সড়ক এলিফ্যান্ট রোড। নিউমার্কেট–সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শাহবাগ–পান্থপথ–ধানমন্ডির সংযোগস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত এই সড়কটি এখন বাণিজ্য, শিক্ষা, রিটেইল ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, ফুটওয়্যার ও গার্মেন্টস শোরুমে পরিপূর্ণ। নামের পেছনের ইতিহাস, অতীত-বর্তমানের সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং প্রবেশমুখে স্থাপিত হাতির ভাস্কর্য—সব মিলিয়ে এলিফ্যান্ট রোড ঢাকার নগর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

নামকরণের উৎপত্তি: হাতির কাফেলা ও প্রাচীন ঢাকা


বিজ্ঞাপন


এলিফ্যান্ট রোড নাম শুনলে প্রথমেই মনে হয় ঢাকায় কোনো সময় কি হাতির চলাচল ছিল? ইতিহাস বলছে—হ্যাঁ, একটি সময় ছিল যখন হাতি ছিল ঢাকার পরিবহণ, রাজকীয় শৌর্য ও শ্রমশক্তির প্রতীক। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমলের প্রথম দিক পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি কাজে হাতি ব্যবহারের প্রচলন ছিল।

ঢাকার তৎকালীন গভর্নর হাউস (বর্তমান বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকার আশপাশ) এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যালয়ে ব্যবহৃত হাতিগুলোকে রাখা হতো শহরের দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের প্রান্তবর্তী অঞ্চলে। ধারণা করা হয়, বর্তমান ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকার পাশ দিয়ে হাতির যাতায়াত ছিল নিয়মিত।

ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের নামকরণের ইতিহাস নিয়ে বেশ কয়েকটি জনশ্রুতি ও ঐতিহাসিক মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। যদিও নথিভুক্ত প্রমাণ সীমিত, তবু স্থানীয় ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং পুরোনো বাসিন্দাদের স্মৃতিচারণা থেকে কয়েকটি সম্ভাব্য তত্ত্ব উঠে এসেছে।

১. মুঘল আমলের প্রভাব ও হাতির যাতায়াত
একটি প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, মুঘল সুবাদারি আমলে (১৬১০–১৭১৭) ঢাকা প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। মুঘল আমলে হাতি ছিল সামরিক, পরিবহন এবং রাজকীয় প্রতিপত্তির প্রতীক। ঢাকার নবাব বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা হাতিতে চড়ে চলাচল করতেন বলে জানা যায়। এলিফ্যান্ট রোড সম্ভবত সেই সময় হাতির চলাচলের একটি প্রধান রুট ছিল। এই রাস্তা দিয়ে হাতি নিয়ে যাওয়া–আসার ঘটনা সাধারণ ছিল, যা স্থানীয় মানুষের মনে গভীর ছাপ রেখেছিল এবং পরবর্তীতে রাস্তাটির নামকরণে ভূমিকা রেখেছিল।


বিজ্ঞাপন


২. ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের চিড়িয়াখানা বা প্রাণী প্রদর্শনী
অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হলো, ব্রিটিশ শাসনামলে (১৭৫৭–১৯৪৭) এই অঞ্চলে একটি অস্থায়ী বা ছোটখাটো চিড়িয়াখানা বা প্রাণী প্রদর্শনী ছিল। ঢাকার ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, ব্রিটিশ আমলে ঢাকায় বিভিন্ন সময় পশু প্রদর্শনীর আয়োজন করা হতো। এলিফ্যান্ট রোডের আশপাশের এলাকায় (বর্তমান সেগুনবাগিচা, পল্টন অঞ্চল) এমন প্রদর্শনী হতো বলে ধারণা করা হয়। সেসব প্রদর্শনীতে হাতি থাকত এবং সম্ভবত হাতি রাখা বা নিয়ে আসার রুট হিসেবে এই রাস্তাটি ব্যবহৃত হতো। স্থানীয়দের মুখে মুখে তখন হাতিওয়ালা রাস্তা বলে পরিচিতি পায়, যা পরে ইংরেজি এলিফ্যান্ট রোডে রূপান্তরিত হয়।

1

৩. নামকরণের আনুষ্ঠানিকীকরণ
ব্রিটিশ ম্যাপ বা নথিতে ১৯০০ সালের দিকে এই রাস্তার নাম এলিফ্যান্ট রোড হিসেবে প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। ঢাকা সিটি করপোরেশনের পুরোনো নথিপত্র এবং ১৯১০–১৯২০ সালের ঢাকার মানচিত্রে রাস্তাটির নাম স্পষ্টভাবে Elephant Road লেখা দেখা যায়। এটি প্রমাণ করে যে বিংশ শতকের শুরুতেই নামটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

৪. প্রতীকী নামকরণ তত্ত্ব
কিছু গবেষকের মতে, হাতি বাংলা ও দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিতে শক্তি, জ্ঞান, সমৃদ্ধি এবং রাজকীয়তার প্রতীক। ঢাকা শহরের একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাকে এমন একটি মহৎ প্রাণীর নামে নামকরণ করা হয়েছিল প্রতীকী অর্থে। এটি শুধু প্রাণীকে সম্মান প্রদর্শন নয়, বরং রাস্তাটির গুরুত্বও নির্দেশ করে।

৫. স্থানীয় কিংবদন্তি ও জনশ্রুতি
স্থানীয় বেশ কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকের মতে, এই রাস্তায় ব্রিটিশ আমলে একটি বড় হাতির দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল (হতে পারে একটি হাতি মারা গিয়েছিল বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল)। সেই দৃশ্য স্থানীয় মানুষের মনে এমন প্রভাব ফেলেছিল যে রাস্তাটির নামই এলিফ্যান্ট রোড হয়ে যায়। আরেকটি জনশ্রুতি হলো, এখানে হাতির ব্যবসা বা হাতির আড়ত ছিল, যেখানে হাতি ক্রয়–বিক্রয় হতো।

৬. ভাস্কর্য তত্ত্ব
বর্তমানে রাস্তায় থাকা হাতির ভাস্কর্য দুটির সঙ্গে নামকরণের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নামকরণই প্রথমে হয়েছিল, ভাস্কর্য পরে স্থাপন করা হয়েছিল নামের সঙ্গতি রেখে। ভাস্কর্য দুটি সম্ভবত ১৯৬০–১৯৭০ সালের দিকে স্থাপিত হয়েছিল, যা নামের ঐতিহাসিক স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করেছে।

এলিফ্যান্ট রোডের নামকরণের পেছনে একটি মাত্র কারণ নয়, বরং বহুস্তরীয় ইতিহাস ও জনস্মৃতি কাজ করেছে। মুঘল ও ব্রিটিশ আমলের ব্যবহার, স্থানীয় ঘটনা এবং প্রতীকী অর্থ—সব মিলিয়ে এই নামটি গড়ে উঠেছে। এটি ঢাকা শহরের ঔপনিবেশিক ও উত্তর–ঔপনিবেশিক নগর ইতিহাসের একটি জীবন্ত নিদর্শন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নামকরণের সঠিক ও নির্ভুল ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক তথ্য কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। তবে এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এলিফ্যান্ট রোড নামটি ঢাকার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং এটি কেবল একটি রাস্তার নাম নয়, বরং শহরের স্মৃতির অংশ।

2

সময় বদলের সঙ্গে সড়কের চরিত্রও বদলে গেছে
একসময় তুলনামূলক শান্ত, গাছপালায় ভরা এবং সরকারি আবাসিক এলাকাবেষ্টিত যেই রাস্তাটি ছিল, সময়ের সাথে সাথে সেটি হয়ে উঠেছে ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্পট। ১৯৮০–এর দশকের পর থেকে এই অঞ্চল দ্রুত বাণিজ্যিকায়নের দিকে ধাবিত হয়। ধানমন্ডি এলাকার জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়া, নিউমার্কেটকে কেন্দ্র করে বিপুল কেনাকাটার চাহিদা এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তৃতি—সব মিলিয়ে এই এলাকায় ব্যবসার গতি ক্রমেই বাড়তে থাকে।

আজ এলিফ্যান্ট রোড একদিকে বিভিন্ন নামীদামী পোশাক ব্র্যান্ডের সমাহার, ব্লেজার মার্কেট, সিরামিক্সের দোকান ও গার্মেন্টস শোরুম আনুষঙ্গিকের জমজমাট এলাকা; অন্যদিকে ব্রাইডাল শপ, ব্যাগ–লাগেজ, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর সামগ্রীর বৈচিত্র্যময় বাজার।

জুতার দোকানের উত্থান: কেন এলিফ্যান্ট রোডে ফুটওয়্যার ব্যবসা এত জনপ্রিয়?
গত দুই দশকে এলিফ্যান্ট রোড বিশেষভাবে পরিচিত হয়েছে জুতার দোকানের জন্য। বর্তমানে সড়কটির দুই পাশ ঘেঁষে রয়েছে ছোট–বড় শতাধিক ফুটওয়্যার শোরুম। এর জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কয়েকটি প্রধান কারণ—

১. ক্রেতাদের বিশাল চাপ:
নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও বাটার শোরুমের নিকটবর্তী হওয়ায় ক্রেতারা স্বাভাবিকভাবেই এই এলাকায় আসেন। একই কেনাকাটার গন্তব্যে একাধিক বিকল্প পাওয়া যায়।

২. বৈচিত্র্য ও দামের প্রতিযোগিতা:
এলিফ্যান্ট রোডে লেডিজ, জেন্টস, শিশুদের বিভিন্ন ধরনের জুতা পাওয়া যায়। স্থানীয় ব্র্যান্ড, আমদানিকৃত পণ্য, কপি ডিজাইন—সবই পাওয়া যায় এক জায়গায়।

৩. মধ্যবিত্ত–উচ্চবিত্ত উভয় শ্রেণির প্রতি আকর্ষণ:
এলাকার অবস্থান এমনভাবে তৈরি যে ধানমন্ডি, কলাবাগান, আজিমপুর, শাহবাগ, নিউমার্কেট—সব দিকের মানুষই সহজে এসে কেনাকাটা করতে পারেন।

2

৪. ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সরবরাহ চেইন:
এখানে বহু দোকানই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছে। পাইকারি বাজার, আমদানিকারক, স্থানীয় কারখানার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ শক্তিশালী হওয়ায় দাম অনেক সময় তুলনামূলক কম রাখা যায়।

এইভাবে এলিফ্যান্ট রোড আজ এক ধরনের ফুটওয়্যার হাব হিসেবে পরিচিত, যেখানে ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী, গৃহিণী—সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারেন।

মোহাম্মদ আলী নামে এক জুতার দোকান মালিক বলেন, আমি এখানে ৪৫ বছর ধরে ব্যবসা করি। এখানে দৈনিক তিন–চার শ ক্রেতা আসে। ব্যবসা ভালো। সারাদেশ থেকেই এখানে কেনাকাটা করতে আসে। কেউ যদি নিউমার্কেটে কাপড় কিনতে আসে তবে সে এলিফ্যান্ট রোডে জুতা কিনতে আসে। কিন্তু রাস্তার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। হাতির মূর্তিগুলো সংস্কার করলে এলাকার মান বাড়বে, ক্রেতাও বেশি আকৃষ্ট হবে। আমরা দোকান মালিকরা চাঁদা দিতেও রাজি।

আবির হাসান (৩০) নামে একজন ক্রেতা বলেন, আমি ঢাকায় মিরপুরে খালার বাসায় বেড়াতে এসেছি, নিউমার্কেটে কেনাকাটা শেষ করে এদিকে এসেছি জুতা কিনতে। ইউটিউব–ফেসবুকে এলিফ্যান্ট রোডের জুতা নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও দেখে এখানে এসেছি।

হাতির ভাস্কর্য: এলিফ্যান্ট রোডের ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটি
এলিফ্যান্ট রোডে প্রবেশের সাথে সাথেই চোখে পড়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে স্থাপিত হাতির ভাস্কর্য। বহু বছর আগে স্থানীয় প্রশাসন এগুলো স্থাপন করেছিল সড়কের নামের সঙ্গে মিল রেখে। ভাস্কর্য দুটি শুধু রাস্তার সৌন্দর্য বাড়ায়নি, বরং দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার নগরবাসীর কাছে একটি পরিচিত চিহ্ন হয়ে আছে।

যারা প্রথমবার এলিফ্যান্ট রোডে আসে, এই হাতির মূর্তিই তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। অসংখ্য মানুষের স্মৃতিতে জায়গা করে নেওয়া এই ভাস্কর্য অনেকের কাছে শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়—এলিফ্যান্ট রোডের ঐতিহাসিক পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভাস্কর্যের ভগ্নদশা: অবহেলার দীর্ঘ ছাপ
তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, বর্তমানে ভাস্কর্য দুটি চরম অবহেলায় পড়েছে। নিত্যদিনের ধুলো, বৃষ্টি, রোদ, পরিবেশ দূষণ আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হাতির ভাস্কর্যের নাক, লেজ, দাঁত—কিছু অংশ ভেঙে গেছে। রঙ উঠে গেছে, কাঠামোর ভেতরের অংশও কিছু জায়গায় ক্ষয়প্রাপ্ত।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে অভিযোগ পাওয়া যায়, বিগত বহু বছর ধরে এই ভাস্কর্যের মেরামত বা নতুন রঙ করার কোনো উদ্যোগ নেই। বরং সময়ের সাথে সাথে এগুলো আরও নাজুক হয়ে পড়ছে।

কিছু ব্যবসায়ী মনে করেন, এগুলো এলিফ্যান্ট রোডের পরিচয়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এগুলোর সামনে দিয়ে যায়। অথচ রাস্তাটির নামের প্রতীকই এখন ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে—এটা খুবই দুঃখজনক।

এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সিটি করপোরেশন যদি সামান্য উদ্যোগ নেয়, তাহলে ভাস্কর্য দুটি আবার নতুন করে সংস্কার করা সম্ভব।

রাকিব হাসান নামে পথচারী বলেন, আগে এই হাতিগুলো দেখতে উজ্জ্বল ছিল। আজ ভাঙা দাঁত, ভাঙা লেজ দেখে কষ্ট হয়। নাম এলিফ্যান্ট রোড, কিন্তু হাতির ভাস্কর্যগুলোর কোনো যত্ন নেই। সিটি করপোরেশন দ্রুত সংস্কার করুক। ব্লেজারের দাম ও ভ্যারাইটি ভালো, তাই নিয়মিত আসি। কিন্তু ঐতিহাসিক ভাস্কর্য অযত্নে পড়ে আছে—এটা লজ্জার।

5

নগর পরিকল্পনা ও স্মৃতি সংরক্ষণে ঘাটতি
ঢাকা শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থানীয় পরিচয় সংরক্ষণে বরাবরই ঘাটতি স্পষ্ট। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হোক, কিংবা নতুন ঢাকার পথপ্রান্তিক ভাস্কর্য—বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। এলিফ্যান্ট রোডের হাতির ভাস্কর্য তার একটি প্রতীকী উদাহরণ।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি শহরের প্রতীকী স্থাপনা শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং তার সাংস্কৃতিক পরিচয় জাগিয়ে রাখে। পর্যটক, সাধারণ নাগরিক ও নতুন প্রজন্মকে এলাকার ইতিহাস জানাতে এসব ভাস্কর্যের গুরুত্ব অপরিসীম। রক্ষণাবেক্ষণ না থাকলে শহরের ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটি ধীরে ধীরে মুছে যায়।

সংস্কারের প্রয়োজন: কী করা যেতে পারে
ভাস্কর্য দুটি ভগ্নদশা বিবেচনায় নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের কয়েকটি প্রস্তাব—

  • পুরোনো কাঠামো মেরামত করে নতুন করে রঙ করা

  • হাতির দাঁত, লেজ ও ভেঙে যাওয়া অংশগুলো পেশাদার শিল্পীর মাধ্যমে পুনর্নির্মাণ

  • ভাস্কর্যের নিচের বেজমেন্ট মজবুত করে দেওয়া, যাতে বৃষ্টি কিংবা মাটির ক্ষয়ে না ভেঙে পড়ে

  • চারপাশে পর্যাপ্ত আলো, পরিচ্ছন্নতা ও ছোট গার্ডরেইল দেওয়া, যাতে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি না হয়

এগুলো বাস্তবায়ন হলে এলিফ্যান্ট রোড আবারও তার ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চেহারা ফিরে পেতে পারে।

এলিফ্যান্ট রোড শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক সড়ক নয়—এটি ঢাকার ইতিহাসের অংশ। হাতির চলাচলের স্মৃতি থেকে শুরু করে বর্তমানের ফুটওয়্যার ব্যবসার উত্থান পর্যন্ত এই সড়কটি ক্রমাগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। আর সেই ইতিহাসকে প্রতীকীভাবে বহন করে এর প্রবেশমুখের হাতির ভাস্কর্য।

কিন্তু বর্তমানে ভাস্কর্যগুলো ভগ্নদশায় পড়ায় পুরো এলাকার ঐতিহাসিক পরিচয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত সংস্কার না করলে এই প্রতীকী স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকার মতো একটি শহরে যেখানে প্রতিদিন পুরোনো স্থাপনা হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে এলিফ্যান্ট রোডের হাতির ভাস্কর্য সংরক্ষণ শুধু একটি স্থাপনা রক্ষার বিষয় নয়—এটি নগর আইডেন্টিটি, ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের দায়বদ্ধতার অংশ।

একটি ছোট উদ্যোগই এই ভাস্কর্যকে আবার প্রাণবন্ত করতে পারে এবং এলিফ্যান্ট রোডকে ফিরিয়ে দিতে পারে তার পূর্ণ পরিচয়।

এম/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর